জুন-জুলাই মাসের এই বৃষ্টির কোনো মা বাপ নাই। আসবে, ভিজবে, আর চলে যাবে। একটু আগে এক দফা ভিজিয়ে গেছে; মোটামোটি ভাবে কাকভেজা। ফুলার রোড থেকে হাকিম চত্বর, পাঁচ মিনিটের এই পথটুকু আসতেই সর্বনাশ। জীবন-মরণ দৌঁড় দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ভিজে একেবারে নেতা নেতা অবস্থা। নতুন কেনা হেয়ার জেলটা নাকি পানিতেও কিছু হবেনা। দোকানদার ব্যাটা পুরাই গুলগল্প মারছে। মাথা থেকে জেল গড়িয়ে সারা মুখ আঠা আঠা হয়ে গেছে। শার্টের হাতায় কোণ রকমে মুখ মুছে দাঁড়িয়েছি মাত্র, ঠিক এই সময়…পেছন থেকে শুনতে পেলাম চেনা কন্ঠ,
“এই গাধা…!! এখানে কি করিস?”
ঘাড় ঘুড়িয়ে খুঁজতে হলো না। অনুপমা সামনে এসে দাঁড়ালো। কাঁধে ব্যাগ,লাল একটা ছাতা হাতে।
“কিছু করি না। বাসায় যাব। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তুই এখানে কেন?”
“আমি এখান কেন মানে? আমার ক্যাম্পাস, আমার হল। এইটা তো আমার এলাকা। আমি ‘তোমার’ মত লুতুপুতু টাইপ না। হলে থাকি, একটা ভাব আছে।“
“হল তো আমারও আছে, সল্লিমুল্লাহ মুসলিম হল।“
“ও, তাই না কি!”
“আর বাসায় থাকলে কেউ লুতুপুতু হয়ে যায় না কি? কই শিখছিস এসব কথা?”
“হয় না মানে! যারা বাসায় থাকে তারা এক একটা বিশাল লুতুপুতু! আর তুই ত আরো এক কাঠি উপরে।
গাধা লুতুপুতু…!!”
মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো অনুপমার কথায়। ঠোঁটাকাটা হলেও একটা কথা ছিলো। এই মেয়ের বুঝি ঠোঁটই নাই। উস্কানিমূলক সমালোচনা জিনিসটা অনুপমার চেয়ে ভালো আমাদের ক্লাসে কেউ করতে পারে না। ওর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। কথা দিয়ে জেতার সম্ভবনা ক্ষীণ। এর চেয়ে কেটে পরার ধান্ধা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
“শোন, মেলা বয়ান দিয়েছিস। তুই তোর ভাব নিয়ে তোর এলাকায় ঘুরে বেড়া। আর লুতুপুতুদের লিস্ট বানা। আমি যাই।“
“কেন? সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলে আম্মু কি বকা দিবে?”
“শুধু বকা দিবে না। কানে ধরে এক পায়ে দাঁড় করিয়েও রাখতে পারে!“
“আচ্ছা গাধা, তুই যা তাহলে! বাসায় গিয়ে হরলিক্স খা!!”
“আর একটা কথা বলি, শোন। রাস্তাঘাটে গাধা বলে ডাকাডাকি করবি না। শুনলাম,সাদা পোশাকে ডিবির লোকজন চলাফেরা করে। যে কোনো দিয়ে তোকে পিকআপে তুলে নিতে পারে। দেশে ইভটিজার আর অ্যাডামটিজার সবার জন্য একই আইন। গাধা বলে টি্জ করে যে কোন দিন কেস খেয়ে যেতে পারিস। সাবধান!”
