পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির মত বাঙালি জাতিও নিজস্ব বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে আপন মহিমায়। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো বর্ষ বিদায় এবং পহেলা বৈশাখের মাধ্যমে নতুন বর্ষবরণ বাঙালির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখ বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন যা বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। বসন্তের অনাবিল স্নিগ্ধ দিনগুলোর শেষে পুরনো জরা-ক্লান্তি মুছে দিতে রৌদ্র-তপ্ত হয়ে আসে এই বৈশাখ। বৈশাখের এই রুদ্রতায় বাঙালি নববর্ষকে বরণ করে নেয় সাদরে। নবরূপে নব আঙ্গিকে জীবনকে সাজিয়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে আসে এই বৈশাখ। বসন্তের ফুলে ভরা দিনগুলো শেষে বৈশাখ আসে তার নিজস্ব রূপে, সাজে এবং আমেজে। বাঙালির বর্ষবরণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রভাতের প্রথম প্রহর থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ রমনার বটমূল, টিএসসি এবং মলচত্বরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে থাকে এই দিনটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ এসে যোগদান করেন এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে দিনটি আলাদা ভাবেও পালিত হয় রঙিন উৎসবে। এ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগও যোগ দেয় বর্ণিল আয়োজনে ।
এবারের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল পদচারণা এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিল নজর কাড়ার মতো। সকাল থেকেই রং-বেরঙের পোশাক পড়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে থাকেন বিভাগের করিডোরে। তরুণীরা লাল-সাদা শাড়ির সাথে সেজেছিলেন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী সাজে আর তরুণরা সরব ছিলেন রঙ-বেরঙ এর পাঞ্জাবিতে। এই রঙের মেলাকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে ছবি তোলার প্রতিযোগিতাও চলছিল সেভাবেই। অংশগ্রহণকারীদের জন্য আপ্যায়নের আয়োজনও ছিল চমৎকার। বাঙালির ঐতিহ্য ভাত, ইলিশ মাছ, বেগুন ভাজা, ডাল, শুটকি মাছ ভর্তা, মাছ ভর্তা এবং আরো নানা কিছু। এসব কিছু নিয়ে বর্ষবরণ হয়ে উঠেছিল ছাত্র-শিক্ষকের এক মিলনমেলায়।
বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয় বেলা ১১টায়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কাজী মোতাহার হোসেন ভবন এর পরিসংখ্যান বিভাগের ৪০১ নং কক্ষে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান এর বক্তব্যের মাধ্যমে পর্দা উন্মোচিত হয় ‘বর্ষবরণ ১৪২৬’ এর সাংস্কৃতিক পর্বের। বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সালাম আকন্দ, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক মোঃ এরশাদুল হক, সহকারী অধ্যাপক ড. এনামুল হক সজীব এবং প্রভাষক নিশাত তাসনিম তুষ্টি।
বিভাগের শিক্ষার্থী আমির হামজা আকাশ ও মোঃ হুমায়ুন কবির এর নান্দনিক উপস্থাপনায় ‘বর্ষবরণ ১৪২৬’ এর সাংস্কৃতিক পর্বের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরুতেই বহুকণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানো হয় । একঝাঁক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সুরেলা কন্ঠের গান, অসাধারণ নাচ এবং অপূর্ব কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে নিয়ে যায় এক অনন্য মাত্রায়। বাঙালির আত্মিক বন্ধনের উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। আর এই দিনে উক্ত বর্ষবরণের মাধ্যমে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা হয়ে ওঠে বিভাগের প্রাঙ্গণ। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হয় ‘বর্ষবরণ ১৪২৬’ এর প্রাণবন্ত আয়োজন।
তানজিন তামান্না হ্যাপি
সেশন ২০১৬ – ২০১৭
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়