fbpx

পলাশ (Butea monosperma)

“রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে,
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে”

[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

পলাশের নাম শোনেনি এমন বাঙালি বোধ হয় পাওয়া যাবেনা। পলাশ Fabaceae পরিবারের অন্যতম সদস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma । এটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ। প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম কিংশুক। ইংরেজিতে Parrot tree, Bastard Teak, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড সহ পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকটি দেশে বসন্তের শুরু থেকেই পলাশের উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়ে।

পলাশের ফুল টকটকে লাল। এছাড়াও লালচে কমলা রঙের এবং হঠাৎ কখনো হলুদ রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। পলাশ ফুল আকারে খুব বড় নয়, ৪ থেকে ৮ সে. মি. লম্বা। লম্বা মঞ্জরিতে থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। বসন্তে পত্রহীন গাছ হঠাৎ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফুল শেষে সিমের মতো ফল হয়, যার ভেতরে বীজ থাকে। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মায়, বাড়েও দ্রুত। ডাল থেকেও বংশবৃদ্ধি হয়।

পলাশ পর্ণমোচী বৃক্ষ। শীতে গাছের পাতা ঝরে একদম ন্যাড়া হয়ে যায়। পলাশের কাণ্ড ধূসর বর্ণের। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা। পলাশের পাতা যৌগিক এবং ত্রিপত্রী। পাতার রং গাঢ় সবুজ। পাতা দেখতে অনেকটা মান্দার গাছের পাতার মতো হলেও আকারে তুলনামূলক ভাবে বড়। পাতাগুলি সাধারণত খুব খসখসে এবং শক্ত। তাই গবাদি পশু সহজে খায় না। প্লাস্টিকের একবার ব্যবহার্য থালা আসার আগে পলাশ পাতার তৈরি পাত্র খাবার পরিবেশন করতে ব্যবহৃত হত। এখনো ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে এর ব্যবহার আছে। পলাশ থেকে কাঠ, রজন পাওয়া যায়। তাছাড়া এটি ওষুধ তৈরিতে এবং রঞ্জক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

পলাশের কাঠ মলিন সাদা বর্ণের। এটি পানিতে সহজে নষ্ট হয়না। পলাশের কাঠের তৈরি চামচ পুজোতে আগুনে ঘি ঢালতে বিভিন্ন হিন্দু রীতিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পলাশের কাঠ থেকে ভাল কাঠকয়লা পাওয়া যায়। পলাশের আঠা তে ট্যানিন থাকে বলে চামড়া শিল্পে এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আছে। পলাশের রঙিন ফুল থেকে ঐতিহ্যবাহী হোলির রং তৈরি হয়। এছাড়া কাপড় রাঙাতেও এই ফুলের রং ব্যবহার হয়।পলাশের বীজ থেকে দেশীয় ভেষজ ওষুধ তৈরি করা হয়।

তবে পলাশের জনপ্রিয়তা এর মনকাড়া ফুলের জন্য। সাধারণ মানুষ যেমন পলাশ গাছের পাশ দিয়ে যেতে যেতে একবার হলেও থমকে তাকায়, তেমনি গল্প কবিতা বা গানেও পলাশের সগর্ব উপস্থিতি। পলাশ ফুলের প্রসঙ্গ অনেক বাংলা গানে এসেছে নানাভাবে। কখনো তার ব্যবহার কোনো চটুল গানে হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল এনে দে এনে দে নইলে বাঁধব না, বাঁধব না চুল… আবার কখনো জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানে ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটি পলাশ ফুলের মালা।’ “বৃক্ষ তোমার নাম কী?” “ফলে পরিচয়।” পলাশের জন্য উত্তরটা হবে “ফুলে পরিচয়।”

কালের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে বসন্ত এলো বাংলার দুয়ারে। এলো আগুন-রঙা পলাশ ফোটার দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় এবং শহীদ মিনারের পলাশ গাছ গুলি অপেক্ষায় আছে। যে কোনো দিন ফুলে ফুলে ভরে যাবে। যারা পলাশ চেনেন না, পত্রহীন গাছ ভরা উজ্জ্বল লাল কমলা ফুল দেখলে সহজেই চিনতে পারবেন।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩

জাহিদা গুলশান

প্রাক্তন শিক্ষার্থীপরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