fbpx

অক্টোবর ১৬, ২০২৪

অভিপ্রায়

বিবর্ণ আর আধোয়া  শার্টটাই আবার গায়ে দিয়ে, ময়লা প্যান্টের নিচটুকু আর একটু গুটিয়ে নেয় । স্যান্ডেলের ক্ষয়ে যাওয়া অংশটা চোখে পড়ে। তবুও দীর্ঘশ্বাস পড়ে না। কিছু অগোছালো চিন্তা, আর চোখে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চলে। সেদিনও রঙিন লাগতো সবকিছু, এখন কেমন যেন ফ্যাকাসে লাগে, অনেককিছু।  বোকা তো, তবুও এখন মনে হয় একটু বাস্তবতা বোঝা যায়। ভাবনা চিন্তার শুরু বা শেষ আছে কি? এটাও প্রশ্ন আসে, অকারণেই। 

পাঁচ  টাকার চা কিনে, চায়ে চুমুক দিতে দিতে আবার হাঁটা দেয়। ভাল লাগা কিংবা মন্দ লাগার জন্য কারণ লাগে না বোধহয় সবসময়। এখন যেমন ওর খারাপ লাগছে, আর কী   উদ্ভট চিন্তা আসছে।

মনটা ভালো করা দরকার।

ও নুহাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করছে। হলে থাকে, আর স্বপ্ন দেখে।

আকাশের দিকে তাকালে নাকি মন একটু ভালো হয়, তাকানো শুরু করা যায়। আকাশের দিকে তাকানোর জন্য আর একজনকে নেয়া দরকার। দুজন মিলে তাকালে গল্প করতে করতে আকাশ দেখা যাবে। খোঁজাখুঁজি করে একটা ছোট্ট ছেলেকে পাওয়া গেল, যে দশ টাকার বিনিময়ে একসাথে আকাশ দেখতে আর গল্প করতে রাজি হয়েছে। 

ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে হাত দুটো পিছনে নিয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে মাথাটা আকাশের দিকে উঠাতে শুরু করা হলো। শুরু হলো আকাশ দেখা।

-“কিরে, তোর আকাশ দেখতে ভাল লাগছে?” নুহাশ প্রশ্ন করে ছেলেটাকে।

– “আকাশ দেকি ভাল নাগার কী আছে!! মুই বুঝব্যার পাওছো না।” ছেলেটা উত্তর দেয়।

– “ওই মেঘটাকে দ্যাখ কেমন ঘোড়ার মতো লাগছে না?”

-“কোনটে ভাই? মুই তো দ্যাকোছো না।”

-“ভাল করে দেখ, ওই যে দেখ ওইটা মাথা আর ওইটা শরীর।” 

-“ওওও, এবার দেখছো। হয়ে তো ভাই, ঘোড়ার ন্যাকান নাগে।” কিছুটা মজা পেতে শুরু করেছে মনে হয় ছেলেটা।

-” মেঘগুলোতে চড়ে ভেসে বেড়াতে পারলে খুব মজা হতো, তাই না রে?”

-” হ, ভাই। মোর ভাই কয় মোর মাও বলে মেঘের উপর চড়ি কোনটেবা গেছে! মুইও একদিন মেঘের

উপর চড়ি মায়ের কাছে যাম।”

নুহাশের মনটা একটু ভাল হতে শুরু করেছিল, এখন আবার কেমন যেন খারাপ লাগা শুরু হলো।

কখনো যদি ওর সামর্থ্য হয় তাহলে এদের মত অনাথ শিশুদের জন্য কিছু করবে। 

-” পাখিগুলা দেখ, সারিবদ্ধভাবে উড়ছে কী সুন্দর!” নুহাশ আকাশ দেখতে দেখতে প্রসঙ্গ পালটায়।

-” ভাই পাখিগুলা কোনটে যায়?”

-“খাবারের খোঁজে, ওদেরও তো বাঁচতে হবে রে।”

-“আজকে না ভাই, মুই একটা মরা বিলাই দেকছো, কী ব্যান খায়া মরি পড়ি আছে।”

-“তাই?”

নুহাশ ভাবে মানুষের  খাবারে বিষ মিশিয়ে , বিশ্রীভাবে পরিবেশ দূষণ করে তারা যে শুধু নিজেদের ক্ষতি করছে তাই নয়, যারা এই পৃথিবীর সত্য অংশ তাদেরও ক্ষতি করছে পরোক্ষভাবে। যদিও এই সত্য অংশের ক্ষতি করা মানে নিজেদেরই ক্ষতি।বাস্তুতন্ত্রের সবাই তো এই পৃথিবীর সত্য অংশ।

-“আচ্ছা তোর নাম কিরে?”

-“মোর নাম রাজ্জাক। মোর ভাইয়ে কয় রাজ্জাক নামে বলে আগে একজন নায়ক আছিল। মোর মায়ের বলে খুব পছন্দ আছিল। “

সত্যিই তারা সর্বসাধারণের নায়ক ছিল, নুহাশ ভাবে।

-“যাইহোক, তুই সবচেয়ে কাকে ভালবাসিস রে।”

-“মোর ভাইওক, ওই যে মোর ভাই!”

ভাই আসার সাথে সাথে ও দৌড় দিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। ভাইও তাই। আমি উঠে গিয়ে রাজ্জাককে দশ টাকা দিতে গেলাম। ওর ভাই বলল, “ওকে ট্যাকা দ্যাওছেন ক্যান?” আমি বললাম, “চকলেট খাওয়ার জন্য।” ভাই বলল, “না, আপনি

ট্যাকা দ্যান না, অয় কি আপনার কোন কাম করি দিছে? কাম না করি দিলে এমনি এমনি ট্যাকা দিলে অয় তো কামচোর হবে। আর ফকিরের মত একদিন ফির টাকা চায়া বেড়াবে মানুষের কাছে।”

নুহাশ ভালই অবাক হলো। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, “ওর সাথে আমার দশ টাকার কন্ট্রাক্ট হয়েছিল, ও আমাকে সময় দিলে ওকে আমি দশ টাকা দেব বলেছি। তাই এই নাও দশ টাকা। ধরে নাও, এটা রাজ্জাকের প্রথম উপার্জন।” টাকাটা দিয়ে নুহাশ হাঁটা শুরু করল।

নুহাশের মনটা এখন খানিকটা ভালো লাগছে।

হাঁটতে হাঁটতে নুহাশ ভাবে ও যে ওর বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে সেটা রাজ্জাককে বলা হয়নি। বাবাকেও বলা হয়নি অবশ্য। একদিন নুহাশও উপার্জন করবে। প্রথম উপার্জন দিয়ে বাবাকে সুন্দর কিছু উপহার দেবে।