fbpx

পদক্ষেপ – দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সকাল দশটা বেজে ত্রিশ মিনিট। যারা বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেন তাদের জন্য অনেক ব্যাস্ত একটা সময়। আশেপাশে তাকানোর ফুসরত পান না। কিন্তু জেলা সদরের সমাজ কল্যাণ সংস্থার আজকের চিত্রটা একটু ভিন্ন। প্রায় সবাই নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কারণ পুলিশের দুইজন কর্মকর্তা এসেছেন তাদের অফিসে। অন্যদিন আসলে চিন্তার কোনো কারন ছিল না। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু জটিল। একে তো তাদের একজন ফিমেইল কলিগ মিসিং তার উপর পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি শাখা প্রধান মেহেদী স্যারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে স্যারের রুমে। বাইরে থেকে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।

“তো মিস্টার মেহেদী হাসান! কি মনে করে কাল রাত বারোটা সাতাস মিনিটে মিসেস আফসানাকে কল দিয়েছিলেন?” চায়ে চুমুক দিতে দিতে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর শরাফত।

“অফিসের একটা…” হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন ওসি সোহরাব। “মিস্টার মেহেদী,ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন প্রথমে এটা ছিলো একটা মিসিং কেস। কিন্তু এখন এটা সম্ভবত মার্ডার কেসে কনভার্ট হয়েছে। তাই কোনো বাড়তি কথা শুনতে চাচ্ছি না। এক্সাক্টলি যে কারণে ফোন দিয়েছিলেন শুধু সেটা বলেন।

“স্যার,আসলে…”

“আপনার সাথে কি আফসানা হকের এফেয়ার ছিলো?” মেহেদীর কথার মাঝেই কাটাকাটা ভাবে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর।

ইন্সপেক্টরের কথায় কোনো ভাবান্তর হয়না মেহেদী হাসানের। তিনি ওসির দিকে চেয়ে জবাব দিলেন,”এই কোশ্চেনটা আশাটাই স্বাভাবিক ছিলো। কারণ রাত সাড়ে বারোটায় কল কেউ স্বাভাবিকভবে নেবে না। “একটু থেমে আবারো শুরু করলেন, “আসলে আমি তাকে পছন্দ করতাম। তবে এটা শিওর যে আমাদের মাঝে কোনো এফেয়ার ছিলো না। কিন্তু হ্যা, আমাদের সুন্দর একটা ফ্রেন্ডশীপ ছিলো।“ শরাফত সোহরাব চোখাচোখি করলেন। হালকা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন ওসি। পুলিশ অফিসারদের চুপ থাকতে দেখে আবারো বলা শুরু করলেন মেহেদী হাসান।

“আসলে আমি আনম্যারিড। আর আফসানা এখানে জয়েন করার পর থেকেই আমি ওকে পছন্দ করতাম। অনেকবার বলেওছি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নাই। তবে একবারে রিজেক্ট করেনাই। নিজে থেকেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলো। আর আমি জানতাম সে তার হাসবেন্ডকে অনেক ভালোবাসে। তাই বন্ধুত্বের খাতিরে আমি আর আগাই নাই।”

“কাল রাতের কল।” শরাফতের দিকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেহেদীর কাছে আবারো জানতে চাইলো ওসি।

“ব্যাচেলর মানুষ। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে আমি ওরে ফোন দিতাম। সো আনফরচুনেন্টলি কালকেও দিয়েছিলাম।”

“আনফরচুনেন্টলি।” অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো শরাফত।

“আপনি শিওর যে আপনাদের মাঝে এক্সট্রিম কোনো রিলেশন ছিলোনা?” জানতে চাইলো ওসি।

“না।” স্বভাবসুলভ জবাব মেহেদীর।

“তাহলে শরাফ! মায়ের সাথে ভ্রণের ও ডিনিএ টেস্ট টা করে ফেলো। আর জনাব মেহেদী। আপনি আমাদের পারমিশন ছাড়া শহরের বাইরে যাবেন না।” চেয়ার থেকে দাড়াতে দাড়াতে বললল ওসি। ওসিকে অনুসরণ করে শরাফত ও দাড়িয়ে গেলো।

“আপনারা যা ইচ্ছা করুন। তবে এই কেসের সব ধরনের সহযোগিতা আমার কাছে থেকে আপনারা পাবেন।” সামনে রাখা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ে চুমুক দিয়ে বললো মেহেদী।

