স্থলপদ্ম

আমি তখন খুব ছোট। গরমের ছুটিতে নানাবাড়ি বেড়াতে গেছি। আমার এক খালা তাঁর এক বান্ধবির বাসা থেকে একটি গাছের ডাল নিয়ে এলো। হাত খানেক লম্বা। আমার শৈশবের টুকরো টুকরো স্মৃতির মধ্যে এই ঘটনাটি আমার আজও মনে আছে। আমি খুব অবাক বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, গাছের ডালটি মাটিতে লাগিয়ে এর উপরের অংশে বেশ কিছুটা গোবর লাগিয়ে দেয়া হল। নানার সাথে গাছ লাগাতে লাগাতে ততদিনে আমি এটুকু জানি যে গাছের গোড়ায় গোবর দিলে তা গাছের সার হিসেবে কাজ করে। এই প্রথম দেখলাম, একটা গাছ লাগানোর সময় তার মাথায় গোবর লেপে দেয়া হল।
৪/৫ বছর পর সেই গাছ দেখি অজস্র গোলাপি রঙের ফুলে ভরে আছে। সেই গাছটির নাম স্থলপদ্ম। আমার ছোটবেলার স্মৃতিমাখা খুব ভাল লাগার একটি গাছ।
স্থলপদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus mutabilis। এটি মালভেসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি।
গাছ ৩ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তবে টবেও চাষ করা সম্ভব। পাতার দুপাশই রোমশ। গ্রীষ্মের শুরু থেকে শুরু করে শরৎ ও হেমন্ত জুড়ে সাদা বা গোলাপি ফুল ফোটে। ফুল ৪-১০ সেমি চওড়া এবং ডাবল বা একক পাপড়ির হতে পারে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুলের সাদা পাপড়ি ধীরে ধীরে হালকা গোলাপি থেকে গাঢ় গোলাপি বর্ণ ধারণ করে। তাপমাত্রা রঙ পরিবর্তনের হারকে প্রভাবিত করে ।

একক জাতের ফুলগুলি সাধারণত কাপ আকারের হয়। এটি পুরো রোদে বা আংশিক ছায়ায় ভাল জন্মে এবং ভাল মাটি পছন্দ করে।
কাটিং দ্বারা বংশ বিস্তার সবচেয়ে সহজ, এবং কাটিং প্রায় যে কোনও সময়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে বীজের মাধ্যমেও খুব সহজে বংশ বিস্তার করে, যদিও বীজের গাছে ফুল আসতে অনেক বেশি সময় লাগে, যেখানে কাটিং করা গাছে এক বছরেই ফুল ফোটে।
স্থলপদ্ম মূলত চীন এবং সংলগ্ন দেশগুলির স্থানীয় গাছ হলেও বর্তমানে এটি অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত সমস্ত মহাদেশে পাওয়া যায়।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