আমাদের চারপাশের দেয়ালগুলো নীরব থাকে, কিন্তু কিছু কিছু দেয়াল চিৎকার করে কখনও রঙে, কখনও আকারে, কখনওবা শব্দে। এই দেয়ালের ভাষা—এই রঙিন চিৎকারের নাম গ্রাফিতি।
‘গ্রাফিতি’ শব্দটি শুনলে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দেয়ালের ওপর আঁকা রঙিন অক্ষর, প্রতীক, কিংবা প্রতিবাদের ছবি। শব্দটি এসেছে ইতালিয়ান ‘গ্রাফিও’ (অর্থাৎ আঁচড় দেওয়া) থেকে। যদিও এটি বহুবচন, সাধারণত একবচন অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অনুমতি ছাড়া জনসমক্ষে দৃশ্যমান দেয়াল, বিলবোর্ড, সাবওয়ের দেয়ালে যেসব অঙ্কন বা লেখালেখি করা হয়, তাই গ্রাফিতি।
গ্রাফিতির ইতিহাস নতুন নয়। প্রাচীন রোমান সভ্যতা, মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের গির্জার দেয়াল—সব জায়গায়ই পাওয়া গেছে গ্রাফিতির প্রমাণ। মানুষের নিজস্ব চিন্তা, অনুভব আর প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ হিসেবে গ্রাফিতি বারবার ফিরে এসেছে।
বিশ শতকের আমেরিকা ও ইউরোপে গ্রাফিতি নতুন পরিচয় পেয়েছিল—গ্যাং সংস্কৃতির চিহ্ন হিসেবে। কোনো একটি গোষ্ঠী বা গ্যাং নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করতে এটি ব্যবহার করত। পরবর্তীকালে তা শুধু গ্যাং-এর সীমায় আবদ্ধ থাকেনি। আশির দশক পেরিয়ে নব্বইয়ের দশকে ‘ট্যাগিং’ নামে একটি নতুন ধারা আত্মপ্রকাশ করে, যেখানে একই নাম বা প্রতীক বারবার ব্যবহার করে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া হতো।
তবে গ্রাফিতিকে শুধু অপরাধ বা অনধিকার প্রবেশের কাজ হিসেবে দেখলে তার একটি দিকই দেখা হয়। অনেকে একে গণমানুষের শিল্প বলেও মনে করেন। ম্যুরাল চিত্রশিল্পী ডিয়েগো রিভেরা যেমন মেক্সিকোর দেয়ালে ইতিহাসের ভাষা লিখেছিলেন, তেমনি অনেক শিল্পী গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরেন নিজেদের সমাজ, সংস্কৃতি, বঞ্চনা আর স্বপ্নের কথা।
বাংলাদেশে এই শিল্পধারার বিস্তার শুরু হয় মূলত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনের পর থেকে। রাজপথের প্রতিবাদ, চেতনা, আকাঙ্ক্ষা আর কষ্ট যেন স্থান পায় শহরের দেয়ালগুলোতে। দেয়াল তখন হয়ে ওঠে ক্যানভাস—যেখানে তরুণেরা লিখে রাখে সময়ের সাক্ষর, আঁকে তাঁদের আশা আর ক্ষোভের প্রতিকৃতি।
২০২৪ সালের আগস্টের এক বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাউফুন আরেফিন রূপক ভাই-এর তোলা কিছু গ্রাফিতির ছবি এই নীরব দেয়ালের উচ্চারণকে আরও দৃশ্যমান করে। ছবি নয়, যেন দেয়ালেই লেখা একেকটি গল্প—কখনও দ্রোহের, কখনও স্বপ্নের, কখনও বা নিঃসঙ্গ চিত্তের।
গ্রাফিতি কি তবে শুধু রঙের খেলা? নাকি তা আমাদের সময়ের আরেক ভাষা? হয়তো দুটোই। এবং ঠিক এই দ্বৈততার মধ্যেই গ্রাফিতি তার অর্থ খুঁজে পায়—একইসঙ্গে শিল্প ও প্রতিবাদ হয়ে ওঠে। নীরব দেয়ালগুলো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে।
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জুলাই ৯, ২০২০
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১২, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৪, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১১, ২০২১