আমার কথা শুনে অনুপমা হেসে ফেললো। ফাজিল এই মেয়েটির হাসি সুন্দর। চোখ বন্ধ করে দশে আট দেওয়া যায়। এমনিতে সারাদিনই হাসে। আমরা অবশ্য দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। ও যদি একবার বোঝে, ওর মুখের দিকে কেউ তাকিয়ে আছে তাহলেই সে শেষ। ও এইটারে তিল থেকে তাল বানাবে। সেই তাল পাকিয়ে পিঠা হবে। আর অনুপমা সেই পিঠা ক্লাসের সবাইকে ডেকে ডেকে খাওয়াবে। এতোটা ঝুঁকি নেয়া যায় না।
ওকে বিদায় দিয়ে বাড়ির পথ ধরি। ঠিক সন্ধার আগে আগে রোদ নিভে আসা বৃষ্টিস্নাত ঢাকা। এই শহরের লোকগুলো কি জানে বৃষ্টি শেষেরও একটা ঘ্রাণ আছে? কাছে টানার ঘ্রাণ। সবাই জানেনা মনে হয়। অবশ্য সবাইকে সব কিছু জানতে হবে, এমনও তো না। অনুপমা যেমন জানলো না যে আজ ওর হাসি আমার বুকে মাঝারি মানের একটা ধাক্কা দিয়েছে। ভাগ্য ভালো! ধাক্কাটা মাঝারি মানের। বড়সড় হলে বিপদ ছিল। নির্ঘাত মাথা কাটা যেত। এই মেয়ের সাথে আবেগময় কিছু… ভাবাই যায় না।
অনুপমার ব্যাপারে একটু বলি। ওর বাবা-মা মনে হয় শখ করে তাঁদের মেয়ের জন্য শান্ত, নম্র, কোমল ধরনের একটা নাম রেখেছিলো। মেয়ে লক্ষ্মী হবে এই আশায়। সেই আসার চিনিতে নীলফামারীর ডোমারের (বালুর জন্য বিখ্যাত) বালু পড়েছে। এই মেয়ে মোটেও লক্ষ্মী মেয়ে হয়নি। ক্লাসের বেঞ্চ গুলো যে বসার জন্য, অনুপমার তা মনে হয় না। যতক্ষণ স্যার-ম্যাডাম থাকে ততক্ষণ ও যেন খুব কষ্ট করে বসে থাকে। বাকি সময়টুকু যেন উড়ে উড়ে বেড়ায়। আবীরের বড় বড় চোখ দেখে সেটা দিয়ে টেবিল টেনিস খেলতে ইচ্ছে করে; কিংবা ‘পার্লার খাতে’ ইরার প্রতি মাসে কত যায়?- এই সব ব্যাপারে অনুপমার একের পর এক মূল্যবান আলোচনা (উস্কানীমূলক সমালোচনা) করে বেড়ায়। অনুপমার এই ‘মূল্যবান আলোচনায়’ সবাই মজাও পায়, আবার ভয়ও পায়। আমিও পাই। নিরাপদ পন্থা হিসেবে ওর সাথে সন্ধিনীতি মেনে চলি। কবে যেন একবার বেশ সাহসী হয়ে উঠেছিলাম। অনুপমাকে একটা খোঁচা মারতে গিয়ে বললাম, “অনুপমা, তুই এক কাজ কর। ‘ঢাকা মহানগর মহিলা ফাজিল সমিতির’ ব্যানারে চেয়ারপার্সন পদের জন্য ইলেকশন কর। আমার বিশ্বাস তুই বিপুল ভোটে, রীতিমত রেকর্ড করে জিতবি।“
“তাই নাকি? আমার মার্কা কি হবে রে? গাধা মার্কা নিলে কেমন হয়? মনে কর, তোর একটা পার্সপোর্ট সাইজ ছবি মার্কা হিসেবে থাকলো। আর তার নিচে বড় বড় করে লিখে দিলাম, অনুপমাকে গাধা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আইডিয়া কেমন? অস্থির না?”
নগদে বোল্ড হয়ে আমার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। এই মেয়ে আমাকে গাধা যে কেন বলে বুঝি না। যাই হোক, ওর নিজের কিন্তু সুন্দর একটা নাম আছে। ক্লাসের সবাই অনুপমাকে ‘চড়ুই পাখি’ বলে ডাকে, ওর তিড়িং-বিড়িং ছট-ফট স্বভাবের জন্য। আমি অবশ্য এই নামকরণের ঘোর বিরোধী। ‘খুন্তিকুমারী’ কিংবা ‘কাঠবিষনী’ টাইপ নাম ওর সাথে ভালো যায়। কিন্তু ওই যে ওর হাসি! ওই হাসিটাই যত গোলমাল পাকায়!! আমার মত অনেকেই মনে হয় ধাক্কা খায়। ওর ‘চড়ুই পাখি’ নামটাই ভাল।
অনুপমা যে ওর আরেকটা স্বরূপ নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে, সেটা আমি একদমই জানতাম না। জানলাম অনেক পরে। আম্মা তখন বারডেমে ভর্তি। সন্ধ্যায় অপারেশন। দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। আমি নিজেই দিতে পারতাম। ঝামেলা বাঁধালো জন্ডিস। দুই মাসের আগে নাকি রক্ত দেওয়া যায় না, কী সব হাবিজাবি! এক এক করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলাম রক্তের জন্য। কিন্তু সেবার যেন দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ঢাকা শহরে এ পজিটিভ রক্তের আকাল পড়লো। কাউকে পেলাম না। গাধা বলেই ম্যানেজ করতে পারলাম না মনে হয়। শেষে বিকেলের দিকে অনুপমাকে ফোন দিলাম।
“অনুপমা, তুই কি হলে?”
