fbpx

সামাদ স্মৃতি টূর্নামেন্ট -২০২২

ঘরের মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এর মধ্যদিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিল কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের চারতলা জুড়ে। “সামাদ স্মৃতি টুর্নামেণ্ট-২০২২” আয়োজনের মধ্যদিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগ এ দীর্ঘদিন পর শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থী ও অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মিলনমেলার সুযোগ তৈরি হলো। সামাদ স্মৃতি টুর্নামেন্ট এর আয়োজন পরিসংখ্যান বিভাগের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ (১৯৪৯-১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করেন। জাতির এই বীর সন্তান আমাদের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক ছাত্র ছিলেন, যার স্মৃতিতে এক বছর অন্তর অন্তর এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এবার দুই পর্বে আয়োজিত হয় এই ইন্ডোর টুর্নামেন্ট। পুরুষ এবং মহিলাদের বিভিন্ন ইভেন্ট মিলিয়ে সর্বমোট ২০ টি ইভেন্ট ছিল টুর্নামেন্টে, যাতে অংশগ্রহণ এর হার ছিল নজরকাড়া। টুর্নামেন্টের রেশে সেজে উঠেছিল পরিসংখ্যান বিভাগ, সকলের স্বতঃস্ফূর্ততা, উল্লাস এ সরগরম ছিল বিভাগের প্রতিটি কোণা।

Cover

২৬-২৮ ডিসেম্বর এর প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের চতুর্থতলায়। ডিপার্টমেন্ট এর  ইন্ডোর টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন হয় আমাদের বিভাগের সম্মানিত চেয়ারপার্সন  অধ্যাপক সায়েমা শারমিন ম্যামের  ক্যারাম একক (গার্লস) খেলায় অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে। তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী  ইসরাত জাহান নাফিসা, এক কথায় নবীন প্রবীণ কে ঘিরে এই প্রথম ম্যাচটি সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিল। এরপর একের পর এক ম্যাচ। আলাদা আলাদা ৩ টি ক্লাসরুমে প্রথম দিন চলে মেয়েদের ক্যারাম (একক), রুবিক্স কিউব (গার্লস এবং বয়েজ), দাবা (বয়েজ)। মেয়েদের ক্যারাম খেলা শেষ হয় টান টান উত্তেজনার মধ্যদিয়ে, যার চ্যাম্পিয়ন তানজিন তামান্না ও রানার্সআপ ইসরাত জাহান নাফিসা। বুদ্ধির লড়াই এ দাবা খেলায় বিজয়ী হন সেলিম রেজা এবং রানার আপ হন সোহাগ ইসলাম। প্রথম দিনের আরো একটি আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল রুবিক্স কিউব। চোখের পলকে এই রঙিন ধাঁধাঁ মিলানোর খেলায় শিক্ষার্থীদের পারদর্শীতা, যে কাউকে অবাক করে দিবে। মাত্র ২২.১৬ সেকেন্ডের মধ্যে রুবিক্স কিউব সলভ করে ছেলেদের সেগমেন্টে বিজয়ী হন মোঃ নাভিদ নেওয়াজ। খুবই অল্প ব্যবধানে প্রথম স্থান থেকে ছিটকে রানার্সআপের জায়গা দখল করেন ইফতিখার হোসেন (২৪.৭৯ সেকেন্ড)। মেয়েদের রুবিক্স কিউব সলভিং ঘিরেও উত্তেজনার কমতি ছিলনা, চ্যাম্পিয়ন হন আমিনা বিনতে খাজা (১মিনিট ৪৩ সেকেন্ড) আর মাত্র ৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে উম্মে আতিকা ইসলাম (১মিনিট ৪৬ সেকেন্ড) জিতে নেন রানার্স আপের শিরোপা।

