মে ১৩, ২০২৫

মানুষ

ক্লান্ত শরীর। ঘামে শার্টের পেছন দিকে প্রায় অর্ধেকটাই ভিজে গেছে। বলছি শান্তর কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। টিউশন থেকে ফিরছে। গুলিস্তান হয়ে হলে ফিরবে। ড. মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহ হল। মাসের ৩১ তারিখ। পকেটের অবস্থা এতটাও ভালো নেই যে, গুলিস্তান থেকে রিকশা করে ফিরবে। তবে হেঁটে আসাতে আজ এক ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা হলো। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষের ভিড়ের মাঝে, ওর চোখ পড়লো রাস্তায় পড়ে থাকা এক রঙিন কাগজের দিকে। রাস্তার কাগজ হাতে নেওয়া যায়? তবে দেখে, রাস্তার মনে হচ্ছে না। নেওয়া, না নেওয়ার হিসেব করতে করতে হাতে নিয়েই ফেললো কাগজটা। মনে হচ্ছে কোনো চিঠি। না, শান্তর চিন্তায় ভুল আছে। চিঠি না। তবে চিঠির মতো। পড়া শুরু করলো, চোখের একপলক রাস্তায় আর পলক কাগজটায়।

“আমার কাছে মানুষ দেখতে খুব ভালো লাগে। খুব বেশি। কত রকমের মানুষ, কত ধরনের চিন্তাভাবনা; বৈচিত্র্যের এক মহাসাগর। যদি ঈগল হতাম, দূর থেকে মানুষ দেখতাম। শুধুই মানুষ।
 মানুষের যত কর্মকাণ্ড আছে, সবগুলোর মাঝে সুন্দর হলো মানুষের হাসি। এক অসাধারণ দৃশ্য। আর হাসির মাঝে সব থেকে সুন্দর হলো প্রিয়জনদের হাসি। বুঝে কিংবা না বুঝেই হোক, সেই হাসির দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ কত কী করে!
 মানুষকে আরেকটা সময় খুব ভালো লাগে। ঘুমানোর সময়। ঘুমানোর সময় মানুষকে যতটা সরল লাগে, মানুষ যদি ঠিক ততটাই সরল হতো, তবে এই পৃথিবী আরো সুন্দর হতো।


 ‘ওহে সৌন্দর্যের পূজারী!
 মানুষের চেয়ে সুন্দর,
 আমি আর কাকে বলি?'”

মনটা ভালো হয়ে গেল। হয়তো কোনো মানবপ্রেমী মানুষ নিজেই নিজেকে চিঠি লিখেছে। তারপর বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছে।

এমন সময়, হঠাৎ কে যেন হাত থেকে ছোঁ মেরে কাগজটা নিয়ে দৌড় দিলো! শান্ত অবাক হয়ে পিছনে তাকালো। গুলিস্তান তো মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি চুরির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এখানে কাগজ চুরি, তা এই প্রথম দেখলাম! একটা টোকাই দৌড়াচ্ছে। একহাতে একটা পলিথিন। ভিতরে ডালের মতো কিছু। সাধারণ ডাল নয়, ড্যান্ডি। টোকাইটাও একবারের জন্য ফিরে তাকালো। শান্তর চোখ ছেলেটার চোখে পড়তেই শান্ত মনে মনে হেসে দিলো।

“কী অদ্ভুত মানুষ! এটাও একটা জীবন?”

মোঃ আব্বাস উদ্দিন
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়