“হু, হলে। ক্যান কী হইছে? তুই এইদিকে নাকি?”
“নাহ। এই দিকে ঠিক না, তবে কাছাকাছি; শাহবাগে।“
“শাহবাগে কী করিস? শিশু পার্কে দোলনায় দোল খাচ্ছিস?”
“আরে নাহ। আমার আম্মা বারডেমে অ্যাডমিট। দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। তুই একটু দেখিসতো তোদের হলে ‘এ পজেটিভ’ কেউ আছে নাকি?”
“আরে আমারই তো এ পজিটিভ ব্লাড়। আমিই চলে আসবো না হয়। কখন আসতে হবে, বল?”
“ধুর্! তুই কী রক্ত দিবি? চানখারপুলে জোরে বাতাস দিলে যে কি না নিউ মার্কেটে গিয়ে পরিস। তুই আগে দুধ-ডিম-কলা খা। নেক্সট টাইম আমার একটা কিছু হোক। তখন আমার জন্য দিস না হয়।“
“চড় খাবি, গাধা। বেশি বুঝিস না। আমি ছয়টার দিকে আসতেছি বারডেমে।“ ওর সাথে বরাবরের মত এবারও কথা বাড়ানো গেলো না। আমি ওকে রিজার্ভ হিসেবে রেখে, আরো কিছু জায়গায় ফোন দিতে থাকলাম।
অনুপমা আসলো ছয়টার একটু পরে। ব্লাড গ্রুপ ম্যাচিং ও অন্যান্য হাবিজাবি কাজ সারতে একটা রুমে নিয়ে গেলো। এখানে রক্ত নেয় মনে হয়। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নাম-ধাম, সাত সতেরো জিজ্ঞেস করার ফাকে টুক করে অনুপমার বাম হাতে কব্জি সুইয়ের মত কী জানি একটা ফুটিয়ে দিলো। আমি অনুপমার মুখের দিকে তাকালাম একবার; ব্যাথা পেলে-ওকে দেখতে কেমন লাগে দেখবো বলে। তাকিয়ে কিছুই বুঝলাম না। নো ফিলিংস টাইপ একটা ভাব। আরে ধুর্! এই মেয়ের চোখ-মুখে হিব্রু ভাষায় ‘গরু রচনা’ লেখা। কিচ্ছু বোঝা যায় না।
আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে। ও স্বভাবমত মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টের সাথে দুনিয়ার গল্প শুরু করেছে। করতে থাকুক গল্প। আম্মার কেবিনের দিকে যাই।
মিনিট চল্লিশেক পরে ফিরে আসলাম। অনুপমার রক্ত দেয়া প্রায় শেষের দিকে। রক্তের ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে খারাপই লাগলো। এমনি ছোট-খাটো মানুষ। এত গুলো রক্ত! . কিন্তু করারই বা কী ছিলো? কাউকে তো পেলাম না। কিছুক্ষণ পর মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট চলে গেলো। যাওয়ার আগে অনুপমাকে আধা ঘন্টা বিশ্রাম নিতে বললো।
অনুপমা বিছানায় শুয়ে। উঠে বসতে চায়। আমাকে দেখে লজ্জা-টজ্জা পাচ্ছে নাকি?
“ওই, উঠিস ক্যান? শুয়ে থাক। খাবি কিছু? কেমন লাগছে এখন?”
“আরে ধুর! এক ঘন্টা ধরে শুয়ে আছি। আর রক্ত নিলো যে লোক এক্কেবারে ফাউল! খুবই বোরিং। আর তুই কোথায় ছিলি গাধা?”
