fbpx

ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

প্যাপিরাস থেকে প্যাপাইরাস কিংবা একটি ফিনিক্স পাখি

প্যাপাইরাস, পরিসংখ্যান বিভাগের মাসিক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা। পরিসংখ্যান আর প্যাপাইরাসের মিল হয়তো প্রথমের ‘প’ বর্ণটি পর্যন্তই। বিজ্ঞানের এমন এক কাঠখোট্টা বিভাগের বর্তমানে একটি মাসিক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা আছে, যা ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই কেমন যেন অবাক লাগে! আমাদের বিভাগের অগ্রজ যারা এটির বীজ বুনেছিলেন ১৯৯৯ সালে, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অনেক ধন্যবাদ। তাদের শুরু করা এই সাহিত্য পত্রিকার সাথে প্রথম পরিচয় ২০২০ সালে। পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাস করতে এসে, ক্লাসরুমের বাইরে হাতে বাননো একটা পোস্টারে লেখা দেখি- ‘লিখেন লিখেন লেইখ্যা যান, প্যাপাইরাসের পাতায়।‘ বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে অনেক ধরনের ক্লাবে যোগ দেয়া যায়, সেখানে অনেক ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেয়া যায় কো-কারিকুলার এক্টিভিটি হিসেবে। তবে নিজ বিভাগেই এমন কিছু একটা থাকবে, এটা ভাবিও নি কখনো। কারণ প্রথম ক্লাসেই স্যার ম্যাডামরা বলে দিলেন যে, বেশিরভাগ দিনই ক্লাস চলবে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। প্রথম দিন আসলেই ভেবেছিলাম যে, তারা একটু বেশি বেশি বলছেন। তবে তারা যে একদমই বাড়িয়ে বলেন নি, সেটা বুঝে গিয়েছিলাম প্রথম সপ্তাহ ক্লাস করেই। এতো এতো ক্লাস করে, প্রতি সপ্তাহে ইনকোর্সের চাপ মাথায় নিয়ে এমন বিভাগ থেকে ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত একটা পত্রিকা প্রতি মাসে প্রকাশ হতে পারে, এটা কিছুটা অলিক কল্পনার মতো। কিন্তু কিভাবে যেনো এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই ‘প্রায় অসম্ভব’ কাজকে করে দেখিয়েছে, বর্তমানে করছে এবং আশা করি ভবিষ্যতেও এটি চলতে থাকবে।

তবে ১৯৯৯ সাল থেকে প্যাপিরাসের যাত্রা কোনোভাবেই মসৃণ ছিলো না। এটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে একটি বিশেষ সংখ্যা বের করতে গিয়েই আমাদের যা অবস্থা হয়েছে, আমরা হয়তো একটু হলেও ধারণা করতে পারি প্রথম প্রকাশের আগে, যারা এটি প্রকাশের জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন, তাদের উপর দিয়ে কি কি বয়ে গেছে। তখন প্রতি ৬ মাসে একবার করে প্যাপিরাস নামে প্রকাশ করার কথা থাকলেও ২০০৭ সাল পর্যন্ত এর ৭ টি কপি প্রকাশিত হয়। শীতনিদ্রায় চলে যায় প্যাপিরাস। এরপরে “প্যাপিরাস” থেকে “প্যাপাইরাস”-এ নাম পরিবর্তন করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আবারো বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এর অষ্টম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এরপরে ২০১৫ এর জুলাই মাসে “বৃষ্টি সংখ্যা” নামে প্রকাশিত হয় প্যাপাইরাসের নবম সংখ্যা। তারপরে আবারো বন্ধ হয়ে যায় এর কাজ।

হয়তো এরপরে অনেকেই ভেবেছিল যে, পরিসংখ্যান বিভাগের সাহিত্য পত্রিকাটি চিরদিনের মতোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কিংবা সোজা বাংলায় ‘প্যাপাইরাস মারা গেছে’। কিন্তু ফিনিক্সে পাখি যেমন পুড়ে ছাই হয়ে যাবার পরেও আবারো স্বমহিমায় আকাশে বিচরণ করেছিল, ঠিক তেমনই ২০১৯ সালে প্যাপাইরাস যাত্রা শুরু করে অনলাইনে।

