fbpx

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

মৃত্যুর শেষ প্রহর

“আমাদের কিছুই ছিল না, অথচ প্রতিদিনই আমারা কিছু না কিছু হারাই, আবার নতুন কিছু হারানোর ভয়ে থাকি। আমাদের জন্ম হয়েছে খালি হাতে, মৃত্যু হবে খালি হাতে, অথচ চলে যাওয়ার সময় অনেক না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে যাই।”

-রেদোয়ান মাসুদ

পৃথিবীতে আসার আগে জানতাম না বেঁচে থাকার মানে কি। এই পৃথিবীর নীরব প্রকৃতি বাস্তবতার সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রতিটি মানুষ কোনো এক সময় হাজার বছর বাঁচতে চায়, আবার কোনো এক মুহূর্তে মৃত্যু কামনা করে।

আজ নীরবে কিছু কথা মনে পড়ছে, তাই লিখতে বসলাম।

হঠাৎ একদিন সবকিছু নিশ্চুপ হয়ে যাবে, ছবি কিংবা ম্যাসেজের স্ক্রিনশট দিয়ে সমবেদনা জানাবে। তবে তা ক্ষণিকের। কে কার কথা কতদিন মনে রাখবে! সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে।

বন্ধু-বান্ধবের যে জায়গা জুড়ে আমি ছিলাম, হয়তো সে জায়গা অন্য কারো হবে। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। আমি যেদিন চলে যাবো, সেদিন হয়তো গুটিকয়েক মানুষ অবাক হয়ে যাবে। যারা খুব পাশ থেকে আমার সাথে চলছিল তারাও হয়তো আমার অনুপস্থিতি বুঝবে।

আমার প্রিয়জনগুলো হয়তো মাঝে মাঝে কষ্ট পাবে, তবে আবার ভুলে যাবে। কয়েকবছর পর কয়েকজন আমায় হয়তো মনে করবে, আবার ভুলে যাবে।

হঠাৎ করেই যখন চলন্ত হৃদপিণ্ডটা থমকে গেল, পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল, পৃথিবীর আলো আর চোখে আসছে না, চোখের পাতাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তখনি হয়তো আমার মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।

আমার কিছু ভালো কাজের জন্য হয়তো তারা বলছে, আহারে মানুষটা মারা গেল! ঠিক কয়েক প্রহর শেষে কাফনে জড়িয়ে, জানাজার সালাত শেষে দাফন করে ফেললো। আমি মারা গেলাম।

ঠিক এভাবেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। হয়তো আপনাকে খুব মনে পড়ছিল। হয়তো আপনার মৃত্যু সংবাদটাও ফোনে স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিলাম। আপনাকে হারিয়ে ফেললাম কথাটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার কিছু বন্ধু ফোনও করেছিল, তাদেরও বিশ্বাস হচ্ছিল না। কয়েক মুহূর্ত পরে আমিও আর বিশ্বাস করতে পারি নি। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের ফোনেও কয়েকবার কল দিছিলাম। সবশেষে, বুঝতে পারলাম ম্যাডাম আপনি আর নেই।

ম্যাডামের শেষ কথাগুলো তখন মনে পড়ছিল।

“আজকে থেকে তো তোমাদের ক্লাস শেষ, এরপর উইন্টার ভ্যাকেশন শুরু হবে। হতে পারে, এই ক্লাসই তোমাদের শেষ ক্লাস আমার সাথে। আল্লাহ পাক বাঁচিয়ে রাখলে এরপরের ক্লাসে দেখা হবে। তোমাদের মাঝে কী আনন্দ তোমরা বাড়িতে ছুটি কাটাবে! আমার ছুটি নেই। আমাকে প্রতিদিন ডিপার্টমেন্টে আসতে হবে। তোমরা ভালোভাবে ছুটি কাটাও। আবার সুস্থ, সুন্দর ভাবে ক্লাসে আসবে। পড়বে কিন্তু, তোমরা তো জানো, ছুটির পরেই আমার কোর্সের পরীক্ষা। তোমরা নিজেদের যত্ন নিও। একটু হলেও নিজেকে সময় দিও।”