“ছিলাম আশে পাশেই। দেখলাম বুইড়া ডাক্তারের। সাথে আলাপ জমাইছিস, তাই আর বিরক্ত করিনি।“
“যা ভাগ। চড় খাবি।“
অনুপমার কথা শুনে
আমি হাসি। ওর কাছ থেকে
আমার মেলা চড় পাওনা আছে। মনে করে কোনো
একদিন। খেয়ে নিতে
হবে। আপাতত সুদে-আসলে বাড়তে থাকুক। ঘরটায় শুধু অনুপমা আর আমি। সবুজ একটা টিপ ওর কপালে। আমি খেয়ালই করিনি। এই মাত্র দেখলাম। ওর দিকে কি একবার তাকাবো? ধরা খেয়ে যাব না তো? অনুপমা কি লজ্জা পাচ্ছে,
নাকি আমি? আমিই লজ্জা পাচ্ছি মনে হয়। ইতিমধ্যে কথা বলতে গিয়ে বেশ কয় বার hang খাইছি।
নাহ লজ্জা পাওয়া
যাবে না। অনুপমা বুঝে
ফেললে খেলা শেষ। কাল সকালে ক্লাসে
গিয়ে আমাকে মুরগি বানাবে। সেই মুরগি ডিম পারবে। আর অনুপমা সেই ডিম ভাজি করে সবাইকে খেতে ডাকবে। স্বাভাবিক থাকার যুদ্ধে নামলাম। আমি। মুখের মানচিত্র যথাসাধ্য সহজ রাখার চেষ্টা করলাম।
“তোর হলের গেট
কয়টায় বন্ধ করবে?”
“এইতো এগারোটায়। আমার উঠতে হবে। এখন।“
“কী বলিস?
তোকে যে মিনিমাম আধাঘন্টা শুয়ে থাকতে বললো।“
“ওই বুড়া বেটা
কী বুঝে? আমি ঠিক আছি। একটু আগে অবশ্য ঘুম ঘুম লাগছিলো। কিন্তু এখন ঠিক আছি।“
অনুপমা উঠে বসতে
চায়। ও বাম হাতের
কজিতে ভর দিয়ে উঠতে চাইলো।
ঠিক এই সময়টায়
হঠাৎ করেই আমাদের দুই জনকে অবাক করে দিয়ে অনুপমার বাম হাত থেকে অনেকটা রক্ত গড়িয়ে
পড়লো। শুরুতে আমি
কিছুই বুঝিনি। একটু পরে বুঝলাম, রক্ত দেয়ার পর অনুপমাকে কিছুক্ষণ বামহাতটা ভাজ করে রাখতে
বলা হয়েছিলো। গল্পের তালে, ওর আর সেটা মনে নেই। ফলে যা হবার তাই হয়েছে, রক্ত আর বন্ধ হওয়ার সুযোগ পায়নি। ও হাতের ওই জায়গাটা থেকে তুলাটুকু সরাতেই, মোটামুটি ভয়াবহ এক দৃশ্যের অবতারণা। প্রথম কয়েক সেকেন্ড কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে ছুটে গিয়ে ওর বাম হাতের ওই জায়গাটা
চেপে ধরলাম। ততক্ষণে অনুপমা
চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আমি চিৎকার
করে কাউকে ডাকলাম কি না জানি না। আমি শুধু টের পাচ্ছিলাম উষ্ণ একটা রক্তের স্রোতকে আমি কোনোভাবেই থামাতে
পারছিলাম না।
কতক্ষণ ওভাবে
ছিলাম জানি না। মনে হচ্ছিলো
আমার জীবনের দীর্ঘতম দেড় মিনিট পার করলাম। দেড় মিনিটের মাথায় মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট আসলো। আমি ওর হাত ছেড়ে, রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। বের হওয়ার সময় ওর মুখের দিকে একবারও
তাকাইনি। আসলে তাকানোর
সাহস পাইনি। তখনও কি ওর
চোখ বন্ধ ছিলো।
সেই রাতে অনুপমার
আর হলে ফেরা হলো না। আম্মার জন্য রাখা কেবিনটায় অনুপমার জায়গা হলো। আম্মা তখনও পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার ইউনিটে। অনুপমার কেবিনের বাইরে আমি সারা রাত
ডিউটি দিলাম।
জুন মাসের এলোমেলো
বৃষ্টি ছিলো প্রায় সারা রাত ধরেই। সকাল হওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম। সকাল বেলা যেখান থেকে পারি, বেলি ফুল খুঁজে আনতে হবে, অনুপমার জন্য।
বর্ষাকাল মানেই
একটা প্রেম প্রেম ব্যাপার। থাকবে। এই কথা আমি
যেমন জানি, শাহবাগের ফুলওয়ালা মামারা আমার চাইতেও ভালো
জানে। বেলি ফুল খুঁজতে
আমাকে খুব বেশি একটা দৌড়াতে হলো না। নয়টার আগে শাহবাগ মোড়েই বেলি ফুল পেলাম। দশ টাকা বেশি দিয়ে দুইটা বেলিফুলের মালা কিনে পকেটে ভরলাম। এততক্ষণে অনুপমার ঘুম ভেঙ্গেছে বোধ
হয়। কতটা শৈল্পিক
ভাবে ওকে ফুলগুলো দিবো, ওর হিব্রু ভাষা আঁকানো
চেহারাটা কেমন হবে- ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে বারডেমের দিকে হাঁটা
দিই।।
গতরাতের বৃষ্টিস্নাত
ঢাকা। আর চার পাশ
ঘিরে থাকা ভেজা বাতাস। কোন উজবুক যেন
বলেছিল, “এই শহরে নাকি ভালোবাসা নাই! সবই ঢং!!” উজবুকটারে পাইলে, মিরপুর
চিড়িয়াখানায় নির্বাসন দিতাম। এই যে ভালোবাসা আছে। বেলি ফুল আছে। বুকের মাঝে ক্ষণে ক্ষণে একটা ধাক্কা আছে। আর ধাক্কাটা অল্প অল্প করে বেপরোয়া হচ্ছে। আচ্ছা আমার কি ভয় পাওয়া উচিত? ফাজিল মেয়েটা যদি মুখের উপর না বলে দেয়। এই মেয়ে যেমন। আরে ধুরু। বললে বলুক। কত দিন আর এইভাবে থাকা যায়?
