অনন্ত লতা (Antigonon leptopus)
অনন্ত লতা হচ্ছে Polygonaceae পরিবারের একটি লতানো উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Antigonon leptopus)। ইংরেজিতে Mexican Creeper, coral vine, bee bush ইত্যাদি নামে পরিচিত এই সপুষ্পক উদ্ভিদটি মেক্সিকোর স্থানীয় প্রজাতি। বাংলাদেশে অনন্ত লতার সাদা আর গোলাপি রঙের দুটি প্রজাতি চোখে পড়ে।

অনন্তলতা বহুবর্ষজীবী, দ্রুত বর্ধনশীল এবং আরোহী লতা। এর দৈর্ঘ্য ২৫ ফুট বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। অসংখ্য শক্ত আঁকশির মাধ্যমে অন্য গাছ বা মাধ্যমকে আঁকড়ে ধরে ছড়িয়ে যায় এই লতা।
এর মূল কন্দের মত এবং শক্ত আবরণ যুক্ত। ঘন সবুজ রঙের পাতার আকৃতি অনেকটা পান পাতার মত, কখনও বা ত্রিভুজের মত আকৃতি। পাতার দৈর্ঘ্য ২.৫ থেকে ৭.৫ সেমি পর্যন্ত। বসন্ত কাল থেকে শুরু করে শরৎ কাল পর্যন্ত অনন্তলতার ফুল ফোটে। ফুলগুলি পুষ্প মঞ্জরিতে সাজানো। প্রতি ফুলে পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণের। ফুল শেষে বীজ হয়। বীজগুলি এক সেন্টিমিটার লম্বা, দেখতে সুন্দর মসৃণ। এর আকৃতি অনেকটা নাশপাতির মতো, নিচের দিকে কিছুটা মোটা এবং ওপরে ক্রমশ চিকন। বীজ ভীষণ হাল্কা, পানিতে ভেসে অনেকদূরে বাহিত হতে পারে। শুকর, রেকুন, বিভিন্ন রকম পাখির খাদ্য এই বীজগুলি এবং এদের মাধ্যমেও বীজ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

পৃথিবীর অনেক দেশে বাগান বা পার্কে এই লতাটি তার উজ্জ্বল রঙ ও ঝলমলে উপস্থিতির জন্য খুব আকর্ষণীয় হলেও আমেরিকার কোন কোন অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির আগ্রাসী উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত। অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু এই লতাটি। বিরূপ আবহাওয়া বা অন্য কোন কারণে গাছ মরে গেলেও মাটির নিচে থাকা কন্দ থেকে আবার নতুন করে গাছ বের হয়।
এর আদিনিবাস মেক্সিকোর কোন কোন অঞ্চলের আদিবাসিদের মধ্যে অনন্ত লতার বীজ থেকে খই বানাবার প্রচলন আছে বলে জানা যায়। তাছাড়া বীজ সিদ্ধ করে চা বানাতে ব্যাবহার করা যায়। শুধু খাবার নয়, বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডাজনিত রোগে এবং আরো নানা রকম চিকিৎসায় অনন্তলতার ব্যবহার আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ভবনের আশেপাশে এই লতাটির দেখা পাওয়া যায়। আজকাল অনেক সৌখিন বাগানে জায়গা করে নিয়েছে সুদৃশ্য ফুলের এই লতাটি।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