– মুরশীদা ম্যাডাম

সবকিছুই নিরবে শুনছিলাম। আমি সেদিনই বোঝার চেষ্টা করছিলাম, ম্যাডাম হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবেন না। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কিছু মানুষের কথা শোনার, তাঁরাও এভাবে কথা বলেছিল। আজ তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। মানুষ যখন বুঝতে পারে মৃত্যু আর বেশি দূরে নয়, তখনই হয়তো এভাবে জীবন নিয়ে কথা বলে। তারা হয়তো হারিয়ে গেলেও, বুঝিয়ে দিতে চায় জীবনটাকে। জীবনের স্বার্থকতা, সারমর্ম নিয়ে এই কথাগুলো শুনতেই ইমোশনাল হয়ে যাই। এই ইমোশনাল কথাগুলোর মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের প্রতিটি সময়। অপেক্ষার প্রহর গণনা করতে থাকে, মানুষটি হয়তো বুঝে যায় জীবন এভাবেই শেষ হবে। নিজের পায়ে হাঁটতে শুরু করা অবুঝ শিশুটি হয়তো ভেবে নেয় এই তো আমি হাঁটতে পারছি।

আমরা পরীক্ষা শেষ করেছি, ছুটি কাটিয়েছি। তবে ভীষণভাবে মুরশীদা ম্যাডামকে মিস করছি। খুব কম সংখ্যক মানুষই নিজের শরীরের যত্ন নিতে বলে। তাঁদের মধ্যে ম্যাডামও একজন। ঠিকই তো বলেছিলেন, নিজের যত্ন নেওয়ার সময়টা হয়ে উঠে না। ব্যস্ত এই নগরীতে অনেক ব্যস্ততায় হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। হয়তো কোনো মিথ্যে আশায়, হয়তো মনের আকাঙ্ক্ষায় নিজেকেই ভুলে গেছি। কি মায়া এই দুনিয়ায়? মৃত্যুই তাহলে সবকিছুর ক্লান্তি দূর করবে।

একটি ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় কষ্ট পেলেও সন্তুষ্ট ছিলেন, বরং বুঝিয়ে বলতেন এরচেয়েও বড় কোনো রোগ হতে পারতো। এই মন-মানসিকতার মানুষটিকে দূর থেকেও মনে পড়ে, এমন উদারতা মহানুভবতা কতজনের মাঝেই আছে।

প্রকৃতির নিয়মে মানুষ মরে গেলেও, অমর হয়ে বেঁচে থাকে মানুষের মনে। ভালো কাজ, ভালো কথা, ভালো চরিত্র নিয়ে মারা যাওয়া মানুষটি মরে গেলেও বেঁচে থাকে। এজন্য কবির ভাষায় বলতে হয়, “এমন ভাবে গড়বে জীবন, হাসবে তুমি আর কাঁদবে ভুবন।”

এই পৃথিবীতে চলতে গেলে মানুষের অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়। বেঁচে থাকলে মানুষ এই ভুলগুলোকে বেশি মনে করে। মৃত্যুর দিনে তার ভালো কাজগুলোকে খোঁজে। এজন্য একজন মুসলিম হিসেবে দ্বীনদার, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়ে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করা উচিত।

পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া সকল মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক। পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সকল মানুষকে ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক-আমিন।

আমিও তো হারিয়ে যাবো,
তোমরা কি আমায় মনে রাখবে?
আমিও কি মরে গিয়ে,
বাঁচবো তোমাদের মাঝে?
আমি ঈমানদার হয়ে মরবো তো?
আমার পাপের পরিমাণ টা কম হবে তো!

আমি জান্নাতের আশায় পৃথিবীতে বাঁচতে চেয়েছি, ওপারে আর কষ্ট চাই না।

1111 মোঃ বিপ্লব আল হোসাইন new writer
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়