অনুপমার ঘুম
ভেঙ্গেছে। হাসপাতালে ফিরে
দেখি, বিছানায় বসা। একটু লজ্জা লজ্জা ভাব। এর আগে কখনো হাসপালে থাকেনি মনে হয়। পরে কোনো এক সময় ওর অভিজ্ঞতাটা শুনে নিতে হবে। আমার দুলাভাই ওর বিছানার পাশে চেয়ারটায়
বসা। দুলাভাই দেখি
হাত-টাত নাড়িয়ে। সীমাহীন ভাব নিয়ে কথা-বার্তা বলছে। আমার বোনটাও না আমার মতই হালকা গাধা আছে। দুলাভাই যে মেয়ে দেখলেই হিরো হয়ে যাই’ এই জাতীয় সমস্যায় প্রবলভাবে। আক্রান্ত, আমার বোন এই খবরটা এক
বারেই জানে না।। ব্যাপার না। কোনও এক শুভক্ষণে আপার কানে দিয়ে দিবো। আপাতত দুলাভাই এর দিকে কড়া একটা Look দিলাম। যার মানে, “এই মিয়া, বান্ধবীটা আমার। আপনি বিদায় হন। মেলা সার্কাস করছেন।“
দুলাভাই ঠিক বুঝলো
কি না জানিনা। কিন্তু আজকের
দিনটা আমার। সেটা আরেকবার
বুঝলাম। দুলাভাই দশ
মিনিটের মধ্যে অফিসের কথা বলে বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে বেশ একটা ইঙ্গিতপূর্ণ স্বরে বলে গেলেন, “ভালোভাবে দেখে রাখিস।“
ভালোভাবে দেখে
তো রাখতেই হবে। উনি চলে যাওয়ার
পর অত্র এলাকায় আমিই একমাত্র মুরুব্বি। একটা দায়িত্ব আছে ! চোখের
কোণা দিয়ে অনুপমার দিকে একটা চোরা দৃষ্টি দিলাম। ক্যাডেট কলেজে পাক্ষিক পরীক্ষার দুর্যোগের সময়টাতে যখন চার
পাশে হাহাকার রব উঠতো তখন এই ‘চোরা দৃষ্টি
কত বার যে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বহুদিন প্রাকটিস না থাকলে খুব অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও ইয়র্কার
বলকে ফুলটস ভেবে বসে এবং সে বলে আউট হয়। আমিও হলাম। অনুপমার চোখে
চোখ পড়ে গেলো। খুব বাজেভাবে
ধরা খেলাম এবং দুঃখজনকভাবে চোখ সরিয়ে নিতে পারলাম না। গতরাতের ধকল ওর উপর দিয়ে ভালোই গেছে। এখনই উড়াল দেয়ার সেই ভাবটা আর নেই। এমনিতেই ছোটখাটো মানুষ। তার উপর লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জা। পাওয়ায় ওকে আরও ছোট্ট দেখাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমাকেই কথা শুরু করতে হলো।
“কী রে,
কী খবর এখন? কেমন লাগছে?”
