fbpx

এ পৃথিবী একবার পায় তারে

সব মায়া কাটিয়ে অধ্যাপক এম. আতাহারুল ইসলাম না ফেরার দেশে চলে গেল। তার এই অকাল তিরোধানে বাংলাদেশের তথা সারা বিশ্বের পরিসংখ্যান সমাজ বাকরুদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক সেরা ছাত্রের নাম আতাহারুল ইসলাম।

অনুজ প্রতিম আতাহার আমার তিন বছরের কনিষ্ঠ। পরিসংখ্যান বিভাগে থাকাকালীন তার সাথে আমার পরিচয় ছিল না, হয়েছে বেশ পরে কাজের প্রয়োজনে। সবার মতো আমিও প্রথম সাক্ষাতেই মুগ্ধ। তার পরেরটা এখন ইতিহাস। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের উপর একটি ছোট লেখা তাকে পাঠিয়েছিলাম পড়তে। তখন সে বেশ অসুস্থ। সাথে সাথেই আমাকে ফোন করলো। প্রচুর প্রশংসা করলো। বলল, সে এই লেখাটি তার পরিবারের অন্যদেরও পড়িয়েছে। উক্ত লেখাতে তার সম্পর্কে কয়েকটি লাইন ছিল যেটা পড়ে সে একটু বিব্রত বোধ করছিল। ঠিক এমনি ছিল আতাহার। নিজের ব্যাপারে খুব চাপা, কিন্তু অন্যকে মাথায় উঠিয়ে রাখবে। এটাই তার বৈশিষ্ট্য।

পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডুসডা। নভেম্বর মাসে আমরা আতাহারকে আমাদের সংগঠনের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ডুসডা আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ এওয়ার্ড’ প্রদান করি। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক ‘জুম’ অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় তিনশত গুণমুগ্ধ ছাত্র, শিক্ষক, সহকর্মী অংশ গ্রহণ করে। এদের মধ্যে কয়েকজন আতাহারের জীবন ও কাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করেন। আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেন ম্যানকেন আতাহারের সাথে দীর্ঘ বন্ধুত্বের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি যখন নব্বই দশকে প্রথম বাংলাদেশে আসি তখন সবার মুখে একটি নামই শুনি – আতাহার। পরিসংখ্যান বিষয়ে কোন প্রয়োজনে আতাহারই ছিল অগ্রগণ্য।’ পরিসংখ্যান বিভাগের আরেক নক্ষত্র যুক্তরাষ্ট্রের বল স্টেট ইউনিভার্সিটির সম্মানীয় অধ্যাপক ইমেরিটাস মীর মাসুম আলী তার বক্তব্যে আতাহারের সাথে তার দীর্ঘদিনের পরিচয় এবং তার মানবিক গুণাবলির বিষয় তুলে ধরেন। তার অকাল প্রয়াণে আমেরিকান স্ট্যাটিস্টিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন এর দুই প্রাক্তন সভাপতি জেসিকা উট্‌স্‌‌ এবং শাস্ত্রী পান্তুলা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

আতাহার তার কাজ, আদর্শ, স্বকীয়তা, মূল্যবোধ এবং সর্বোপরি পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে অবদানের জন্য অনাদিকাল বেঁচে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্তি লগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আবেদন অধ্যাপক এম. আতাহারুল ইসলামের মতো গুণীজনদের যেন সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়।

ক্ষণজন্মা এই বন্ধুটির জন্য রইলো অপার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

সভাপতি | ট্রাস্টি বোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন (ডুসডা)

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.