প্যাপিরাস থেকে প্যাপাইরাস হওয়া কিংবা পত্রিকাটির অনলাইন জগৎ এ পথচলা, এবং এই বারবার ফিরে আসায় যাদের অবদান রয়েছে, সবার নাম এই লিখায় রাখা সম্ভব না এবং আমার ধারণা এখানে কারো অবদানই কম ছিলো না। যারা ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এটি প্রকাশ করেছিল, কিংবা যারা ২০০৬/৭ সালে এটিকে আবারো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল, কিংবা যারা ২০১৫ সালে দুটি সংখ্যা প্রকাশ করে প্যাপাইরাসের ফিরে আসার বার্তা দিয়েছিল অথবা যাদের হাত ধরে ২০১৯ সালে এটির অনলাইন যাত্রা শুরু হয়েছিল, সবাই-ই নিজের অবস্থান থেকে চেয়েছিল যেনো প্যাপাইরাস বেঁচে থাকে, সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়, এর বিচরণ যেনো হয় ফিনিক্স পাখির মতো।

এবারে এই রজতজয়ন্তী সংখ্যা প্রকাশের আগের কিছু গল্প বলি-

সাকিব ইবনে সালাম ভাইয়ের একটি লেখা থেকে সরাসরি তার ভাষ্যই তুলে দেই: “আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিক যেকোনো কিছুতেই দীর্ঘসূত্রতা কাজ করে। কিন্তু দেখা গেলো, জাফর স্যার কিছুই বুঝতে দিলেন না আমাদের। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে যা করা লাগে করতে দিলেন।“ এই কথাটা তিনি ২০২০ সালে প্যাপাইরাস এর অনলাইনে প্রথম বর্ষপূর্তিতে একটা লেখায় বলেছিলেন (পড়ুন: লিখেছিলেন)। কথাটা এখনো ২০২৪এ এসেও যে কতটা সত্যি সেটা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারি। অন্তত আমরা যারা প্যাপাইরাসের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যার কমিউনিকেশন টিমে ছিলাম কিংবা যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড কালেক্ট এর কাজ করেছি তারা খুব ভালোই বুঝবে।

শুরুটা হয় হয়তো ২০২৩ এর ডিসেম্বর মাসে, যেখানে সেকেন্ড ইয়ারের প্যাপাইরাসের সাথে যুক্ত কিছু জুনিয়র জিজ্ঞেস করেছিল যে, “ভাই, প্যাপাইরাসের অনলাইনে পাঁচ বছরপূর্তীতে আমরা কোনো প্রোগ্রাম করবো না?” তখন তাদের বলেছিলাম যে, তোমরা আলোচনা করো যে কি করা যায়। এরপরে রুপক ভাই, সাকিব সালাম ভাই, স্মৃতি আপুদের সাথেও কথা হচ্ছিল যে কিছু করা যায় কি না? ১৯৯৯ সালে প্যাপিরাস নামে শুরু হওয়া পত্রিকাটি যে একে একে পার করে ফেলেছে ২৫টি বসন্ত। এটি মনে পরার পরেই মনে হচ্ছিলো যে, আসলেই কোনো একটা বড়সর আয়োজনের মাধ্যমে এটাকে স্মরণীয় রাখা যায় কি না? সাকিব ভাই আর স্মৃতি আপু আইডিয়া দিলেন যে, “যদি পারো প্রেসের কালি মেখে আসো।” আমরাও এই অনলাইন পত্রিকার একটা হার্ড কপির জন্য হা-হুতাশ করতাম না- এমনও না। অনলাইনে মোবাইলের স্ক্রিনে পড়া আর বাস্তবে হাতে নেড়েচেড়ে পড়ার পার্থক্য তো আছেই। এরপরে মার্চ মাসের কোনো একদিনে হয়তো সেমিনারে রুপক ভাই এবং প্যাপাইরাসে আমরা যারা কাজ করি তাদের সাথে আলোচনা করতে করতে হার্ডকপি বের করার কথাটি এসেই পরল। রুপক ভাই সম্পূর্ণভাবে আশা দিয়ে এবং নিরাশ করে বললেন, “আমি থাকতে তোমাদের কোনো ভয়ও নাই, ভরসাও নাই।“ কিন্তু অসম্ভব এর গন্ডি পেরিয়ে এই বিভাগে যেহেতু একটা পত্রিকা ২৫ বছর বেঁচে থাকতে পেরেছে, সেই পত্রিকায় কাজ করে এতটুকুতে ভয় পাওয়াটা হয়তো আমাদের সাজে না। কথাটির প্রমাণ স্বরূপ সাকিব ইবনে সালাম ভাইয়ের একটা লিখা থেকে একটি অংশ তুলে দেই: “এতবার মরে গিয়ে এতবার ফিরে আসলে একটা সময় ফিনিক্স পাখিও বিভ্রমে পড়ে যাবে!”

