সবাই দৌড়ে কূপের দিকে যাচ্ছে। আশেপাশে থেকে পশুপাখির চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছে মোড়ল মশাই কে ডাকো, কেউ বলে ভালুক কে ডাকো। কূপটা মাঠের পাশে, এরই একটু দূরে শিশু হাতি টা পাশেই খেলছিল। ওদিকে তার কিছুটা নজর পড়লে দৌড়ে সেদিকে যায়। কূপের চারপাশে অনেক জন্তু জানোয়ার থাকায় কূপ পর্যন্ত যেতে ভালোই বেগ পেতে হলো তাকে। সবাই কূপের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলছে, শিশু হাতি বুঝতে না পেরে পাশেই থাকা নেকড়েকে জিজ্ঞেস করলো। তবে সে পাত্তা না দিয়ে আপন মনে অন্যদের সাথে ফিসফিস করছে। সবাই খুবই চিন্তিত হয়ে অবাক হয়ে কূপের দিকে তাকিয়ে আছে। কূপটা অনেক পুরনো ও সরু হওয়ায় ভেতরে কি হয়েছে বোঝাও যাচ্ছে না। বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে কেউ কিছুই বলছে না, কিছু করছেও না শুধু তাকিয়ে আছে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলো তার বন্ধু খরগোশ এর পরিবারের সবাই দৌড়ে কূপের দিকেই আসছে। তাদের এদিকে আসতে দেখে শিশু হাতি একটু সামনে এগিয়ে যেতে থাকে, তারা দৌড়ে এদিকে আসতে থাকলে তাদের সাথে সেও গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে আসতে থাকে। এতক্ষণে সে বড় কিছু হয়েছে বলে আন্দাজ করতে পারে। তারা এসে মানিক মানিক বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে কূপের দিকে তাকিয়ে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ পার হলে সে উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত বাঁদরদের গাড়ি আসতে দেখে। ঠিক মতো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে । আশেপাশে থেকে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে কেউ হয়তো কূপের মধ্যে পড়ে গেছে কিন্তু কে পড়েছে তা জানা নেই কারও। উদ্ধার কাজে আসা বাঁদরের দল অনেকক্ষণ ধরে কিভাবে উদ্ধার করবে এ নিয়ে অনেক ভাবলো। কূপ অনেক সরু হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিত ছিল আদৌ কি কেউ পড়েছে বা পড়লেও কি এই সরু কূপ থেকে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব? অনেক চিন্তা ভাবনা করে এবার উদ্ধার কাজ চালানো হবে হলে জানালেন উদ্ধার করতে আসা বাঁদরের সরদার। এরপর পুরো দমে খোঁজা শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম নিয়ে। অনেক সময় এভাবেই চলে যেতে লাগলো সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো তবে এখনও কোন খোঁজ মিলছে না। কূপ থেকে কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও চলতে থাকে উদ্ধার কাজ। তবে উদ্ধার করতে আসা বাঁদরের মধ্যে তেমন তোড়জোড় নেই। গা ছাড়া এক ভাব নিয়ে চলছে তাদের উদ্ধার কাজ। দুপুর গড়িয়ে এভাবে বিকেল এরপর রাত হয়ে যায় তবুও কোন হদিস মিলছে না বা তেমন কারো কোন মাথাব্যথাও দেখা যাচ্ছে না। তারা কাজ করছে আপন মনে। পাশেই বসে তার বন্ধু খরগোশ এর পরিবারের সদস্যদের কাঁদতে দেখে শিশু হাতির খারাপই লাগছে। কিন্তু এতক্ষণে একবার ও তার বন্ধু খরগোশ এর দেখা পেলনা। এই অবস্থায় জিজ্ঞেস করার সুযোগও হয়ে ওঠেনি তার। কাঁদতে দেখে খারাপ লাগছিল তার যদিও। কাজ করতে আসা বাঁদরদের এই কারো কোন মন্তব্য নেই । অনেকক্ষন খোঁজার পর কোন উপায় না পেয়ে বাঁদর সরদার গোপনে ফোন করে নব নির্বাচিত সে বনের মোড়লের কাছে কি করবে জানতে চাইল। মোড়ল তাকে একটি প্রস্তাব দিলে সেই অনুযায়ী সে রাতে বনে একটি সভা আয়োজন করে এবং জানান এই কূপের মধ্যে প্রাণের কোন অস্তিত্ব নেই। এটি ছিল সবার একটি ভুল কল্পনা। এই বলে কিছুক্ষণ এর মধ্যে তারা তাদের সবকিছু নিয়ে চলে যেতে লাগলো।তবে বনের কেউই তাদের সাথে একমত হতে পারলো না। চাপা রাগ তাদেরকে বুঝতে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলো, “এতগুলো চোখ সবাই কি মিথ্যা বলবে কেউ বুঝতে পারলো না।” এরকমই এক অসন্তোষ থেকে সেই বনের ভালুক এগিয়ে আসলো পূনঃ প্রচেষ্টায়। সে তার মেধা শক্তি দিয়ে এমন একটি খাঁচা বানালো যাতে কেউ নিচে থাকলেও অনায়াসে উঠে আসতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে সেটি কূপের মধ্যে ছেড়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে সেটি তুললে ওঠাতে ভারি কষ্ট হচ্ছিল। অনেক কষ্টে তোলার পর পেল এখানে সেই ছোট্ট শিশুটি আছে যার পরিবার কাঁদতে কাঁদতে এসেছিল। তাড়াহুড়ো করে সবাই মিলে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে গেল। নাড়ি পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার জানালেন শিশুটি আগেই সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। পাশে থাকা ছোট্ট শিশু হাতি অশ্রু ঝরা চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো কিভাবে গাফিলতির কারণে তার প্রিয় বন্ধুটি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। অঝোরে চলে গেল আরেকটি ছোট্ট প্রাণ।
- মোঃ ফেরদৌস হোসাইন নাঈমhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%83-%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a7%8c%e0%a6%b8-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%88%e0%a6%ae/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
- মোঃ ফেরদৌস হোসাইন নাঈমhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%83-%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a7%8c%e0%a6%b8-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%88%e0%a6%ae/রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
- মোঃ ফেরদৌস হোসাইন নাঈমhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%83-%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a7%8c%e0%a6%b8-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%88%e0%a6%ae/বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