জুলাই ১০, ২০২৫

রক্তাক্ত জুলাই

শ্রাবণ শেষ হয়ে শহরের আদ্যোপান্ত হিমেল হাওয়ার সাথে আবারও পদচারণা হচ্ছে অবাধে। এই নিস্তব্ধতায় গা ঢাকা ক্যাম্পাসে একে একে ফিরেছে সবাই বাসে, ট্রেনে বিজয়ের উল্লাসে। আবার মুখরিত হয়েছে পাঠশালা। ফিরে আসেনি শুধু কিছু মানুষ যাদেরও ফেরার কথা ছিলো। যাদের সাথে মিশে ছিল বোনের  স্বপ্ন, বাবার আস্থা কিংবা মায়ের আঁচল নিঙড়ে থাকা আবেগ। যারা ছিল একটা গোটা ঘর কিংবা সুদিনের অপেক্ষায় থাকা একটা দীর্ঘ জীবন। এই রক্তস্নাত জল্লাদভূমি আবারও স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি সব। শুকিয়ে যাচ্ছে আঘাত-প্রতিঘাতের চিহ্ন। ঐ রাজপথে জমাট বাঁধা শুকিয়ে যাওয়া রক্ত চেয়ে দেখো, ওটা আমার ভাইয়ের। ওখানে পড়ে ছিল নিথর দেহটা; নিস্তেজ হয়েছিল স্বপ্ন ভরা একজোড়া চোখ। প্রজাপতির ডানার মতো মানুষগুলো ছিল নিস্তেজ সেদিন। রক্তের ওপর আবার পদচারণ হচ্ছে, মানুষ চলছে, চলছে গাড়ি। আমরা বেঁচে আছি এ শহরে যেথায় পদ্মপ্রিয়রা এতিম হয়ে যায়, রিয়ামণি, আহাদ‘রা খেলতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আমরা বেঁচে আছি আদরের টুনা বা আবু সাইদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। একদিন ঘনঘটা মেঘের পর ঝুম বৃষ্টি আসবে। ক্রোধ আর ঘৃণার লেলিহান শিখা নিভু নিভু হবে প্রায়। আমার রিয়ামণি কে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, তোমার ওখানে আকাশে অ্যারোপ্লেন উড়ে? পদ্মপ্রিয় তুমি কি জানো মৃত্যুর সংজ্ঞা? একে একে বসন্ত আসবে। অলির ডাকে বকুল হাসবে। ফুল ফুটবে; পাখি ডাকবে। ডাকবেনা শুধু এই পাখিগুলো। আমাদের ভালো রাখতে তারা হারিয়ে গেছে। শুধু থেকে গেলাম আমরা। থেকে গেলো তাদের মায়ের আর্তনাদ, বাবার স্বপ্নভঙ্গ, বোনের লুটিয়ে পড়া কান্না আর বন্ধুর আহাজারি। দেখো একদিন ঘুচে যাবে সব, ভুলে যাবো সব। পড়ে থাকবে স্মৃতি; এক রক্তাক্ত জুলাইয়ের স্মৃতি।

0512 Faria writers photo
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp