মে ১৯, ২০২৫

মন ভাঙ্গনের সেই ১৪ই ডিসেম্বর

জীবনের প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রিয় সাবজেক্ট পরিসংখ্যান পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে বেশ আনন্দিত ছিলাম। প্রিয় সাবজেক্ট, প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় সব যেন স্বপ্নের মত। তবে সব সুন্দর জিনিস এর মধ্যে কিছু জিনিস থাকে যেগুলো জীবনের আনন্দ কিছুটা কেড়ে নেয়।

আমার বেলায় সেটা ছিল STAT H-101: Introduction To Statistics কোর্সটি। মুখস্থ বিদ্যায় বরাবরের মত খারাপ হওয়ায় অপছন্দের তালিকার বেশ উপরেই ছিল এই কোর্সটি। যদিও এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভাবতাম এমন যদি হতো কেউ মজা করে খুব যত্ন নিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিতো। আলহামদুলিল্লাহ, শ্রদ্ধেয় লুৎফর রহমান স্যারের ক্লাস করে বুঝতে পারলাম আমার সেই আশাটিও পূরণ হয়েছে। স্যার বেশ সুন্দর করেই গল্পের সাথে মজা করে বুঝাতেন। আমার ও পড়তে ইচ্ছা জাগতে শুরু করলো।

নৌকার পালে যেমন হাওয়া লাগে তেমনি আস্তে আস্তে পড়ায় আগ্রহ জন্মাতে থাকলো আমার। তখনই সবার মন খারাপ করে পদোন্নতি পেয়ে চলে যান আমাদের প্রিয় স্যার। আবার সেই নতুন করে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয় STAT H-101। ডিপার্টমেন্ট থেকে আস্থা দেয়া হয় স্যারের মতোই কাউকে আমাদের আবার দেয়া হবে। তার কিছুদিন পরই নতুন করে STAT H-101 এর যাত্রা শুরু হলো ডিপার্টমেন্ট এর অন্যতম মোস্ট সিনিয়র শিক্ষক আমাদের প্রিয় মুর্রশীদা ম্যাডামের হাত ধরে।

ম্যাডাম কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের কোর্সটি  এত সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছিলেন যে আমার পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছিল STAT H-101 নামক সেই অপছন্দের কোর্সটি। ম্যাডাম একটুখানি রাগী ছিলেন। তবে তাঁর রাগের মধ্যে ছিল যত্ন, মায়া, আদর। তাঁর রাগকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ম্যাডামের দ্বিতীয় ক্লাসে। ক্লাস শেষে তাঁর রুমে আমি প্রশ্ন নিয়ে গেলাম, বাবা ডেকে খুব সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। তখন ম্যাডামের রাগের অর্থ বুঝতে পারছিলাম, যা ছিল আমাদের ভালোর জন্যই। ক্লাসে কাউকে কথা বলতে দিতো না বাকিদের বুঝাতে অসুবিধার কথা ভেবেই।। শাপা ডে তে সবাই যখন সেজেগুজে এসেছিল ম্যাডাম খুবই খুশি হয়েছিলেন, আবার আফসোসও করেছিলেন, নিজে সাজতে পারেননি তাই। এভাবে আস্তে আস্তে যখন আবার STAT H-101 আমার  প্রিয় হয়ে উঠলো তখনই আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন। ম্যাডাম যখন বাবা বলে ডাক দিতো, মায়ের মতোই আপন মনে হতো। কত রাগ, কত অভিমান যার সবটাই ছিল আমাদের বুঝানোর জন্য। আর কেউ বাবা বলে ডাকবে না আমাদের। কেউ ম্যাডামের মতো রাগ করবে না। পড়া না শিখলেও কেউ বকবে না, মায়ের মত করে এমন। আল্লাহ, আমাদের প্রিয় মুরশীদা ম্যাডামকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। ম্যাডামের কাছ থেকে পাওয়া একমাত্র চিহ্ন ম্যাডামের হাতের সাইন। যেটা যত্নে রয়ে যাবে সারাজীবন।আর আপনাকে প্রশ্ন করে বিরক্ত করা হবে না। ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় মুরশীদা ম্যাডাম।

একটা অপছন্দের তারিখ হয়ে রয়ে যাবে ১৪ ডিসেম্বর,২০২৪।

250110
0211 মোঃ ফেরদৌস হোসাইন নাঈম new writer
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