মার্চ ১৯, ২০২৫

গনেশ খোকা

চৈত্রের শেষ বিকেলে মাঠে গোল্লাছুট খেলা শেষে বাড়ি ফিরছিল গনেশ ও তার বন্ধু রিজওয়ান। নিত্যদিনের মতই তারা বকুলদের বাঁশবাগান পার হয়ে খোলা মাঠ দিয়ে সোজা বাড়ির পথ ধরবে ভেবেই বের হলো। মাঠটা তাদের বাড়ি থেকে ঘন্টা খানেকের দূরত্ব আছে বৈকি। তবে আজ দুজনেই খুব খুশি কারণ স্কুলের পরিক্ষা থাকায় প্রিন্সিপ্যাল মসাই আজ আর এ পথ দিয়ে বাড়ি যাবে না। তাই দেরিতে যেতে দেখলে বকাবকি করার কেউ নেই। এ সুযোগ পেয়ে দুজনেই আজ অনেক বেশি সময় ধরে খেলেছে। এদিকে যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো তার আর খবর নেই। বাদ মাগরিব সবার চলে যাওয়া দেখে তাদের হুঁশ ফিরল। দুজনেই তাড়াহুড়ো করে বাড়ির পথ ধরে। গনেশ ও রিজওয়ান এর বাড়ি পাশাপাশি কয়েক মিনিটের দূরত্বে। গল্প করতে করতে তারা বাঁশ বাগানের দিকে রওনা দিলে পিছন থেকে নিতাই তাদের ডাকে। পিছন ফিরে নিতাইকে দেখে ওইদিকে বিলের পাশে দাঁড়িয়ে ডাকছে। রাত নেমে আসছে দেখে তারা দূর থেকেই নিতাইকে বিদায় দিয়ে আবারো বাড়ির পথ ধরে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বাঁশবাগান পর্যন্ত চলে এসেছে তারা। এদিকে চারদিকে রাত নামতে শুরু করেছে। আশেপাশে থেকে হুটহাট পাখিদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাঁশ বাগান টা অনেক বড় এর এ বাগান নিয়ে অনেক কথাও প্রচলিত আছে। তাই তাদের দুজনেরই একটুখানি ভয় লাগলেও যাওয়ার যেহেতু অন্যকোনো পথ নেই তাই তারা সাহস করে পথ দিয়ে চলতে শুরু করলো। কিছুটা পেরোতেই হঠাৎ উপর থেকে একঝাঁক পাখি উড়ে গেলে তাঁরা আচমকা চমকে উঠে। চারদিকে নিস্তব্ধতা অন্যদিকে পাশে পেঁচার ডাক যেন এই নিস্তব্ধতাকে আরও গম্ভীর করে তুলেছে। আরেকটু এগোতে যাচ্ছে এমন সময় তাঁরা দুজনই পিছন থেকে কে যেন ডাকছে এমন মনে হতে লাগলো। দুজনেই ভয়ে এক দৌড় দিল। বাঁশ বাগানের থেকে তাদের বাড়ি খুব একটা দূরে না হলেও আজ যেন কিছুতেই বাড়ি খুঁজে পাচ্ছেনা। এক দৌড়ে গিয়ে চিৎকার করে বাড়ির সামনের পুকুরে পরলো দুজনেই। এর মধ্যে গনেশের ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখে মা তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, “বাবা গনেশ, এবার ওঠনা বাবা। খুব তো ঘুমলি এবার নাহয় ওঠ, স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে বাপ আমার।”  আধো আধো চোখ খুলে উঠে বসলো। হাত মুখ ধুয়ে আসলে মা তাকে খায়িয়ে দায়িয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করে দিল। এবার স্কুলে যাবার পালা। গুটি গুটি পায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রেজওয়ান সহ আরও কয়েকজন কে দেখতে পেল। ওরা স্কুলেই যাচ্ছে। গনেশের মা ওদের কে ডাক দিয়ে গনেশ কেও ওদের সাথে নিয়ে যেতে বললো। তবে আজ ওরা কেমন জানি নিজেদের মধ্যে কানাঘুষো করছে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে, হঠাৎ দৌড়তে লাগলো স্কুলের দিকে। এ দেখে গনেশ ও তার মা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই গনেশ মা কে বিদায় দিয়ে স্কুলের দিকে যেতে লাগলো। স্কুলে পৌঁছে সে যেই মাত্র ক্লাস এ প্রবেশ করে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। গনেশ কিছু বুঝতে না পেরে সামনের বেঞ্চে বসে। ওই বেঞ্চের বাকি সবাই তখন সেখানে থেকে উঠে পিছনে চলে যায়, না সবাই না, নিতাই সেখানেই বসে ছিল। গনেশ এসবের কিছুই বুঝে না উঠতে পেরে নিতাই এর দিকে তাকিয়ে বললো, “এই নিতাই, নিতাই , সবার আজ কি হলো বল তো।” নিতাই কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে বসে ছিল। অনেক বলার পর ও সে একটি কথাও বললো না। এবার গনেশ একটু ঘাবড়ে যায়। গনেশ ভয়ে ভয়ে আবার জিজ্ঞেস করলে নিতাই মাথা তুলে অট্টোহাসি দিয়ে বললো, “কাল দাড়ালিনা যে?” তার সে চোখ মুখের ছিল সে কি কদাচিৎ হাসি। এ দেখে গনেশর ভয়ে জিভ গলা শুকিয়ে যায়। সে ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠলো। চারদিকে সবে একটু একটু আলো দেখা যাচ্ছে, গনেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ চারদিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করলো এটি একটি নিছক স্বপ্ন ছিল। সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। একটি বড় নিঃশ্বাস নিতে হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে..

0211 মোঃ ফেরদৌস হোসাইন নাঈম new writer
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়