fbpx

অক্টোবর ১৬, ২০২৪

পদ্মাল

৩১ ডিসেম্বর, ১১:৫৯।

“জাস্ট গো টু হেল, জাস্ট গো টু হেইইল, জাস্ট গোও টুউউ হেএইইল…” গান টা কানে লাগানো ইয়ারফোনে বেজে চলেছে। গানের আওয়াজ ৬০% এর নিচে হওয়ায় বাইরে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের আওয়াজ কানে আসছে। ওহ! তারমানে আজকে নিউ ইয়ার!

কত্ত অদ্ভুত! সবাই টাকা ফুটাচ্ছে, সরি আতশবাজি ফুটাচ্ছে শুধুমাত্র রাত ১২টা বেজেছে বলে! নাহ, শুধুই কি রাত ১২ টা!? নাকি নতুন ক্যালেন্ডারের জন্য!? উহু! বিজ্ঞানের জন্য! বিজ্ঞানের পৃথিবী সূর্যকে সম্পূর্ণ একবার ঘুরে এসে বাড়ি ফিরেছে আজ, তাই সবাই এত আনন্দ করছে।

হ্যাঁ, ঠিক তাই! যেমন আমি বাড়ি ফিরলে বাবা-মা, ভুতু সবাই আনন্দ করে তেমন আনন্দ এটা। হ্যাঁ, সকাল হলেই তো আমার বাড়িতে এমন আনন্দ হওয়ার কথা!!

কিন্তু বেনাপোল বেটা বড্ড বেয়াদব! আমাকে সকাল সকাল পৌঁছে দেবে, তা নয়! হতচ্ছাড়াটা স্টেশনে আসতেই ২ ঘন্টা লেইট করবে বলে বড় বড় করে বিলবোর্ডে লিখে রেখেছে স্টেশন মাস্টার। ইচ্ছে করছে স্টেশন মাস্টারের নাকটা ফাটিয়ে দিয়ে আসি। আচ্ছা এনার নামে মাস্টার কেন! উনি আবার কাকে পড়ান!? মানুষকে? নাহ, তাহলে এতদিন ধরে ট্রেনে যাতায়াত করা সকল যাত্রি শিক্ষিত হয়ে যেত। অন্তত ময়লাগুলো নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে শিখতো। উনি হয়তো ট্রেনগুলোকে পড়ান! যেখানে বেনাপোল এক্সপ্রেস হলো ব্যাক বেঞ্চার। সময়মত তো আসবেই না, বরং চলা শুরুর পরও যেখানে সেখানে থামবে। এই যে অক্টোবরের কথায় ধরুন না! হতচ্ছাড়া ঠিকসময়ে স্টেশনে এলো ঠিকই! কিন্তু রাস্তায় টাংগাইলের কাছাকাছি গিয়ে একই জায়গায় ৫ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে দাড়িয়ে থাকলো। সে বলে নড়বে না, তো নড়বেই না। বোঝেন কেমন পাজি তাহলে! এখানে বেনাপোলের কি দোষ দেবো!? এদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার যা দূরবস্থা, আমার মনে হয় স্টেশন মাস্টাররাই ঠিক মতো পড়াতে পারেন না। কারণ একজন ভালো শিক্ষকের সব থেকে দূর্বল ছাত্রের মধ্যেও নূন্যতম সময়ানুবর্তিতা থাকে।

১লা জানুয়ারি,১২:৫৯।

উফফ!! এবার সত্যি বিরক্ত লাগছে। আরো এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। তবে অনেকদিন পরে বাড়ি ফেরার উত্তেজনা বিরক্তিভাবটা কমিয়ে দিচ্ছে। তার উপর আবার না জানিয়ে ফেরাটা! প্রিয়জনদের সারপ্রাইজ দিতে কারনা ভালো লাগে বলেন!