“থ্যাংক ইউ”, মুচকি হেসে জবাব দিয়ে চলে গেলো ওসি।

পুলিশের ইন্টারোগেশন রুমে পাভেলকে জিজ্ঞাসা বাদ চলছে। কিন্তু পাভেলের কথায় পুলিশ একটার পর একটা শকড খেয়ে চলছে। প্রায় এক বছর ধরে তার ওয়াইফকে তার অফিসের বস বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল আর এই মহা প্রেমিক স্বামী নাকি এসবের কিছুই জানেন না। কারণ হিসেবে বললেন এখানে সিফট হওয়ার পর থেকে নাকি তার সাথে আফসানা হক রাফ বিহেভ করে। তাকে ইগনোর করে। অথচ কাল রাতে দিব্যি বলে গেলেন তাদের মাঝে সম্পর্ক অনেক ভালো। ভালোবাসা নাকি গোলাপের তরতাজা পাপড়ির মতো কোমল।

“পাভেল সাহেব। পৃথিবীর কোনো স্বামীই তার স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে পারবে না। তাই বলে খুন করতে হবে? আপনার হাতে অপশন ছিলো না? ডিভোর্স দিতেন। তাহলে সেও বেঁচে থাকতো আর আপনিও এখানে থাকতেন না।”

“কি যা তা বলছেন স্যার। পুলিশের ওসি জন্য আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন না। আমি কেনো আফসানাকে খুন করতে যাবো। আর আপনি যে হাস্যকর পরোকীয়ার কথা বলছেন সেটা আমি আজকে জানলাম। তাও আপনার মুখে শুনে। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমাদের সম্পর্ক ইদানীং খারাপ যাচ্ছিল। আমি ওকে ডিভোর্সের কথাও বলেছিলাম। কিন্তু ওর একটাই কথা মানুষ বিয়ে একবারই করে। সে আমার সাথে সারাজীবন থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েই বিয়ে করেছে। তাই আর ডিভোর্সটা নেওয়া হয় নাই। তবে আমি কম চেষ্টা করিনি সম্পর্কটা আগের মতো করার। হয় নাই। এখন তো মনে হচ্ছে…. “

“কি হচ্ছে শরাফ আমি কিছু বুঝতেছি না।” উত্তেজিত কন্ঠে জুনিয়রকে বললো ওসি।

“স্যার, আপনি একটু রেস্ট করেন। আপনার শরীরটা ভালো না।”

“না, শরাফ থাকি সমস্যা নাই।”

“স্যার, আমি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। তাই বলে কি সুস্থ ভাবে বাচার অধিকার আমার নাই? তোমার সন্তান লাগবে? একটা দত্তক নেই। সে নিবে না। তাহলে নিঃসন্তান হিসেবেই থাকি। অনেকেই তো নিঃসন্তান দম্পতি হিসেবে আছে। কিন্তু সে আমায় ইদানীং ইগনোর করা শুরু করলো। আমায় আর ভালো লাগে না? ডিভোর্স নাও। সে নেবে না। তো স্বাভাবিক আচরন করো। সে সেটাও করবে না। স্বামীর অধিকার দিবে না। পদে পদে রিজেক্ট করবে। কতো আর সহ্য করা যায় স্যার। ভালোবাসি জন্য জোর করে ডিভোর্স ও দিতে পারি না। এমন একটা বাজে সিচুয়েশনে ছিলাম না পারতেছিলাম কাউরে বলতে না পারতেছিলাম কিছু করতে। বিশ্বাস করেন স্যার কোথায় স্বামী নির্যাতনের আইন থাকলে আমি বিচার চাইতাম।একটু সুন্দরভাবে বাচার অধিকার চাইতাম।” বলতে বলতে হেচকি উঠে যায় পাভেলের। পানি খেয়ে চোখ মুছে আবার শুরু করে, “এই যে দেখেন এক বছর ধরে তার বসের থেকে প্রস্তাব পাচ্ছে। অথচ আমায় বলার প্রয়োজন মনে করে নাই। আরে শু***রের বাচ্চা এতোই যদি সন্তানের দরকার ছিলো পরোকীয়া করতে গেলি কেনো। ডিভোর্স তো দিতেই চেয়েছিলাম। নাকি সভ্য পতিতা হওয়ার সখ ছিলো তোর।” শেষের কথা গুলো চিৎকার করেই বললো পাভেল।