দ্বিতীয় দিনের খেলার ইভেন্টগুলোও ছিল ব্যাপক উত্তেজনাময়। মেয়েদের ক্যারাম (ডাবল) খেলায় চ্যাম্পিয়ন এর স্থান দখল করে নেয় তানজিন তামান্না ও নুসরাত জাহান মিম আর অল্প পয়েন্টে পিছিয়ে রানার্স আপ হন অনসূয়া কর্মকার ও রওনাক তাবাসসুম। কার্ড খেলার অংশ হিসেবে মেয়েদের জন্য ছিল কলব্রীজ, যার চ্যাম্পিয়নের স্থান দখল করেন ফারিসা আরিয়ানা অরিন এবং এরপরের স্থানেই আছেন মোসা. সুমাইয়া খানম। দাবার কোর্ট এও মেয়েদের জমজমাট লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন ইসরাত জাহান ইমু এবং রানার্স আপ ইসরাত জাহান জুহা। দ্বিতীয় দিনের শেষ আকর্ষণ ছিল ছেলদের ক্যারাম (একক)। এক কথায় চুম্বকের মতো দর্শকের নজর আটকে রেখেছিল ক্যারামের প্রতিটি ম্যাচ। কিন্তু এর ফাইনাল ম্যাচের শ্বাসরুদ্ধকর আবহ সকলকে  নির্বাক করে দিয়েছিল। ২৯ পয়েন্টের খেলা গড়ায় ১১ বোর্ডে আর শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হন অফিস কর্মকর্তা শ্যামল লাল। দুর্দান্ত খেলার মধ্যদিয়ে রানার্স আপ হন মোঃ নাজমুল হক।

তৃতীয় দিনে একইসাথে আয়োজিত হয় বেশ কয়েকটি ইভেন্ট যাতে বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ছেলেদের ইন্টারন্যাশনাল ব্রীজ খেলায় চমক দেখিয়ে বিজয়ী হন ডিপার্টমেন্টের সহকারী শিক্ষক আহসান রহমান জামী ও শিক্ষার্থী ডেভিড গাইন, রানার্স আপ হন মিনহাজুল হক অন্তু ও তৌহিদ ইয়াসির। একই সাথে মেয়েদের কার্ড ২৯ এ চ্যাম্পিয়ন হন  ফারিসা অরিয়ানা অরিন ও  জাইমা সুরাইয়া জেমী, রানার্স আপ হন সুমাইয়া তাবাসসুম ও সরদার মালা ইসলাম নুপা। ছেলেদের কার্ড ২৯ এ বিজয়ী হন  সেলিম রেজা ও তাহারিম এবং রানার্স আপ রাজিব হোসেইন ও জাকারিয়া। প্রথম পর্বের চমকপ্রদ সমাপ্তি ঘটে আবারো ছেলেদের ক্যারাম খেলাকে কেন্দ্র করে, তবে এবার ছিল দ্বৈত সেগমেন্ট। এই খেলায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিস কর্মকর্তাদের পারদর্শিতা ছিল প্রশংনীয়। ম্যাচ শেষে বিজয়ী হন রাজিব হোসেইন ও                   ফয়সাল আবেদিন, রানার্স আপ হন অফিস কর্মকর্তা মোঃ শহিদ ও দেবব্রত চন্দ্র দে।

টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় পর্ব আয়োজিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে। উৎসবমুখর পরিবেশে একের পর পর এক কোর্টে গড়ায় ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাডমিন্টন সেগমেন্টে। ব্যাডমিন্টন এককে ছেলেদের ৮০ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং জমজমাট ইভেন্টে দৃষ্টিনন্দন এক ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে জয়ী হন রফি মোঃ জায়েদ এবং একি সাথে রানার্স আপের স্থান দখল করেন তুষার ইমরান। মেয়েদের ব্যাডমিন্টন (একক) ও কেড়ে নিয়েছিল সবার আকর্ষণ, শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হন কুলসুমা আক্তার এবং রানারআপ দিলশাদ জাহান দিশা। উদ্দীপনার কমতি ছিলনা টেবিল টেনিস ইভেন্ট কে ঘিরেও। চোখের নিমিষে কোর্টে ঝড় তুলে দর্শককে মাতিয়ে রেখেছিল প্রতিযোগিরা। ছেলেদের টেবিল টেনিসে (একক) দুর্দান্ত ফাইনাল ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন হন সোহাগ ইসলাম এবং রানারআপ হন রফি মোঃ জায়েদ। মেয়েদের টেবিল টেনিসেও (একক) হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এর মধ্যদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন নুসরাত জাহান এবং রানারআপ আমিনা বিনতে খাজা।