যখন আপনি কাউকে মিস করবেন, খুব করে চাইবেন সে এখানে থাকলে কত ভালো হতো!  কিন্তু সে নেই। এই আক্ষেপ নিয়ে মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা উচু করে দেখলেন সেই মানুষটা আপনার সামনে! খানিকক্ষণ কল্পনা ভেবে বুকের মধ্যে খচ করে উঠার পর যখন বুঝবেন আসলেই সে এসেছে! তখন আপনি হবেন সেই মুহুর্তে পৃথিবীর সব থেকে খুশি ব্যক্তি। আর বাবা মাকে এক মুহুর্তের জন্য সব থেকে খুশি করতেই পদ্মাল বাড়ি ফিরে না জানিয়ে। হ্যাঁ, আমার নাম পদ্মাল। অদ্ভুত নাম, তাইনা? কিন্তু এটা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। সন্ধ্যায় মা কল দিয়ে বলছিলো, পিঠা বানিয়ে রেখেছে, দেশি মুরগির ডিম রেখেছে, আবার আজকে নববর্ষ উপলক্ষে মুরগি-খিচুরি রান্না করছে। পদ্মাল কেন আসছে না! মার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো মা জানে তার ছেলে আজকে বাড়ি আসবে! তাই মাকে জানাই কাল সকালে ক্লাস আছে, এর মধ্যে আসা যায় না। অথচ গতকালই ট্রেনের ঠিকিট কিনে রেখেছে পদ্মাল। শুধুই কি টিকিট? মার জন্য কাস্মীরী চাদর, বাবার জন্য সোয়েটার আর এক জোড়া হাতমোজা। চাদরের কথা মাকে আগেই জানিয়েছি, তাই হইতো মা ধরে নিয়েছে ছেলে বাড়ি ফিরবে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার, তাইনা? মায়েরা সব যেন আগে থেকেই জানে! সত্যিই তাই, এজন্য এতবার চেষ্টা করেও মাকে সারপ্রাইজ দিতে পারেনি পদ্মাল। আগে যতবারই এভাবে সারপ্রাইজ দিতে গেছে, মা আগে থেকেই বুঝে গিয়েছে। তবে পদ্মালের চেষ্টা মাকে যে খুশিই করে এটা যেকেউ বুঝতে পারবে।

এবার মাথাটা ঝিমাচ্ছে, এক কাপ কফি হলে মন্দ হয়না! স্টেশন ক্যাফেতে গিয়ে এককাপ কফি নেওয়া যাক। কফি হাতে বেনাপোলের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বাড়ি গিয়ে খেজুরের রস খাওয়া নিয়ে চিন্তাটা মাথায় এসে গেলো! সাব্বু! সাব্বুও তো বাড়ি গেছে! ওকে বলা যাক, তাহলে ও একটা ব্যাবস্থা করে রাখবে। আহ, কতদিন পর খেজুরের রস খাওয়া হবে ভেবেই জিভে পানি চলে আসছে। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে কোনো এক ভাইয়ের পোস্টে খেজুরের রসের ছবি দেখে আফসোস হয়েছিল, এবার সেটা ঘুচিয়ে নেওয়া যাবে। আর নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করে অন্যদের আফসোস করাতে হবে।

দেখুন কি বেকুব এই স্টেশন মাস্টার! ঘড়িতে রাত ২:০৩, অথচ বিলবোর্ডে লিখে রাখছে ট্রেন ছাড়ার সম্ভাব্য সময় রাত ২:০০। এটা দেখে হাসি আসলো, আর বুঝে নিলাম বেনাপোলের থেকে তার মাস্টার বেশি বেকুব। যাই হোক, ৫ মিনিট বাদের এবার লেখায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। বেনাপোল বেটা ৭ নং প্লাটফর্মে আসবে। দেখেই উত্তেজনা দ্বিগুন হয়ে গেলো আর এক সেকেন্ডও দেড়ি না করে দৌড়ে ৭ নং প্লাটফর্মে পৌছে দেখি একটা লোকাল ট্রেন আসছে। মেজাজ খারাপ হওয়ার আগে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম সেটা পরের লাইন দিয়ে আসছে, তারমানে বেনাপোল বেটা না এসেই প্রক্সি দিয়ে দিয়েছে! উফফ! ১৩ মিনিট বাদে নবাবজাদার আগমন ঘটলো!

