মে ১৩, ২০২৫

কথারা হয়েছে নিঝুম

এপ্রিল মাস; বাংলা নববর্ষ আগমনের মাস সাথে আমাদের প্যাপাইরাসের অনলাইন পথচলা শুরুর মাস। যেটাই বলি আমার কাছে এ মাস নতুন করে নিজেকে আবিষ্কারের একটা মাস; নতুন করে জানার একটা মাস। ধাপে ধাপে বলি কারণগুলো:

প্রথমে আসি প্যাপাইরাসের কথায়:

পরিসংখ্যানে পড়ার সুবাদে প্যাপাইরাসের সাথে পরিচয়; তার সাথে পরিচয়ের জন্যই আমার নিজের উপস্থাপনার ছোট্ট প্রতিভার কথা জানার সুযোগ পাওয়া। সুযোগ পাওয়া মুরশীদা ম্যাডামের সান্নিধ্যে থাকার। ম্যাডামের অকাল প্রয়াণের পর এখন আর প্যাপাইরাসে আমার লিখা জমা দেওয়া হয়ে উঠে না। প্রতিটা লিখায় কেন যেন ম্যাডামকে খুব মনে পরে শেষ দেখাটা ম্যাডামের সাথে আমার এই প্যাপাইরাসের এক অনুষ্ঠানের সুবাদেই। অল্পদিনে কত মমতায় ম্যাডাম আগলে রেখেছিলেন! এ অবস্থায় আমি নিজেকে আবিষ্কার করি খুব আবেগপ্রবণ মানুষ হিসেবে।

এখন আসি নববর্ষের(১৪.০৪.২০২৫)  কথায়:

ছোটবেলায় নববর্ষ মানে শুধু “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গান শুনে দিন কাটানো ছিল না। ছিল লাল- সাদা রঙের সুন্দর সুন্দর জামা পরে; বিকালের দিকে বাবার দুই হাত দুই ভাই-বোন ধরে  বৈশাখী মেলায় ঘুরতে যাওয়া, খই- বাতাসা  সাঝ এসব কেনা। তখন টিভি দেখে মনে হতো, আমি যখন বড় হবো ঐ রমনা বটমূলে গিয়ে বৈশাখের আনন্দ নিব, আনন্দ শোভযাত্রায় (আগে বলা হতো মঙ্গল শোভযাত্রা) যাব, মেলায় ঘুরব। মানে এক কথায় বলতে গেলে “মেলায় যাই রে” গানের বাস্তবচিত্র নিজের বাস্তব জীবনে ফুটিয়ে তোলার এক ব্যাকুল আগ্রহ কাজ করত। এবার আমি নববর্ষের দিন ঢাকাতেই ছিলাম; নথিপত্রের হিসেবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কিন্তু বাবার হাত ধরে কাক ডাকা ভোরে রমনার বটমূলে বসে বৈশাখের গান ধরা হয় নাই; জানবাবা, আম্মু, ভাইসহ মেলায় ঘুরা হয় নাই, খই, সাঝ, মোয়া-মুড়কি কেনা হয় নাই। এবারে কেন যেন মনে বিষণ্নতা কাজ করেছিল। প্রথম নিজেকে আবিষ্কার করলাম খুব আনমনা হিসেবে।

এবারে বলি আমার নিজের সবচেয়ে চমকপ্রদ গুণের কথা, যা আমি নিজেই জানতাম না। রিসার্চ ম্যাথোডোলোজির প্রেজেন্টেশনের (১৫.০৪.২০২৫) কথা:

রিসার্চে রিসার্চ ম্যাথোডোলজি অনেক কাজের হলেও এই অনার্স জীবনের তৃতীয় বর্ষেই আমাদের কোর্স টিচার আমাদের দক্ষ বানাবেন বলে ওনার প্রয়াস ছিল প্রেজেন্টেশন তৈরি করে তা উপস্থাপনার জন্য আমাদের চার/পাঁচজন করে ছোট গ্রুপে ভাগ করে দিয়ে গ্রুপ ওয়ার্কে আমাদের অভ্যস্ত করা সাথে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে দক্ষ করে তোলা। এই কারণে রেন্ডমলি রোল বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় আমি পরলাম ৬নং গ্রুপে, যেখানে কিনা আমি একাই মেয়ে। শুরু হলো গ্রুপমেটদের সাথে কাজ; আমরা এক এক জন যে এক এক চিড়িয়া তা বুঝে ছিলাম ঐ এক গ্রুপে থেকেই।  কিন্তু দিন শেষে ঐ গ্রুপে থেকে আমি খুশি, গ্রুপমেটরা ছিল খুব সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতাসম্পন্ন। যাই হোক সেদিনের গল্প বলি।

ক্লাসের অনেকেই আমাকে বলেছিল যেহেতু আমি অনেক অনুষ্ঠানেই উপস্থাপনা করেছি, আমার জন্য নাকি প্রেজেন্টেশন দেয়া সহজ। কিন্তু তাদের এ বুঝাতে পারলাম না অনুষ্ঠানে হাতে স্ক্রিপ্ট থাকে, ভুলে গেলে দেখে নিতে পারি; প্রেজেন্টেশনে হাতে কিছুই থাকবে না। উপস্থাপনা করি বাংলায়, প্রেজেন্টেশন করতে হবে পুরো ইংরেজিতে। মনে রাখব কিভাবে? বলে মুখস্ত করে আসবি! তারা এও জানে না মুখস্তে আমি আদ্যোপান্ত কাঁচা। সবার সব আইডিয়া মেনে শুরু করলাম মুখস্ত কর্মকাণ্ড। মজার ব্যাপার, প্রেজেন্টেশনের দিন সকালে গ্রুপমেটদের সাথে প্র্যাকটিস করার সময় দেখি আমি কিছু কিছু জিনিস ভুলে যাচ্ছি। তাও নিজেকে বুঝালাম আমি পারব।

ঐ দিন চারটা গ্রুপের প্রেজেন্টেশনের কথা ছিল অর্থাৎ তিন থেকে ছয় নং গ্রুপের। আমি ছিলাম শেষ গ্রুপের শেষ মানুষ (ছয় নং গ্রুপের সর্বশেষ বক্তা)। শুরু হলো আমাদের প্রেজেন্টেশন। বলা হয় নাই তো আমার গ্রুপমেটদের নাম: ওয়াসিত, ওয়াদুদ ভাই, তৌহিদ, আব্বাস। এই ক্রমতেই চলে আমাদের প্রেজেন্টেশন। আব্বাস আমার কাছে মাইক দেওয়ার পর শুরুতে অমার পরিচয় পর্ব আর স্যারকে ধন্যবাদ জানানো অংশটুকু ভালোই মনে ছিল; এরপর পুরো ফাঁকা আমার মাথা। কিছুই মনে নাই; এর উপর স্লাইড এমন বানিয়েছি যে দেখে রিডিং দিব তারও কোনো উপায় নাই। মনে মনে এইটুক বুঝালাম নিজেকে যাই হোক থামা যাবে না, আবার মনে মনে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, মাঝে খুব একটা আবোল তাবোল বলি নাই, বললেও এমনভাবে বলেছি যেন কেউ ধরতে না পারে। কিন্তু থামি নাই, সবাই বলল ভালো হয়েছে, তবে আমি তো জানি কি সব হাবিজাবি বলেছি। প্রেজেন্টেশনের পর আমি আমাকে আবিষ্কার করলাম স্থির আর আত্মবিশ্বাসী একজন হিসেবে।

পরিশেষে আমি এটুকু বুঝলাম, আমার আমিতেই আমি তুষ্ট। আলহামদুলিল্লাহ।

নুঝাত নাজিয়া
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১ম বর্ষ