অবতরণিকা:
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের উনর পতাকার মতো
শামসুর রহমান
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই মানুষটি, যিনি না থাকলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পারতাম না, স্বাধীন বাংলার হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারতাম না, প্রাণ খুলে গাইতে পারতাম না “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবসি”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এক স্বাধীন দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রাণপুরুষের অনবদ্য নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি সংগ্রামের প্রতীক। পরাধীন জাতিকে তিনি স্বাধীনতার সুখ লাভ করিয়েছেন। তিনি পৃথিবীতে এঁকেছেন নতুন সীমারেখার মানচিত্র, আকাশে উড়িয়েছিলেন লাল-সবুজের নতুন পতাকা। এমন এক কালজয়ী মহান নেতাকে পেয়ে বাঙ্গালি জাতি গর্বিত ছিল সবসময়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তাঁরই উদ্ভাবিত দেশের মাটি থেকে উত্থিত অথবা স্বদেশজাত উন্নয়নের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে এমন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে, যে বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা; যে বাংলাদেশে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি হবে চিরস্থায়ী; যে বাংলাদেশ হবে চিরতরে ক্ষুধামুক্ত-শোষণমুক্ত, যে বাংলাদেশে মানবমুক্তি নিশ্চিত হবে; যে বাংলাদেশে নিশ্চিত হবে মানুষের সুযোগের সমতা; যে বাংলাদেশ হবে বঞ্চনামুক্ত-শোষণমুক্ত-বৈষম্যমুক্ত-সমতাভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক দেশ; যে বাংলাদেশ হবে সুস্থ-সবল-জ্ঞান-চেতনাসমৃদ্ধ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষের দেশ। আর সেই বাংলাদেশ গড়াতে বঙ্গবন্ধুর প্রধান হাতিয়ার ছিল শিক্ষা। দেশ জাতির কল্যাণে সর্বদা ব্যাপৃত সেই মহান রাষ্ট্রনায়ক ও চিন্তকের শিক্ষাভাবনা ছিল স্ফটিকের মতোই পরিষ্কার।
বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত:
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে, এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শেখ লুৎফর রহমানের ও সায়েরা খাতুনের কোল আলো করে এই পৃথিবীর বুকে আগমন করেন আমাদের জাতির জনক – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় শেখ মুজিব। ১৯২৭ সালে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয়। ১৯৪০ সালে শেখ মুজিব নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং এক বছরের জন্য মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪১ এ মেট্রিকুলেশন পাশের পরে আঠারো বছর বয়সে শেখ মুজিব এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক জননী। শৈশব থেকেই রাজনীতি সচেতন শেখ মুজিব ১৯৪৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন এবং মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক (জি.এস) পদে জয়যুক্ত হন।
১৯৪৭ সালে তিনি পদার্পন করেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে জয়ী হয়ে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে লাহোরে পেশ করেন ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ’-৬ দফা। ১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসকবৃন্দের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জাল ছিন্নভিন্ন করে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের নায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে পায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তাঁর বজ্রকন্ঠ জানিয়ে দেয় বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, বাঙালিদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন তিনি, তার ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে। এর সূত্র ধরেই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৬ মার্চ এর প্রথম প্রহরে তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তাঁর বলিষ্ঠ কাঁধে তুলে নেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের দুর্ভাগ্য মোচনের দায়িত্ব। যে দেশকে তিনি ভালোবেসেছিলেন তার জীবনের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রুপান্তর করার জন্য নিতে থাকেন বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে দেশের মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাসের মূল্য তাকে দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষাভাবনার সংজ্ঞায়ন:
শিক্ষার নিমিত্ত, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষাদান ও গ্রহণের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন সম্বন্ধীয় সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত ভাবনাই হল শিক্ষাভাবনা। শিক্ষার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা সভ্যতার অন্যতম শর্ত। ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের পক্ষেই শিক্ষাজীবনের সমব্যাপী- ‘যাবৎ বাঁচি তাবৎ শিখি’। শিক্ষা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালন, সুসংহত সমাজ গঠন, মননশীলতার পরিচর্যা, নান্দনিক চেতনার প্রকাশ ও তার অন্তর্নিহিত আধ্যাত্বিক অনুভূতিসজ্ঞাত প্রশ্নগুলির সমাধানে সহায়ক হয়। বিভিন্ন যুগে প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার ও শিক্ষাভাবনার সংজ্ঞায় বারবার পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মানুষের দ্রুত ক্রমবিকাশ ও সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক রীতিনীতি, জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় কৌশল, নতুন নতুন চিন্তাপ্রসূত ভাববৈচিত্র্য, শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয়ে যথাযত জ্ঞান মানুষের জীবনে এতটাই অপরিহার্য হয়ে ওঠে যে প্রয়োজন হয় সুপরিকল্পিত শিক্ষা ও শিক্ষাভাবনা।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন:
