প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ (পি সি মহলানবীশ)
সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক গণনা, আদমশুমারি, কৃষিভিত্তিক জরিপসহ আরো অনেক বড় পরিসরের ও গভীর নমুনা ও জরিপ সংগ্রহ আজ এর প্রসার এবং নির্ভুলতার জন্য জনপ্রিয়। আর এই জনপ্রিয়তার পেছনে যে ব্যক্তির শ্রম, মেধা আর প্রজ্ঞা কাজ করছে তিনি হলেন প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ। ভারতীয় পরিসংখ্যানের প্রবাদপুরুষ এই ব্যক্তি তার ‘ডি বর্গ’ (D Square) পরিসংখ্যানের জন্য খ্যাত এবং বৃহত্তর জরিপেও তাঁর অবদান অগ্রগন্য।
বিজ্ঞানী পি সি মহলানবীশ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৯৩ সালের ২৯ জুন । মহলানবীশ ব্রাহ্ম বালক বিদ্যালয় থেকে তাঁর স্কুল জীবন শেষ করেন ১৯০৮ সালে । এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যলয়ে যোগ দান করেন । সেই ক্যামব্রিজেই তিনি বিখ্যাত গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজানের সংস্পর্শে আসেন। ভারতবর্ষে আসবার পথে তিনি আবহবিদ্যা, নৃবিদ্যায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে। পরিসংখ্যান বিদ্যা এরপর তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের পরামর্শে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন কাজে ব্রতী হন।
মহলানবীশ তাঁর ‘মহলানবীশ দূরত্ব’-এর জন্য স্মরণীয়, এটি একটি পরিসংখ্যানিক মাপ যা পরিমাপক স্কেলের উপর নির্ভরশীল নয় এবং এটি তিনিই আবিষ্কার করেন। মহলানবীশ এই ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল, কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের নৃতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ (মানুষের আকার বা কর্মক্ষমতা মাপার বিদ্যা) এবং আবহবিদ্যার বিভিন্ন দিকে। তিনি বন্যা মোকাবেলায় বিশেষ অবদান রাখেন, তবে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে বৃহত্তর পরিমাপের নমুনা জরিপে। তিনিই প্রাথমিক এবং নমুনার পদ্ধতি ব্যবহারের দিক নির্দেশনায় প্রথম পরিসংখ্যানবিদ।
সম্ভবতঃ সাইন্টেফিক পেপার বাদে তাঁর জীবনের সেরা দু’টি কাজ হল ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং ‘সংখ্যা’ নামক জার্নাল প্রকাশ করা। ভারতের স্বাধীনতার পরে মহলানবীশ কেন্দীয় পরিসংখ্যান সংস্থায় পরিণত হয়। তাঁর ‘মহলানবীশ মডেল’ যা ওয়াইসিলি লিওন্টিমফ ইনপুট- আউটপুট মডেলের চলক, ভারতের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য বড় ভূমিকা পালন করে। এতোকিছুর পরেও তিনি সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন এবং তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি স্বল্পমেয়াদে বিশ্ব-ভারতীতে কাজ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ভারত সরকারের পরিসংখ্যান বিষয়ক সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। বিজ্ঞান এবং জাতীয় বিষয়ে অবদানের জন্য তিনি ভারত সরকারের সবচেয়ে সম্মানজনক বেসামরিক পুরষ্কার ‘পদ্মভুষণ’ এ সম্মানিত হন । তাঁর জন্মদিনকে ভারত সরকার ‘পরিসংখ্যান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঃ ১৯৯৯ - ২০০০