জুন ১৮, ২০২৫

বছর তিনেক পর :

সময়টা ২০২০, ঢাবি তে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ক্লাস শুরু। খুব কৌতুহলি ছিলাম তখন, কেমন হবে সবকিছু। এই যে এতদিন ছবিতে দেখে আসছি সবাই কত মজা করে ভার্সিটি লাইফে, লাইফ টাইম একটা মেমরি তৈরি হয় আমারও কি এমন হবে!!!

এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লাসে গেলাম। এই কাউকেই তো চিনি না তেমন, অবশ্য ওরাও চিনে না তেমন কাউকেই। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাটা দারুন ছিল। নিলিমা ম্যাম আসলেন ক্লাসে, বললেন তোমরা নিজেদের জেলা অনুযায়ী গ্রুপ হয়ে যাও…. তারপর উনি বললেন এবার এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সাথে পরিচিত হও। এভাবে প্রায় সবার সাথেই দেখা হলো, কথাও হলো বেশ অনেক জনের সাথেই…. নতুন ধরনের ভাষার আঞ্চলিকতা শুনলাম। একেক জনের ভাষার প্রকাশ ভঙ্গি একেক রকম, দারুন লেগেছিল এই বিষয়গুলা, কারন এর আগে একসাথে ভাষার এত বৈচিত্র আমি শুনি নি…. সেই প্রথম ছিল..

কিন্তু ক্লাস শুরুর দুমাস যেতে না যেতেই ভার্সিটি বন্ধ হয়ে গেল করোনা মহামারীর কারনে…. সেই নিয়ে ওই সময়টায় প্রায় ১.৫ বছর বন্ধ ছিল ভার্সিটি…. সময় গড়াতে গড়াতে ১.৫ বছর পর ভার্সিটি খুলেই শুরু হয়ে গেল ফাইনাল পরীক্ষা… তারপর পরীক্ষা শেষে শুরু হলো ২য় বর্ষের ক্লাস, সেই ২য় বর্ষের পরীক্ষা সমাপ্ত হয়ে আজ তৃতীয় বর্ষের ফাইনালের কাছে চলো এসেছি….

আচ্ছা একটু পিছনের দিকে ফিরে যাওয়া যাক, শুনে আসা যাক এই ১.৫ বছরের মাঝের কিছু কিছু জিনিস…. যখন ভার্সিটি বন্ধ হলো আমি দেরি না করে একটা গিটার কিনে ফেলি,  অনেকটা জেদ করেই কিনেছিলাম বলা চলে… কিন্তু এখন শিখিয়ে দেয়ারও যে কেউ নেই, শিখবো কি করে!!! উপায় না পেয়ে ইউটিউবের শরনাপন্ন হয়ে কিছু কিছু জিনিস শিখলাম অনেকটা সময় নিয়ে, ভাবলাম কি করা যায় এটা দিয়ে!! খুবই ইউনিক একটা আইডিয়া মাথায় আসলো…. ভাবলাম কারো জন্মদিনে যদি আমি গিটার বাজায় তাকে বার্থডে মিউজিক শুনাই তাহলে সে কত্ত খুশি হবে!!! গিটারে শিখে ফেললাম সেই বার্থডে মিউজিক..  শোনাতে থাকলাম সবার জন্মদিনে, সত্যি বলতে তারা যে কি পরিমান খুশি হতো এমন কিছু পেয়ে তা বলার বাহিরে…. সময় গড়ায় আমিও বড় হই…. ও আরেকটা বিষয় এই গিটারে মিউজিক শোনায় উইশ করতে গিয়ে বেশ অনেকজনের সাথেই আমার কথা হয়েছিল। পরিচয় হলো অনেকের সাথেই….. কিন্তু আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে কথা বললেও সবার মাঝে তার তেমন কোন প্রভাব পেতাম না…. ফলে গুটি কয়েক মানুষের মাঝেই প্রায় সময় কথা হতো আমার….

কিন্তু আমি যে আশা করে ছিলাম ওইযে ভার্সিটিতে খুব সুন্দর সুন্দর মেমরি হবে আমার… সুন্দর একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে সবার সাথে…. তার ঘাটতি রয়ে গেছে সেই প্রথম থেকেই, আর মাঝে করোনার থাবা তা আরো বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে…. ব্যাপারটা এমন যে সবাই আমাকে চিনে আমিও তাদের চিনি কিন্তু আমাদের মাঝে সেই সম্পর্কটা নেই যেটা আমি সেই কলেজ লাইফ থেকে স্বপ্ন দেখে আসছিলাম…. অনেক গ্রুপিং হয়ে গেছে…..  না আমি শুধু আমার ব্যাচের কথা বলছি না। অনেক সিনিয়র জুনিয়র গ্রুপিং হয়ে গেছে… তারা একসাথে কত্ত মজা করে, কত জায়গায় ঘুরে বেড়ায়… এগুলা দেখে খারাপ লাগে তখন, ভাবি আমিও তো একদিন এমন কিছু চেয়েছিলাম…. কিন্তু আমার সাথে তেমন কেউ নেই…. কই আমাকে তো কেউ এগুলায় ডাকে না… বলে না আয় ওমুক জায়গায় ঘুরতে যাই সবাই মিলে….

গুটি কয়েক সিনিয়রের সাথে কথা হয়…. মাঝে মাঝে ভাবি আমি যে এতকিছু করতাম, সবাইকে খুশি করার জন্য বার্থডে মিউজিক পর্যন্ত শিখে নিয়ে তাদের উইশ করতাম কই তাদের কয়জন আমার খবর নেয়!!! মানুষ নিতে জানে, কিন্তু খুব কম মানুষ দিতে জানে…. সবার মাঝে আসলে সেই দেয়ার গুণটা থাকে না….

নিজেকে কেন যেন এখন বড্ড একা একা লাগে….মনে হচ্ছে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি দিন দিন…. আমার আগের মানুষটাকে আমার মাঝে খুঁজে পাই না এখন….. স্কুল কলেজে থাকতে কিছু শিক্ষকেরা কি পরিমান মানসিক মনোবল বাড়াতো তা বলার বাহিরে….. তারা জানতো একজন শিক্ষার্থীকে আসলে কিভাবে পড়াতে হয়….. কিন্তু এমন একজন কেও আমি ভার্সিটিতে এসে খুঁজে পাই না আর…. সবাই পড়ায় কিন্তু কেউ মানুষটাকে পড়ায় না আর….. বই আর লেকচারই পড়ায় যায় শুধু……

আমি তো এমন ভার্সিটি লাইফ আশা করি নি…..

জানি না কি আছে ভবিষ্যতে…..

আই উইশ একদিন আমার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হোক, আমি যেমন ভার্সিটি লাইফ চেয়েছিলাম তেমনটা যেন পাই…..

0906 তন্ময় দাস বছর তিনেক পর স্মৃতিকথা
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