“এইতো,
এখন ভাল আছি।“ এইটুকু বলতে গিয়েই মনে হয় অনুপমা লজ্জায়
মারা যাচ্ছে, এমন অবস্থা। আমি ভাবলাম, যাক! মেলা দিন পর পাখি ফাঁদে পড়েছে। এত দিন ও আমাদের যা পেইন দিয়েছে, আজকে সেই হিসাবটা ক্লিয়ার করতে হবে।
“কাল রাতে তুই
যে কাহিনী করলি! আমি তো ভাবলাম. এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে
করে তোকে সিঙ্গাপুর-টিঙ্গাপুর পাঠাতে হবে।”
“তোদের খুব ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি, তাই না?” মাথা নিচু করে অনুপমা উত্তর দেয়।
“তোদের আবার কী রে? শুধু আমাকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিস। সারারাত ঘুম বিসর্জন দিলাম। বৃহত্তর রমনা এলাকার মশক সমাজ ‘অবাধ রক্তপান দিবস’ পালন করেছে গত রাতে। এদের আগামী দুই দিন কিছু খেতে হবে না।”
“কী বলিস? তুই সারারাত জেগে ছিলি?” বালিকার দৃষ্টিতে লজ্জা মাখানো বিস্ময়।
” সারারাত তোর জন্য জেগে ছিলাম, এমনটা ভাবার দরকার নেই। সুমি আর তিশার সাথে ফোনে একটা শিফট ছিল। বারটা থেকে দুইটা সুমি, এরপর তিশা।”
অনুপমা হাসে। কাল রাতের পর এই প্রথম হাসলো ও। আবার সেই পরিচিত ধাক্কাটা! বলা যায়, এবার বেশ জোরেসোরেই খেলাম।
“তোর সাথে আবার কে কথা বলে? আমি তো জানতাম, ঢাকা শহরে আমিই একমাত্র মেয়ে যে তোকে একটু পাত্তা দেয়।”
” অফ যাও! আমি কি ঢেউটিন নাকি? খালি একটা ডাক দিলে, আমার বান্ধুবীরা সব স্রোতের মত আসবে। শাহবাগের রাস্তা ব্লক করা আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না। ‘উইমেন পাওয়ার’ হেভি কড়া জিনিস।” অনুপমা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হাসে।
অনেকটা সময় নিয়ে আমি বাতাসে ওর হাসির রেশ খুঁজি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মনে হয়, এই ফাজিল মেয়েটার জন্য সার্কাসের ভাঁড় হতে আমার একদমই খারাপ লাগবে না। অনুপমার হাসি মুখটা বার বার দেখার একটা নেশা আমাকে পেয়ে বসে।
এগারটার দিকে আম্মাকে কেবিনে আনা হয়। খুব বড় কোনো অপারেশন ছিলো না। আম্মা তাই অনেকটাই স্বাভাবিক। অনুপমা তখন হলে ফিরবে। আম্মার সাথে টুকটাক কথা বলার পর আমি ওকে হলে নামিয়ে দিতে যাই।
শাহবাগ থেকে রিক্সা নিলাম। রিক্সায় বসে হঠাৎ করে কাউকে খুব কাছের মনে হওয়ার একটা বেপরোয়া অনুভুতিকে আমি খুব কষ্টে সামলাচ্ছি। রিক্সায় পুরো সময় টুকুতে আমাদের কোন কথা হল না। অনুপমাকে খুব স্বাভাবিক দেখে, আমিও কেন জানি কিছু বলতে পারলাম না। এক ইঞ্চিরও কম দূরত্বে বসে থাকা মানুষটার ভিতরের ঝড় কি এই মেয়ে আকটুও বুঝতে পারছে না?