এরপরে রুপক ভাই নিজেই আমাদের হয়ে প্যাপাইরাসের সম্পাদক ও পরিসংখ্যান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর স্যারের সাথে কথা বলে স্যারকে কিছুটা রাজি করিয়ে ফেললেন হার্ড কপি বের করার ব্যাপারে। তবে কঠিন শর্ত ছিলো যে, ডিপার্টমেন্ট থেকে পত্রিকা প্রকাশের জন্য ফান্ড দেয়া হবে না, এটা আমাদের নিজেদের ম্যানেজ করে নিতে হবে। কোনো প্রকার প্রকাশনার অভিজ্ঞতা না থাকায়, শুধু মাত্র ওভার কনফিডেন্সের জোরে আমরা বলে ফেলেছিলাম যে, আমরা পারবো স্যার। সেদিন ওখানে আমরা যারা ছিলাম (যতদূর মনে পরে- ৬৮ ব্যাচের রুহি আপু, সামা আপু, হুমায়ুন ভাই, ৬৯ ব্যাচের আমি, সালমা, শামায়েলা আর ৭১ ব্যাচের মুহেব্বুল, নিঝুম, সুমাইয়া), এখানে কারোরই পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা বা ধারণাও ছিলো না। আর লেখায় যে বলেছি ওভার কনফিডেন্সের জোরে সকলে রাজি হয়েছিলাম, সত্যিটা আসলে এটাই। তবে প্রকাশনার ব্যাপারে ধারণা না থাকায় যে লাভটি হয়েছে, তা হলো আমরা রাজি হয়ে গেছিলাম সব ম্যানেজ করার ব্যাপারে, ধারণা থাকলে হয়তো এতো সহজে রাজিই হতে পারতাম না।

Photo 1


এরপরে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, পরেছি মুঘলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে। তো বলেই যখন ফেলেছি-ই যে ফান্ড ম্যানেজ করে ফেলবো, এখন ম্যানেজ করতেই হবে। এখান থেকেই ইন্টারেস্টিং এবং দৌড়াদৌড়ির পার্টটা শুরু। কিভাবে এটা জোগাড় করবো কিংবা শুরুটাই বা করবো কিভাবে, আমরা কোনো কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না। এসময় সিনিয়রদের এবং শিক্ষকদের সাহায্য না পেলে প্যাপাইরাসের এই হার্ডকপি আলোর মুখ দেখতো না।

তো আইডিয়া নিতে শুরুতে আমরা ধরলাম প্রিয় ভাইকে [ভাইকে আমরা শুধু পছন্দ করি দেখে প্রিয় ভাই বলে সম্বোধন করছি- ব্যাপারটা তা না, উনার নামই রাহাত হাসান প্রিয়]। প্রিয় ভাই তার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন এবং আমাদেরকে আশ্বস্ত করলেন যে আমরা পারব। যদিও নিজেরা তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আসলেই আমরা পারবো। জুন মাসে যখন হার্ড কপি আমাদের হাতে এসেছিল, তখনও সালমাকে বলছিলাম যে, “কিরে তোর বিশ্বাস হচ্ছে, আমরা এটা করতে পারছি?’