১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ৯ বছর বয়সে ১৯২৯ সালে, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯৩৪ সালে উক্ত বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন এবং ১৯৩৬ সালে গ্লুকোমা নামক একটা রোগের দরুণ তাঁর চোখ পুনারায় খারাপ হয়ে পরে। কলকাতায় তাঁর চোখের অপারেশন সম্পন্ন হবার পরে ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন শেখ মুজিব। ১৯৪১ সালে মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালে তিনি শিক্ষার জন্য কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখানে সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৪৬ সালে বি.এ.পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকা আগমন ঘটে তাঁর। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব:
ভর্তি: অনেক সূর্য সন্তানের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের মধ্যে বাঙালি জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুজ্জল ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ. পাস করে ১৯৪৭ সালে সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু। তিনি সংযুক্ত ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ হলে। তাঁর রোল নম্বর ছিল ১৬৬। শেখ মুজিবুর রহমান সলিমু্ল্লাহ হলের ছাত্র হলেও তিনি বেশির ভাগ সময় আড্ডা দিতেন ফজলুল হক মুসলিম হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তিনি অধিকাংশ সময় কাটাতেন ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে। ১৯৪৪ সাল থেকে এই বাড়িতেই শামসুল হক, কামরুদ্দিন, তাজউদ্দীন প্রমুখ নেতার আনাগোনা ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালের শেষভাগে ঢাকায় এসে এই নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হন। বাড়িটির নাম ছিল ‘পার্টি হাউজ’। পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখান থেকেই শুরু হয়।
ছাত্রলীগ গঠন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগেই শেখ মুজিবুর রহমান যুব আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র নেতাদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ” গঠন করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ তরুণ নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। গড়ে ওঠে আন্দোলন।
৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলন:
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে আইন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে অসন্তোষ চলছিল। কর্মচারীদের মাসিক বেতন ছিল নগন্য তাদের থাকার জন্য কোনো বাসস্থান ছিল না। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ থেকে কর্মচারীরা ধর্মঘট শুরু করেন। কর্মচারীদের ধর্মঘটের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ৩ মার্চ ক্লাস বর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহবানে ৫ মার্চ পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘটের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১২ টায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষ যত দিন মেনে না নেবে ততদিন সহানুভূতিসূচক ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রনেতা ও যুবকর্মী হিসেবে কর্মচারীদের আন্দোলনে শুরু থেকেই সমর্থন করে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, একসময় তিনি এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।
পরিসমাপ্তি:
প্রাদেশিক সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলন ভন্ডুল করার জন্য ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করে। ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। ৬ জনকে ৪ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৫ জনকে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একজনকে ১০ টাকা জরিমানা করা। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৫ জনকে ১৫ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া তাঁদের মুচলেকা দিতে বলা হয়। অনাদায়ে ছাত্রত্ব বাতিল। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল ও অবস্থান ধর্মঘট ডাকা হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার অবস্থায় তাঁকে ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য জরিমানা ও মুচলেকা দিতে বলা হয়। তিনি মুচলেকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও বাস্তবায়ন:
“ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করেন। ডিগ্রি নিয়ে লাভ হবে না। ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হওয়া যায়না। ডিগ্রি নিয়ে নিজের আত্মাকে ধোঁকা দেওয়া যায়। মানুষ হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে”।
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাল্যকাল থেকেই শিক্ষানুরাগী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির ভাগ্য উন্নয়নে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি যে সম্ভব নয়, তা অনুধাবন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি একটি শিক্ষিত জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন। শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষা ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ’৭২ এর সংবিধানে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ অংশে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা-ভাবনা অন্তর্ভুক্ত করে ঐ সংবিধান প্রনীত হয় যা ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। হতে বলা হয়-
১৭। রাষ্ট্র (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য।
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য।
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বেতর- টেলিভিশন ভাষণ থেকে আমরা তাঁর শিক্ষাভাবনা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাই। ভাষনে তিনি বলেছেন-
“সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না। নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে। ৫ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সকল শ্রেণির জন্য খোলা রাখতে হবে। দ্রুত মেডিকেল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দারিদ্র্য যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবী ছাত্রীদের অভিশাপ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।”