শাহবাগ থেকে ওর হল খুব বেশি দূরের পথ না। হলের সামনে এসে রিক্সা ছেড়ে দিলাম। হাতে কিন্তু তখনও সময় ছিল। চাইলেই কিছুটা সময় আটকে রেখে ওকে আমি আমার বেলি ফুলের গল্পটা শোনাতে পারতাম। কেন জানি গল্পটা আর করা হল না, বেলি ফুল গুলো দেওয়া হল না। ওকে খুব সাধারন ভাবে বিদায় দিয়ে আমি বাসায় ফিরি। ফেরার পথে আমার সকালে কেনা বেলি ফুলগুলোর কথা মনে হচ্ছিলো। তের নম্বর বাসের অস্বাভাবিক ভিড় আর ঠেলাঠেলিকে মোটামুটিভাবে অগ্রাহ্য করে আমি পকেট থেকে বেলিফুলের মালা দুটো বের করলাম। শাহবাগ থেকে মোহাম্মাদপুর পর্যন্ত বাকি পথটুকুতে লোকজন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সেদিন আমি বেলি ফুলের মালা গলায় পরে বাসায় ফিরলাম।
এর পরের কয়টা দিন আমার আর ক্লাসে যাওয়া হলো না। কেন জানি মনে হচ্ছিলো, অনুপমার সামনে দাড়ালে ও সব ব্যাপার বুঝে যাবে। মানুষ প্রেমে পড়বে এবং আমার মতো যারা নারী নিষিদ্ধ একটা পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা চাইলে দিনে দশবারও পড়তে পারে। আমি এর আগে আর কার প্রেমে পড়েছিলাম তার একটা লিস্ট বানাতে থাকি। লিস্টে সবার আগে থাকে বাংলার লাকী ম্যাডাম। আর একেবারে সবার শেষে এসে অনুপমা।
এর মধ্যে অনুপমা ফোন করেছে। অন্য বন্ধুরাও ফোন করেছে। কারও ফোনই আমার আর ধরা হয়ে ওঠেনি। আমি প্রায় সারাদিনই ঘুমাই। খুব একঘেয়ে লাগলে মাঝে মাঝে ছাদে যাই। আকাশ দেখি। জুন মাসের ওই সময়টায় কেন জানি সেদিনের পর অনেকদিন আর বৃষ্টি হলো না।
আমার শামুকদশা ভালোই চলছিল। এর মধ্যে একদিন একটা মেইল আসে। বাইরের একটা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করেছিলাম অনেক আগে। ওরা মেইল পাঠিয়েছে। মেইলের সাথে ওদের কনফার্মেশন লেটার। মেইলের মানে যা বুঝলাম, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, ওরা আমার ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করবে। হেনতেন হাবিজাবি। আমি যে আসলেই বাইরে চলে যাব, ব্যাপারটা তখনও মনে হয় নি। এরা এই ধরনের মেইল সবাইকে পাঠায়। এই সব সিরিয়াসলি নেওয়ার মতো কোন ব্যাপার না। কিন্তু খুব আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম মেইলটা পাওয়ার পর অনুপমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। বিকেল ৪টার দিকে মেইলটা পেয়েছি। তারপর কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলাম। নিজের সাথে এতদিন ধরে আমি যে নাটকটা করে এসেছি তার শেষ অংকে এসে নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগল। সাড়ে ছয়টার পর থেকে ঢাকার আকাশের দক্ষিণ দিকটায় কিছু মেঘের আনাগোনা দেখলাম। আমি একটা বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। ঘোর লাগা বৃষ্টি। আজ ঢাকা শহরে বান ডাকুক। আমি তাই চাই।
সন্ধ্যা সাতটা থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি আমার জীবনে এই রকম বৃষ্টি খুব কমই দেখেছি। এই বৃষ্টি কে হিংস্র বললে খুব একটা ভুল হবে না। বড় বড় ফোটার লাগামহীন বৃষ্টি। সেই সাথে দলছুট বাতাস। বেশির ভাগ সময় বৃষ্টির সাথে বাতাসের দিকের একটা সম্পর্ক থাকে। আজকে সেটা নেই। বাতাস পারলে মোটামুটিভাবে সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যায় তার সাথে এমন পরিকল্পনা।
আমি বাসা থেকে বের হলাম। ওজনটা একটু বেশি বলেই মনে হয় বাতাস আমাকে উড়াতে পারল না। কিন্তু চেষ্টা অব্যাহত থাকলো। চারপাশ খুব কষ্ট করে দেখতে হচ্ছে। বৃষ্টির ফোটার জন্য চোখ খোলা রাখা দায় এমন অবস্থা। কপাল ভাল ছিল, এর মধ্যে একটা রিকশাও পেয়ে গেলাম। বৃষ্টি হলে রিকশা ভাড়া এমনিতেই দ্বিগুন হয়ে যায়, আমি তিনগুন ভাড়া দিয়ে একটা রিকশা নিলাম। সাত মসজিদ রোড আজ এমনিতেই ফাঁকা। এই রকম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আজকে আর কেউ বের হবে না। বৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে আমার কাঁপুনি। শাহবাগের কাছাকাছি এসে ফুলের দোকানগুলোতে দাঁড়ালাম। অনেক খুঁজেও বেলি ফুল পেলাম না। অথচ আজকে আমার বেলি ফুল খুব দরকার। খুউব।
অনুপমার হলের সামনে এসে ওকে ফোন দিলাম। অনুপমা ফোন ধরে না। কতবার ওকে ফোন করেছি জানি না। মনে হয় তেইশতম বারে ফোন ধরলো।
“হ্যালো অনুপমা, তুই কি হলে?”