পাভেলের চিৎকারে ইন্ট্রোগেশন রুমে থাকাই যেনো দায় হয়ে গেলো ওসির। রাগ করে কিছু বলতে যাবে তখনই হাবিলদার বারেক এসে ওসিকে ডাক দেয়। সমাজকল্যাণ সংস্থা থেকে একজন মেয়ে এসেছে। তাদের শাখা প্রধান মেহেদী হাসানের নামে অভিযোগ দায়ের করবে। ওসি আর শরাফত দুইজনই দুইজনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো ওসি। যাওয়ার আগে পাভেলকে বলে গেলো এবার ওসি আসতেই যেনো সত্যটা স্বীকার করে নেয়। নয়তো এবার তার সাথে খারাপ কিছু হবে। ওসি চলে যাচ্ছে। পাভেল পিছন থেকে চিল্লাচ্ছে,”স্যার আমি যদি পরকীয়ার কথা আগে জানতাম তাহলে নিজেই সুইসাইড করতাম। যে স্বামী তার বউকে সামলাইতে পারে না সে কোন সুখে পৃথিবীতে থাকবে।”

“আপনি শিওর মেহেদী আপনাকে হ্যারেজ করেছে?” সমাজ কল্যাণ সংস্থার জুনিয়র স্টাফ সামিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে বললো ইন্সপেক্টর শরাফত। সামনে নিজের চেয়ারে চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছেন ওসি সোহরাব। আর মিলানোর চেষ্টা করছেন মেইন কালপ্রিট টা আসোলে কে। আর আগামীকালের আগে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট ও হাতে আসবে না। তার মানে আগামীকাল পর্যন্ত অন্ধকারেই আলো খুজতে হবে ওসি সোহরাবকে।

“জ্বি, প্রায় চার মাস হলো। প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। সামনে আসলেই প্রশংসা করতো। কিন্তু পরে পাত্তা না পেয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া শুরু করে। কিন্তু কাল তো সেসবকেও ছাড়িয়ে গেছে। লেডিস টয়লেটের সামনে…” আর বলতে পারে না মিস সামিয়া সুলতানা।

“আপনি কতৃপক্ষকে এ বিষয়ে কিছু জানান নাই?” জানতে চায় শরাফত।

“মুরগী খাওয়া বেঁজিদের জানিয়ে কি লাভ হতো স্যার। হয়তো আজকেও আসতাম না। আফসানার ব্যাপারটা হওয়ার পর থেকেই নিজেকে নিয়ে খুব সংকায় আছি। না জানি ওর মতো আমার সাাথেও কিছু হয়ে যায়।”

“তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আফসানার মিসিং এর সাথে মেহেদীর হাত আছে? ওরা না ভালো ফ্রেন্ড।”

“কে কার ফ্রেন্ড স্যার। এই আফসানা গত এক বছর ধরে   মেহেদীর অত্যাচার সহ্য করে আসছে। অনেকবার অফিসে কমপ্লেনও দিছে। বাট কাজ হয় নাই।“ সামিয়ার কথা শুনে হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসে ওসি। সামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আচ্ছা ওদের মাঝে কি ফিজিক্যালি কিছু হওয়া সম্ভব?”

“আমি শিওর না তবে অসম্ভব কিছু নয়। জোর করে সবই সম্ভব। কতো মেয়ে স্টাফকেই তো ঔ শুয়োরটা….বাট অন্যসব কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের সম্মতি ছিলো।”

“আপনারা কি সবাই সবার ব্যাপারে জানেন?” জানতে চাইলো ওসি।

“না স্যার। এমনিতেই আন্দাজ করলেই বোঝা যায়। অনেক মেয়ে জয়েন করার কয়েকমাস পরেই রিজাইন দিয়ে চলে যায়। তখনি আমরা ধারনা করি যে কিছু একটা হয়েছে। আর লম্পট টার লোলুপ দৃষ্টি দেখলেই তো বোঝা যায়।”

“শরাফ, বেঁজিটারে থানায় নিয়ে আসো। আর সব ফিমেইল স্টাফের সাথেই কথা বলো। ওদের কো-অপারেট করতে বলো। বেঁজিকে এবার বধ করবে সোহরাব নামের গোখরা।” সামনে থাকা গোলকটাতে একটা ঘূর্ণন দিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো ওসি।

চলবে…