fbpx

ভালো থাকুন, প্রিয় শিক্ষক

আতাহার স্যার,

কীভাবে যে আপনার পরিচয় তুলে ধরবো?

মহীরুহ! পরিসংখ্যান-জগৎ বিস্তৃত যার শিকড়!

না কি পরশ পাথর, যার স্পর্শে সব কিছুই সোনা হয়ে যায়!

বুঝতে পারছি না।                 

আপনি আমাদের ছেড়ে যাওয়ার পর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আপনার অগণিত গুণগ্রাহী আপনাকে নিয়ে নিজেদের অসংখ্য অনুভূতি প্রকাশ করে চলেছেন। আপনার সততা, নিষ্ঠা, কাজের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, ছোট বড় নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নেবার ক্ষমতা, সবার মনে স্বপ্নের বীজ বুনে দেয়া; কত কিছুই না উঠে আসছে অনুভূতিতে। আবেগপূর্ণ এ লেখাগুলো একটার পর একটা আমি পড়ে চলেছি, কিন্তু মন যেন ভরছে না। মনে হচ্ছে কী যেন বাকি রয়ে গেছে। আরো কত কথাই যেন বলা হলো না আপনার সম্পর্কে। কী সে কথা? আমি জানি না। আপনার মত একজন মানুষকে নিয়ে লেখার মত ভাষার পরিপক্কতাই যেন নেই আমাদের। ক্ষমা করবেন স্যার।

আপনি যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন তখন তো ছিলেনই; এখন যখন নেই, তখন যেন আরো গভীরভাবে আছেন। অনেকেই রয়েছেন যারা আপনার প্রত্যক্ষ শিক্ষার্থী না হয়েও কখনো হয়তো আপনার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছেন, তারাও নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন শুধু এই ভেবে যে, তারা আপনার সান্নিধ্যে এসেছেন। যার সান্নিধ্যই সৌভাগ্যের ভাবনা এনে দেয় মনে, এমন একজন মানুষকে পরশ পাথর বললে তো খুব ভুল বলা হবে না। আর আমরা – যারা আপনার শিক্ষার্থী, সহকর্মী – তারা এই পরশ পাথরের সংস্পর্শে থাকার সৌভাগ্যকে কীভাবেই বা বর্ণনা করবো?

আপনি, স্যার, যখন পিএইচডি করে ফিরে এলেন, আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আপনি আমাদেরকে Sampling Distribution পড়াতেন। এরপর মাস্টার্স-এ আপনার কাছে দীক্ষা পেলাম Biostatistics-এর। আর একথা কে না জানে যে, বাংলাদেশে Biostatistics-এর সূচনা আপনার হাত দিয়েই। কী যে অহংবোধ হচ্ছে ভেবে যে, আমি ছিলাম আপনার Biostatistics–এর প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী! 

আপনার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বহুমাত্রিক, কখনো শিক্ষার্থী, কখনো বা সহকর্মী, কিন্তু সব সময়ই ছিলেন বন্ধু। আপনি শুধু আমার না, আপনার সংস্পর্শে আসা সবারই বন্ধু ছিলেন। যে কেউ আপনার কাছাকাছি এসেছে, আপনার হৃদয়ের উষ্ণতা স্পর্শ করেছে তাদের প্রত্যেককেই।

অনেকের চেয়ে এই পৃথিবীতে কম সময় পেয়েও যে দীপ আপনি জ্বালিয়ে গেছেন আপনার চারপাশের মানুষের মাঝে, তার আলো ছড়িয়ে যাক পৃথিবীর প্রতিটি কোণে। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার পরকালের জীবন আলোকময় করে দিন। আপনি ভালো থাকুন স্যার।

আপনার অনেক কাছের,
সায়েমা।