রাত ২:৪৯।

হুইসেল বাজিয়ে স্টেশন মাস্টার কে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলো বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঠিক যেভাবে আমি বাড়ি থেকে বের হলে চিৎকার করে মাকে বলে বের হতাম। যাক, বেনাপোল বেটা ব্যাক বেঞ্চার হলেও, আমার মতো গুরুভক্তি আছে।

টিকিট কেনার সময় দুই সিট সাইডের একটা সিট নিয়েছিলাম ব্যাচেলর আশা নিয়ে। ব্যাচেলর আশা বুঝেন নাই? আরে পাশে একটা সুন্দরী মেয়ে বসবে, প্রচুর কথা বলবে, আমি কম কথা বলবো, তবে তার সব কথা শুনবো ফলে সে আমাকে পছন্দ করবে, ফোন নম্বর বিনিময় হবে, তারপর তারা একে অপরের কতযে চেনা হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো নিয়েই ব্যাচেলর আশা। তবে আমার জীবনে এই ব্যাচেলর আশা কখনো পূরণ হয়নি। দোয়া করছিলাম এবার যেনো তা পূর্ণ হয়। পাশের সিটটা খালি, মনে লাড্ডু ফুটছে। দোয়া বুঝি কবুল হয়ে যায়! কিন্তু এই স্টেশন ছেড়ে চলে আসার পরও কেউ আসেনি, ভাবলাম সিট খুজে পাইনি পরে এসে বসবে। অনেক্ষণ অপেক্ষা করেও আসেনি দেখে ভেবে নিলাম হইতো পরের স্টেশন থেকে উঠবে। তাই ভেবে নিয়ে মনের আশাটাকে বাচিয়ে রাখলাম। কিন্তু পরের স্টেশন, তারপরের স্টেশন কোনোটা থেকেই কেউ উঠলো না। তারমানে এবারেও আমার ব্যাচেলর আশাটা ভার্জিন থেকে গেল। এই দুঃখ নিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি! আর মনে নাই।

ঘুম ভাঙলে দেখি আলো ফুটে গেছে। ফর্সা আলো না, কুয়াশামোড়ানো অন্ধকার কেটেছে এমন। ঈশ্বর্দী এসে থেমেছে ট্রেন, আর একটু গেলেই বাড়ি। কয়েকঘন্টা বাদেই পৌছাবো। উঠে ঝেড়ে বসলাম, এককাপ চা খাওয়া যাক। মর্নিং টি খুব কমই খাওয়া হয়, তাই বোধহয় আজ চায়ের চুমুকে আলাদা স্বাদ ছিলো। নাকি এখানের চা-ওয়ালা ভালো চা বানায়! হতেও পারে, যাই হোক আমার চা খাওয়ার কাজ, আমি আপাতত সেটাই শেষ করি।

সকাল ১০:০০।

সিএনজি থেকে নেমে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। পায়ে হাটা দূরত্ব, ১০ মিনিটের বেশি লাগে না। অনেকদিন পর নিজের গ্রামের হাওয়া, আহা! এ যেনো এক অতৃপ্ত অমৃত পানের অনুভুতি, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রাস্তায় গেদা দাদা, বজলু দাদা, কালাম কাকা সহ অনেকের সাথেই দেখা হয়েছে। গেদা দাদা, নামটা হাস্যকর না? অনেক দিন পর তাদের সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগছে। তবে সবার দৃষ্টি কেমন জানি গম্ভীর ছিলো, মুখে হাসি থাকলেও আমাকে কেমন করে যেন দেখছিলো সবাই। কমল-কীরণ আমাকে দাদু ভাই ডাকে। আমাকে দেখেই দাদু ভাই বলে ডাক দেয়। আমি কাছে ডাকলাম কিন্তু তারা কাছে না এসে দৌড়ে পালালো। আমি হেসে চলে এলাম বাড়ির দিকে।

