পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তির পর তিনজন শিক্ষকের নাম প্রায় সকল সিনিয়রদের কাছে থেকে শুনতাম, যাঁরা পরিসংখ্যান এর মত কঠিন বিষয়কে খুবই সহজভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট উপস্থাপন করতেন। এই তিনজন শিক্ষক এর একজন ছিলেন তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক স্যার।
এই বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় দুই বছর পর্যন্ত দুই একটা কোর্স ছাড়া পরিসংখ্যান এর মৌলিক বিষয়বস্তু তেমন একটা বুঝতাম না। পরিসংখ্যান বিষয়টি কী? এটা আমাদের কী কাজে লাগে? তখন এইসব কিছুই ভাবতাম না। ভালো একটা রেজাল্ট নিয়ে বের হতে হবে এই কারণে টুকটাক পড়ালেখা করতাম। ২০১৫ সালের দিকে যখন আমরা ৩য় বর্ষে, তখন আমাদের প্রথমবারের মত সৌভাগ্য হয় স্যার এর ক্লাস পাওয়ার। আর তৃতীয় বর্ষে এসেই পরিসংখ্যানের আসল সৌন্দর্য কিছুটা বুঝতে পারি এবং এর মূলে ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ যিনি আমাদের ‘Test of Hypothesis’ কোর্সটি তখন পড়াতেন। পরবর্তীতে ৪র্থ বর্ষে স্যার আমাদের ‘Biostatistics’ কোর্সটিও পড়িয়েছিলেন। মাস্টার্সে স্যার এর কোনো কোর্স পাইনি বলে সবসময় একটা আক্ষেপ কাজ করতো। পরিসংখ্যান থেকে শুরু করে যাবতীয় সব বিষয়েই স্যার এর সাথে আলোচনা করার সুযোগ ছিলো।
স্যার এর পড়ানোর একটা আলাদা ধরণ ছিল, সম্ভবত এই কারণেই ক্লাস এর বাইরে উনার কোর্স তেমন একটা পড়া লাগতো না। প্রতি টা ক্লাসের শুরুতেই উনি আগের ক্লাসগুলোর উপর একটা রিভিউ দিতেন। অসম্ভব শান্ত আর ধৈর্য্যশীল ছিলেন আমাদের তসলিম স্যার। একাডেমিক কিংবা নন-একাডেমিক যেকোনো বিষয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলে ধৈর্য্যের সাথে শুনতেন এবং যদি উনার কাছে সঠিক সমাধান থাকে কেবল তখনই সেইটা দিতেন। কোনো উত্তর জানা না থাকলে সেটা অকপটে স্বীকার করতেন এই বিনয়ী মানুষটা, সাথে কোথায় ঘাটাঘাটি করলে বা কার কাছে গেলে সেই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যাবে সে রাস্তাটাও বাতলে দিতেন। উনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আমার কাজ করার সুযোগ হয় নি কিন্তু কার সাথে কাজ করলে Statistical Research ভালোভাবে শিখতে পারবো সেই পরামর্শটা উনিই আমাকে দিয়েছিলেন।
স্যার এর চিন্তাভাবনার অনেকাংশে ছিলো পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা যেনো কখনো হতাশাগ্রস্ত না হয়। একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ে যেনো কারো মধ্যে হতাশা কাজ না করে সেই জন্য একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিসংখ্যানকে কিভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহার করতে পারে সেই লক্ষ্যেই স্যার এর নেতৃত্বে তৈরি হয় QMH Statistics Club। এই ক্লাবের মাধ্যমে স্যার এর সাথে কাজ করারও সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন দেখতাম স্যার ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক।
প্রতিনিয়ত স্যার এর কাছ থেকে কিছু না কিছু শেখা হতো আর অনেক কিছু শেখার বাকীও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব উলটপালট হয়ে গেলো।
এতো তাড়া ছিলো আপনার?
জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আমি আর কখনও আপনার পরামর্শ নিতে পারবো না, স্যার!
আল্লাহ হয়তো আপনাকে আমাদের মত অভাগাদের মাঝে বেশিদিন না রেখে নিজের কাছে রাখাটাই বেশি পছন্দ করেছেন। উনি যেন আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন।
- আহসান রহমান জামীhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80/বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
- আহসান রহমান জামীhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80/বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৯