উত্তরে বলেছিলো, “বিশ্বাস করা কঠিন যে আমরা আসলেই করে ফেলেছি।”

যাই হোক, প্রিয় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করার সময় উনিও বলেন যে আমাদের সাকিব ভাই (সাকিব ইবনে সালাম), তোফায়েল আজম ভাই, রুপক ভাই, রোকন ভাই, সাকিব ভাই (ডিপার্টমেন্ট এ যাকে আমরা গায়ক সাকিব ভাই হিসেবে চিনি), আজাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে হবে; সাথে তিনিও নিজের জায়গা থেকে কিছু মানুষের সাথে কথা বলবেন পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে। এর মাঝে আমরা অনুপ ভাই, সরোয়ার ভাই, পারভেজ ভাই, রিয়াল ভাই, সাফিন ভাই, সজীব ভাই, তোফায়েল আজম ভাই, রাসেল ভাই এবং আরো অনেক সিনিয়রদের সাথে কথা বলি প্যাপাইরাসের ব্যাপারে। তারা সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ডিপার্টমেন্টে এই পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে সাহায্য করার কথা বলেন। এই সকল যোগাযোগের জন্য ছিলাম আমি, সালমা, সামা আপু এবং তন্ময়। মে মাসের কোনো একদিন আমি আর তন্ময় টিএসসিতে দেখা করি তুষার ভাইয়ের সাথে। তার থেকেও আমরা কার সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং সিনিয়রদের ব্যাচ ভিত্তিক ফান্ড কালেকশন কিভাবে হতে পারে সেটার একটা আইডিয়া পাই। এরপরে আসিফ নাহিয়ান ভাইয়ের সাথে আইবিএ ক্যান্টিনে এক দুপুর আড্ডা কিংবা অনুপ ভাইয়ের সাথে চায়ের কাপে আলোচনা বা প্রিয় ভাইয়ের সাথে অনলাইন মিটিং, এসব চলতেই থাকে পুরো এপ্রিল এবং মে মাস জুরে। আমরা এরপরে দেখা করেছিলাম ৬৩ ব্যাচের সুজন ভাইয়ের সাথে। একই ব্যাচের সজীব ভাইয়ের থ্রু তে আমাদের (আমি, সালমা, তন্ময় আর সামা আপু) সুযোগ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবার এবং আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সিনিয়র আতাউল করিম ভূঁইঞা ভাইয়ের সাথে দেখা করার। তিনি ১৯৯৯ সালে যখন প্যাপাইরাস এর যাত্রা শুরু হয়, তখন এর সাথে খুব ভালো ভাবেই জড়িত ছিলেন। আমাদের এই উদ্যোগের তিনি অনেক প্রসংশা করেন। নিজের ক্যাম্পাস জীবনে ক্লাসের কিছু দুষ্টামি বলা সহ অনেক আড্ডা হয়। প্যাপাইরাসের সাথে কাজ করার ফলে আমাদের এমন কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ হয় যাদের সাথে আমদের স্বাভাবিক জীবনে কখনো দেখা হতো বলে মনে হয় না। তিনি কিছু ব্যাংকের পাবলিক রিলেশনসে আছেন এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন, যেখান থেকে আমরা বিজ্ঞাপন পেতে পারি। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি, তাদের হেড অফিসে যাই এবং বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আলোচনা করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফান্ড ম্যানেজ করতে পেরেছিলাম। বিভাগের প্রাক্তন ব্যাচ থেকে পত্রিকা প্রকাশের জন্য ফান্ড কালেক্ট করে দেয়া হয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে আমাদের বিভাগের যারা কর্মরত আছেন, তারাও এই ব্যাপারে অনেক সহোযোগিতা করেছেন। সাথে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে চাই ৪৯ থেকে ৫৪ ব্যাচদের যারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, যেনো পত্রিকাটা ঠিকসময়ে আমরা প্রকাশ করতে পারি।

প্যাপাইরাসে কাজ করি দেখেই হয়তো কিভাবে কিভাবে যেনো যারা এর সাথে কোনো না কোনো সময়, কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত ছিলো তাদেরকে একান্তই আপন মনে হয়। সাথে সবাইকে জানাতে চাই আমরা কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ এমন একটা প্লাটফর্ম পরিসংখ্যান বিভাগে শুরু করে দেবার জন্য। আশা করি ভবিষ্যতে এই পত্রিকাটির সাথে যারা যুক্ত থাকবে তারা সময়ের সাথে সাথে পত্রিকাটির বিকাশে কাজ করে যাবে।

পুনশ্চঃ আমার মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণের অংশটি খুব একটা ভালো না হওয়াতে আমি হয়তো এই লেখায় সবার অবদানের কথা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারিনি। আর লেখাটি আমি শুরু করেছি সেপ্টেম্বর মাসে, যেখানে আমরা সকলের সাথে যোগাযোগ, দৌড়াদৌড়ি এবং কাজগুলি করেছিলাম এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে। পাঠকেরা লেখায় আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