গেটের সামনে এসে মাকে ডাক না দিয়ে গেটের সিটকানি বাজানো আমার স্বভাব। স্বভাবতই সিটকানিতে হাত দিয়ে বাজাতে গিয়ে কিছু একটা অনুভব করে খেয়াল করি সিলভার রঙের একটা ধুলো জমা তালা ঝুলে আছে। অবাক ব্যাপার! মা-বাবা কোথায় গেছে?? কাল রাতেও তো ফোন দিলো বাড়ি আসার জন্য, নিউ ইয়ার নিয়ে কতকি বললো! আর এরইমধ্যে বাড়ি থেকে কোথায় চলে গেলো! হিসেব মিলছে না। ভুল বাড়িতে চলে এলাম কি? নাহ, সব ঠিক আছে। এই তো মার করা ফুলের বাগান, তবে আগের মতো যত্ন করে না দেখি। খুব বকে দেবো মাকে, এমন অবহেলা করে রেখেছে কেন!? শখ করে যখন বাগানখানা করলেই তো যত্ন নিবে না!? কিন্তু কথা হচ্ছে মা কই? বাড়ির গেটেই বা তালা কেন! ছোটবেলায় মা তালা দিয়ে কোথাও গেলে পাশের বাড়ির কাকিদের থেকে চাবি এনে চেষ্টা করতাম, যদি খুলে যায়! মাঝে মাঝে সফলও হতাম। এগুলো ভেবে মুচকি হাসি ফুটলো ঠোঁটের কোনায়। এবার নিজের পকেটে চাবির একটা গোছা অনুভূত হচ্ছে সেটা বের করে একটা মরিচা পরা চাবি দিয়ে চেষ্টা করতেই তালাটা খুলে গেলো। আশ্চর্য, এক চেষ্টাতেই সফল! বাহ, তাহলে আর বাইরে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। ভেতরে গিয়ে আগে ফ্রেশ হওয়া যাক, তারপর মাকে কল দেবো। ভিতরে ঢুকে আরেকদফা শক খেলাম। ভুতের বাড়ি ভুতের বাড়ি অনুভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে গত  ১/২ বছর কেউ এখানে ছিলো না। এবার আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। আহ, অসহ্য! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। ভয়ংকর এক চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। কানটা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে! দু’হাতে কান চেপে ধরে এবার মনে হচ্ছে চিৎকারের আওয়াজ টা মায়ের! আমি হন্নে হয়ে মা বলে চিৎকার করে উঠলাম, নিজের আওয়াজের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম কিন্তু মা’র আওয়াজের উৎস খুজে পেলাম না। আমার চিৎকার শুনে কাজলী কাকি বাড়িতে ঢুকলেন, ঢুকেই আমাকে কাছে টেনে শান্ত করে। আমি বলি মা কই কাকি! বাড়ির এই অবস্থা কেন! আর আব্বুই বা কই!? কাকি আমাকে শান্ত হতে বলে। আমি কাকি কে জানায় মায়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি আমি, আমার মা কোথায়?! কাকি আমাকে বলে শান্ত হতে। রাত জেগে বাড়ি ফিরছি তাই এই অবস্থা। আয় আমার বাড়িতে, ফ্রেশ হয়ে কিছু নাস্তা করে নে। কাজলী কাকি কমল-কীরণের মা। কমল-কীরণ খবর দিয়েছে বলেই এসেছে। আমাকে অনেক আদর করে কাকি। মা ছাড়া কাকিই আমাকে মায়ের মতো আদর করে। কাকি আমাকে শান্ত করে তার বাড়ি নিয়ে গিয়ে, নাস্তায় বসায়। তারপর বলে মাথায় খুব বেশি ব্যাথা হয় কিনা!? ঠিকমতো ওষুধ খাইনা নাকি আমি! আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তারের কথা শুনে এবার আমার কিছুটা খেয়াল হলো, আমি ৬ মাস আগেও মানসিক হাসপাতালে ছিলাম। এবার আরো অনেককিছু মনে আসছে। মাথা ব্যাথাও বাড়ছে। কিন্তু যে কথাগুলো মনে আসছে তার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না।

আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগের কথা। লতা হারিয়ে যায় পদ্মালের জীবন থেকে। বাবা-মা অল্প বয়সে বিয়ে দিতে অসম্মতি জানানোর জন্য লতাকে আর নিজের করে নিতে পারিনি। বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে পদ্মাল কখনো কিছু করতে পারে না। তাই এখানেও মুখ বুজে সব মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু মন থেকে মানতে পারে না কখনোই। ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পরি। লতাকে না পাওয়ার জন্য বাবা-মাকে, বিশেষ করে বাবাকে ভিলেন মনে হতে থাকে । সবার সাথে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে করি। একদিন বাবার উপর রেগে গিয়ে কাঁটা চামচ ঢুকিয়ে দেয় বাবার কাঁধে। বাবার চিৎকারে মা এসে চিৎকারে করে উঠে পদ্মালকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় আমি। এবার রাগে মাকেও সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেই। এই সর্বশেষ স্মৃতি মনে পড়ে আমার। সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, কাকি হইতো ধরে নিয়েছিলেন তাই ব্যাথা পাইনি কোথাও।

জ্ঞান ফিরলে গনি ডাক্তারকে দেখতে পেলাম। এবার সব হিসেব মিলে যাচ্ছে। গ্রামে ঢুকে সবার তাকানো, কমল-কীরণের কাছে না আসা, আর ফুল বাগানের বেহাল দশা সবই মিলে গেলো। কিন্তু কাল যে মায়ের সাথে ফোনে কথা বললাম! সেটা!? আমি তো প্রতিদিনই প্রায় মায়ের সাথে কথা বলতাম! ডাক্তার চলে গেলে কাকিকে জীজ্ঞেস করি, কাকি এড়িয়ে যেতে চাইলো। আমি জোর করলে বলে আমার মা এখনো বেঁচে আছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, তাহলে মা কোথায়?! কাকি বলে আমিই তোর মা। আমি কিছু বুঝিলাম না। পাগলের মতো হা করে বসে থাকলাম। তারপর কাকি আমাকে গল্পের বই আর একটা ডাক্তারের ফাইলে ধরিয়ে দিয়ে গেলো। আমি প্রথমে ফাইলটা নিয়ে দেখলাম,

নাম: কলরব হোসাইন

ডিজিজ: Dissociative identity disorder (DID)

এবার গল্পের বইটা হাতে নিয়ে দেখি লেখা “পদ্মাল” নাম। পড়তে শুরু করলাম। গল্পের সবকিছুই আমার পরিচিত এমনকি নামটাও আমার নামের নামই! এই যে লতা! আবার বাবা-মা কে আঘাত করা! আহ, এখানে তো আমার কাহিনি তুলে ধরেছে।

এবার আমি কাকির কাছে গিয়ে বলি আমার কাহিনি নিয়ে কে বই লিখেছে!? কাকি এবার রেগে গিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে বলে, “হতচ্ছাড়া বলদ! এটা তোর কাহিনি না, তুই ওই কাহিনিতে ঢুকে গেছিস। আর আমি তোর কাকি না, তোর মা। আর কতো জ্বালবি আমায়! একটু শান্তি দে এবার।” তাই বলে কাকি মুখ লুকিয়ে  কান্না শুরু করে দেয়।

আমি আবারো আহাম্মকের মতো তার কান্না দেখতে থাকলাম, আর ভাবতে থাকলাম ইনি আমার কাকি নাকি মা? আর আমার নাম তবে কলরব? আমি তবে DID এর রোগী?

Prize Owner Story 1st
Story1

প্যাপাইরাসের অনলাইন সংস্করণের ৪র্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় গল্প লিখাতে প্রথম
মো আশিকুর রহমান হৃদয়