জিমনেশিয়ামে দ্বিতীয় দিনের ইভেন্টগুলির মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটে সামাদ স্মৃতিও টুর্নামেন্টের। শেষদিনেও সকলের উতসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিলনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল জিমনেশিয়াম, আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দ্বৈত ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস। টেবিল টেনিস দ্বৈত (মেয়ে) সেগমেন্টে ৩ বোর্ডের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন এর শিরোপা ছিনিয়ে নেন জাইমা সুরাইয়া জেমী এবং নুসরাত জাহান, রানার্স আপ হন অনসূয়া কর্মকার এবং আমিনা বিনতে খাজা। টেবিল টেনিস (দ্বৈত) ছেলেদের সেগমেন্ট ও ছিল চোখ ধাঁধানো। চিত্তাকর্ষক খেলার মধ্যদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন ফাহাদুল হোসেইন ও মোঃ লিখন আলী, রানার্স আপের জায়গা দখল করেন ফাহিম ফয়সাল পাটোয়ারী ও আত তাহরিন। ছেলেদের ব্যাডমিন্টন ইভেন্টটি জনপ্রিয়তায় আরো একধাপ এগিয়ে ছিল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এর মধ্যদিয়ে। শুরু থেকে শেষ অবধি প্রতিটি ম্যাচের উন্মাদনা ফাইনালে এক নতুন মাত্রা পেয়েছিল ডিপার্টমেন্ট এর জনপ্রিয় সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রিয়াল এবং আকিবুল হাসান মামুন এর জয়ের মাধ্যমে। এই খেলায় দুর্ধর্ষ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে রানার্স আপ হন রফি মোঃ জায়েদ মুত্তাসিম বিল্লাহ। সর্বশেষে টুর্নামেন্ট পর্দা নামলো মেয়েদের ব্যাডমিন্টন দ্বৈত খেলার ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে। এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হন কুলসুমা আক্তার ও জাইমা সুরাইয়া জেমী, রানার্স আপ হন দিলশাদ জাহান দিশা ও জিনাতুল জান্নাত উসিমা।

জনপ্রিয় প্রবাদ অনুযায়ী বলতে গেলে, “শেষ ভালো যার, সব ভালো তার”। শুরু থেকে অবধি সকলের আনন্দের খোরাক হয়েছিল এই টুর্নামেন্ট, কাঠখোট্টা পড়াশোনার মাঝে একটু দম এনে দিয়েছিল এই সুন্দর আয়োজন। যার নেপথ্যে ছিলেন ৬৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ডঃ মোঃ মতিয়ার রহমান, ডঃ ফারজানা আফরোজ, আহসান রাহমান জামী এবং বিকাশ পাল।

এছাড়াও সকল ব্যাচ থেকে সকলের অবদান ছিল প্রতিটি ইভেন্টে জুড়ে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহন জানান দিচ্ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রদ ও উদ্দীপনার। আগামীতেও পরিসংখ্যান বিভাগের বীর সন্তান আশফাকুস সামাদ এর স্মৃতি আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখুক সকলের উদ্দীপনা, উল্লাসে মাতিয়ে রাখুক বিভাগের আঙিনা, অনুপ্রেরণা জাগাক খেলাধুলায় অংশগ্রহণে এবং পরিশেষে সমৃদ্ধ করুক পরিসংখ্যান বিভাগের অর্জনের ঝুলি।

প্রতিবেদকঃ অনসুয়া কর্মকার