” তুই কোথা থেকে? এতদিন আমার ফোন ধরিসনি কেন?”
“সব বলছি, তুই একটু বাইরে আয়।”
“বাইরে আসবো মানে? বাইরে কী অবস্থা দেখেছিস? এর মধ্যে কীভাবে আসবো? হলের সামনে পানি জমে গেছে।”
“জানি না কীভাবে আসবি। কিন্তু প্লিজ আয়। খুব দরকার। “
অনুপম ফোন রেখে দেয়। আমি পৃথিবীর সব উত্তেজনা বুকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছি। কোনো কিছুই আমার মাথায় নেই। ও আসলে কি বলবো, তাও জানি না, শুধু জানি, আজকে আমাকে এই নাটকের শেষটা দেখতে হবে। চারপাশ কাঁপন তুলে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু এর মাঝেও অনুপমার জন্য আমার বুকে যে কাঁপনটুকু সেটুকু আমি ঠিকই বুঝতে পারছি ।
মিনিট দশেক পরে দেখলাম দূরে ছাতা মাথায় পানি ভেঙ্গে অনুপমা হল গেট থেকে বের হচ্ছে। সাড়ে আটটার মত বাজে। চারপাশে অন্ধকার। বৃষ্টি যেন বেগ বাড়িয়ে দিলো। সেই সাথে বাতাস। এই মেয়ের ছাতা না উড়ে যায় আজকে !
অনুপমা সামনে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হলো, পৃথিবীটা হঠাৎ করেই শব্দহীন হয়ে গেছে। আশেপাশের কোনো শব্দই আমার কানে পৌঁছায় না। কতক্ষণ ওভাবে ছিলাম জানি না। আমার হাতে সময় খুবই কম। আমি শেষ পর্যন্ত বলে ফেলি,
“অনুপমা, আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবি?”
অনুপমা কিছু বলে না।
আমি আবার বলি,”চল, বৃষ্টিতে ভিজি।”
কথাগুলো বলেছিলাম মাটির দিকে তাকিয়ে, ওর মুখের দিকে তাকানো হয় নি।
অনুপমা মুখ নিচু করে দাঁড়িয়েছিলো। একটা সময় ও বলে ওঠে,”বাসায় যা, মেলা ভিজেছিস।”
ওর কথায় কেন জানি আমার কোনো কিছু মনে হলো না। অনুভূতি মাঝে মাঝে মরে যায়। সে রাতে আমার অনুভূতির শেষ বিন্দুটুকুও যেন মরে গেলো। সারা পৃথিবীর নির্লিপ্ততা তখন আমার স্বরে।
“চলে যাবো?”
“হুম,চলে যাবি। “
আমি আর পিছনে ফিরে তাকাইনি। সে সুযোগ ও আমার ছিল না বোধ হয়। এলোমেলো পায়ে অনেকটা পথ হেঁটে এসে বাংলা মোটরের কাছে এসে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি সেই আগের মতই বিরামহীন ভাবে তার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে গেছে অনেক আগেই। নেহাৎ প্রয়োজনে বের হওয়া গাড়িগুলো সেই পানিতে স্রোত তুলে চলে যায়। কোথায় যে যাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় নাটকের বোধ হয় তখনও কিছু বাকি ছিলো। হঠাৎ ফোনে এসএমএস টোনে আমার এলোমেলো হাঁটায় ছেদ পড়ে। নেহাৎ নির্লিপ্ততায় এসএমএস টা খুলবো না ভেবে ✆ ফোন পকেটে রেখে দিলাম। এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে আমার ফোন যায় যায় অবস্থা। মাঝে মাঝে ‘কু’ শোনে । আমি মনে হয় সে রাতে ‘সু’ ডাক শুনেছিলাম। কি মনে করে ম্যাসেজ টা পড়ে ফেললাম। কয়েকটা লাইনের এলোমেলো এক বার্তা ছিলো সেখানে।
“তুই একটানা নয় দিন আমার ফোন ধরিসনি। ক্লাসে সারাটা সময় দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তুই ক্লাসেও আসিস নি। আর আজকে হঠাৎ এসে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলি! এতো সাহস কেন তোর? তোকে এই শাস্তিটুকু দিয়ে হলে ফিরে অনেক কেঁদেছি। অনেক।”
এসএমএস টা পড়া শেষ করতেই মোবাইল ফোনটা বৃষ্টির পানি পড়ে বন্ধ হয়ে গেলো। আমি বন্ধ ফোন টা হাতে নিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে বাংলা মোটরের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলাম।
- This author does not have any more posts.