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে উক্ত অনুষ্ঠান উদ্ধোধনকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও নারী শিক্ষা সম্বন্ধে বলেন, “শতকরা ২০ জন শিক্ষিতের দেশে নারীর সংখ্যা আরো নগন্য।…….ক, খ, শিখলেই শিক্ষিত হয় না। সত্যিকারের আলোকপ্রাপ্ত হইতে হবে।
এ সকল কথাবার্তা ও ভাবদর্শন তিনি শুধু ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বাস্তবেও রুপদান করেছিলেন ক্ষমতায় যাওয়ার পর। স্বাধীন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য তাঁর গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হল: প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, সংবিধানে শিক্ষা বাধ্যতামূলক, শিক্ষা কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, মাধ্যমিক স্তরে নামমাত্র মূল্যে বই বিতরণ, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুনর্গঠন, ১১০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ৪০,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়াও বিজ্ঞানভিত্তিক, গণমুখী ও যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজানো লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ড. মুহাম্মদ-কুদরত-এ-খুদা কে সভাপতি করে কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু যা তাঁর বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাভাবনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ভাবনা:
“একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি।
শেখ মুজিবুর রহমান
একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত
তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস
ভালোবাসা। অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি
এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।”
স্বাধীনতার পর সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যুদ্ধবিধ্বস্ত নবগঠিত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সম্প্রসারিত করার এবং উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়ার নানা আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেছেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে নিয়ে। একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে, ১৯৬২ সালে তৎকালীন আইয়ুব সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলো যাকে ‘কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে উক্ত কালো আইন বাতিল করে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন অব বাংলাদেশ- আদেশ ১৯৭৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- আদেশ ১৯৭৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাক্ট ১৯৭৩, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাক্ট ১৯৭৩, জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাক্ট ১৯৭৩ প্রণয়ন করেন। এ সকল আইনে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য, এই যে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের সময় বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরণের শঙ্কা উত্থাপিত করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সামনে, কিন্তু সেগুলোকে তিনি গ্রাহ্য না করে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের স্বায়ত্তশাসনের পথ সুগম করেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পালাবদলে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভূমিকা অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু এসব আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিমত্তার জায়গাটুকু তিনি ভালোভাবেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩” ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ ও শিক্ষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। এই অধ্যাদেশের দরুণ যে পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য তা হল উপাচার্য কর্তৃক বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ, তিন বছর অন্তর অন্তর বিভাগীয় চেয়ারম্যান পরিবর্তন, বিভাগীয় সব শিক্ষকদের নিয়ে ‘একাডেমিক কমিটি’ গঠন, এক তৃতীয়াংশ বয়োঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষদের নিয়ে ‘সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি’ গঠন. বিভিন্ন একাডেমিক কর্মকাণ্ডে ইচ্ছা অনিচ্ছার অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনের মাধ্যমে ডিন নির্বাচন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা সিনেটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক প্রতিনিধি, প্রাক্তন ছাত্রদের তথা জনগণের প্রতিনিধি, অধিভুক্ত কলেজগুলোর প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি, জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি এবং বর্তমান ছাত্রদের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সংসদের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কমিটি গঠন, শৃঙ্খলা বাহিনী গঠন, তদন্ত কমিটি গঠন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করা ইত্যাদি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালনার জন্য যা কিছু করার দরকার তার সবই করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য নির্বাহীর মত উপাচার্যকেও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা হয়। মূলত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব ও শিক্ষকদের জবাবদিহিতার জায়গাটি যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের উপরেই ছেড়ে দিতে চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় যেন অধীনস্ত মনোভাব পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য তিনি স্বায়ত্তশাসনের অনুমোদন দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা ছিল একদম পরিষ্কার। তিনি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিতে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রাদেশিক সরকারের চাটুকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দেন নি, প্রয়োজনে বহিষ্কার হয়েছেন। অর্থাৎ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হবে সচেতন। সে শুধু চোখ-কান-মুখ বুজে লেখাপড়াই করবে না। বরং সকল যৌক্তিক দাবিকে সে সমর্থন জানাবে, কোনো ধরনের অন্যায়কে মেনে নেবে না। এমনকি কোনো অবৈধ সুবিধা দেওয়া হলে ও প্রত্যাখ্যান করবে, এমনই ছিল বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা। বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু স্বায়ত্তশাসন দেওয়া নয়, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে ছিল ছাত্রদের যাবতীয় সুবিধা-অসুবিধার অতীব যত্নশীল হওয়া। তাইতো স্বাধীনতার পর খাদ্য সংকট চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলে এক বেলা ভাত ও এক বেলা রুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুদিন পর ছাত্ররা দুই বেলা ভাতের দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে ঘেরাও করে। বঙ্গবন্ধু প্রটোকল ছাড়াই উপাচার্যের বাসভবনে চলে আসেন। দুই বেলা ভাতের আশ্বাস দেন। ছাত্ররা ঘেরাও প্রত্যাহার করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পুরো দেশ কষ্ট করে হলেও দেশের সেরা মেধাবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন ভাল করে খেতে পারে। কেননা তাদের উপরেই তো দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। তারাই ছিল জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
পরবর্তীতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবিতে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। যেমনঃ ১৯৭২ সালের শেষভাগে ছাত্ররা অটোপ্রমোশনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কিছু শিক্ষককে ঘেরাও করলে বঙ্গবন্ধু চলে আসেন এবং ছাত্রদের সাথে কথা বলে সমাধান করেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে এসেছিলেন। এমনই ছিল জাতির পিতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে শিক্ষাভাবনা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে নেমে আসে স্বৈরশাসনের কালো থাবা। প্রতিটি স্বৈরশাসক চেয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজের মতো করে কব্জা করতে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৃঢ় অবস্থানের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে, নব্বইয়ের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের মত ঘটনা ঘটছে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নেতৃত্বে। এই ঘটনাই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা কতটা দূরদর্শী ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনার ফলাফল:
বঙ্গবন্ধু সরকার প্রণিত “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩” সুফল আমরা অদ্যাপি পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় আজ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এর জ্যেষ্ঠ ও তরুণ শিক্ষক নির্বিশেষে সবাই তাঁদের অধিকারকে সম্মানজনকভাবে ভোগ করতে পারছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় গণতান্ত্রায়নের ফলে আগের চেয়ে শৃঙ্খলা অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত এবং এর প্রভাবে একাডেমিক অগ্রগতিও এখন দৃশ্যমান।
বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও একাডেমিক কর্মকান্ডে সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ছাত্র-শিক্ষক সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষালয়কে সত্যিকারের অর্থেই মুক্তবুদ্ধি চর্চার ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের পীঠস্থান হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করতে প্রণিত হয়েছিল এই আদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীনতা দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর তাঁর প্রিয় শিক্ষালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত শিক্ষাভাবনার জন্য।
শেষাংশ:
শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, ‘এ জগতে কেউ কেউ জন্মগতভাবে মহান, কেউ মহত্বের লক্ষণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, আবার কেউ স্বীয় প্রচেষ্টায় মহানুভবতা অর্জন করেন।’ এই ৩টি বৈশিষ্ট্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জনগণের অন্তনিহিত শক্তির ওপর অপার আস্থা-বিশ্বাস, মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা, মমত্ববোধ, সহমর্মিতার বিরল দৃষ্টান্ত সমৃদ্ধ মানুষ হল বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ এর স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তার যে উদ্ভব সেটির চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘অনুঘটক নেতৃত্বের’ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কাজেই তিনি ইতিহাসের সঙ্গেই লগ্ন হয়ে আছেন। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে। ১৯৪৭ থেকে’৭১ এই সময়টুকুতে অনেক নেতাকে আমরা পেয়েছি। যাদের অবদান কম নয়। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে জনগণের মুখপাত্র হয়ে ওঠা, জনগণের ভাবনা, চেতনা, অভিলক্ষ্য, স্বপ্ন সবকিছুকে ধারণ করতে পেরেছিলেন একজনই তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির চিন্তা-দর্শন ও তাঁর সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আমাদের মেধা মননে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তব রুপ দেওয়ার দায়িত্ব সে তো আমাদের কাঁধেই বর্তায়। তাই আমাদের বুকে ধ্বনিত হোক-
এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান?
সৈয়দ শামসুল হক
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পরিসংখ্যান বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অধিকারী
মোসা. আতিয়াতুজ জাহান (সেশন: ২০১৭ – ২০১৮)
- This author does not have any more posts.