সাথে স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যাবার আগে কিছু মজার ঘটনাও লিখে রাখি এই অনলাইন ডায়েরিতে।

ঘটনা ১: জার্সি পরে ব্যাংকের হেড অফিসে

প্যাপাইরাসের হার্ড কপির জন্য বিজ্ঞাপনের প্রপোজাল নিয়ে আমরা (সামা আপু, সালমা, তন্ময় আর আমি) গিয়েছিলাম ইউসিবি এবং সিটি ব্যাংকের হেড অফিসে। আমরা সকলেই ক্লাস শেষে সেখানে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই কারোরই পরনের জামা ব্যাংকের হেড অফিসে গিয়ে পাবলিক রিলেশনস এর উচ্চপর্যায়ে কর্মরত অফিসারের সাথে দেখা করার মতো ছিল না। সবচেয়ে অনুপযোগী জামাটি নিশ্চিতভাবে আমারই ছিলো। কারণ আমি সেদিন পরেছিলাম ডিপার্টমেন্টের খেলা উপলক্ষে বানানো জার্সি। পুরো রাস্তায় সামা আপু আমাকে যথেষ্ট জ্ঞান (পড়ুন: ঝারি কিংবা বকা) দিয়েছিলেন সিটি ব্যাংকে এই জার্সি পরে যাওয়াটা আমার ঠিক হচ্ছে না, সেটা নিয়ে। আমাদের এই ছোট্ট দলটি সিটি ব্যাংকের রিসিপশনে গিয়ে পাস কার্ড আনতে কোনো এক অজানা কারণে আমাকেই পাঠিয়েছিলো। আমি রিসিপশনিস্টকে বললাম যে, আমরা অমুক স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি। রিসিপশনিস্টের তাকানো দেখে আমার মনে হয়েছিলো, তার মাথায় আকাশের অনেক বড় একটা অংশ ভেঙ্গে পরেছে। তিনি খুব অবাক হয়ে আমাকে মোট তিনবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আপনি অমুক স্যারের সাথে দেখা করতে যাবেন? আমি তিনবারের প্রতিবারই পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিলাম জ্বি। আর উনি প্রতিবারই পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি অবাক হচ্ছিলেন। অবশ্য পরে তার অবাক হবার কারণটা বুঝতেও পেরেছিলাম। আমরা মূলত সেদিন তাদের পাবলিক রিলেশনস হেড এর সাথে দেখা করেছিলাম। আর কোনো ভাবেই একজন রিসেপশনিস্ট সহজে মেনে নিতে পারবেন না যে, তার ব্যাংকের এমন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে দেখা করতে জার্সি পরে– ব্যাগ কাঁধে নিয়ে একজন চলে আসতে পারে।

ঘটনা ২: নামের বিড়ম্বনা Rion- SBI

আমরা বিজ্ঞাপনের জন্যে আরো যোগাযোগ করেছিলাম NBP-এর বাংলাদেশ ব্রাঞ্চের হেড অফিসের একজনের সাথে। এই লিংকটা আমরা জাফর স্যারের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। ব্যাংকের হেড অফিস থেকে একজন আমাকে একদিন কল দিয়েছিলেন, আর ফরমাল কথা শেষ হবার পরে উনি আমাকে হুট করেই জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনার কি স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সাথে কোনো কাজে যুক্ত ছিলেন? আমি মহাকাশ থেকে পড়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, জ্বি না। কিন্তু কেন এটা জিজ্ঞেস করছেন? উনি বললেন যে, ট্রু কলারে কেউ একজন আমার নাম Rion- SBI নামে সেভ করে রেখেছেন। উনি SBI এর ফুল ফর্ম হিসেবে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ভেবে নিয়েছেন। তখন আমি বললাম যে, “স্যার, এখানে একটু ভুল হয়েছে যে, আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর আগে নাম ছিলো Statistics, Biostatistics and Informatics, সেই হিসেবে হয়তো আমার নামের সাথে SBI রেখে দিয়েছেন কেউ একজন।”

Profile Picture
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৯-২০