দোলন চাঁপা (Hedychium coronarium)
Zingiberaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত দোলনচাঁপা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Hedychium coronarium। এর আদি নিবাস নেপাল ও ভারতের হিমালয় অঞ্চল, সিকিম, ভুটান থেকে শুরু করে দক্ষিণে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ চীন (ইউনান, সিচুয়ান, হুনান, গুয়াংসি এবং গুয়াংডং) থেকে পূর্বে তাইওয়ান পর্যন্ত। চীনারা ঔষধ তৈরি এবং সুগন্ধি তেল তৈরির জন্য এই ফুলটি দীর্ঘ দিন ধরে চাষ করে আসছে।
আদার মতো রাইজোম বা কন্দ থেকে গজানো দোলনচাঁপা গাছ দেখতেও আদার গাছের মতো। উচ্চতায় এটি ০.৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সূঁচালো অগ্রভাগবিশিষ্ট দোলনচাঁপার পাতা দেখতে অনেকটা বল্লমের মতো। পাতা লম্বায় ২০-৬০ সেমি এবং চওড়ায় ৫-১০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। শুধু ফুলে নয়, এর পাতা এবং আদাতেও হালকা সুগন্ধ আছে। অনুকূল আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকাল থেকে শরৎকাল পর্যন্ত এর ফুল ফোটার সময়। দোলনচাঁপার গাছের উপরিভাগে দন্ডের মতো বের হয়ে তাতে ফুল ফোটে থোকায় থোকায়। দোলনচাঁপার ফুল বিভিন্ন রঙের হতে পারে। এর উজ্জ্বল সাদা বর্ণের প্রজাতি টি আমাদের দেশে সব জায়গায় দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে কোথাও কোথাও কমলা বা হালকা হলুদ রঙের দোলনচাঁপাও দেখা যায় যা আমাদের দেশে সচরাচর চোখে পড়ে না। অন্য অনেক সুগন্ধি সাদা ফুলের মতো দোলনচাঁপা ফুলও ফোটে বিকেলে বা সন্ধ্যায়। ফুলের মাতাল করা তীব্র মিষ্টি সুবাস আছে। দোলনচাঁপার চার পাপড়ি বিশিষ্ট একেকটি সাদা ফুল দেখতে একেকটি প্রজাপতির মতো; তাই এর ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি (butterfly ginger lily)। ফুলের গুচ্ছ ১৫ সেমি থেকে ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
দোলনচাঁপা মূলত ভারতবর্ষের ফুল হলেও পরে তা পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, যেমন – ফ্লোরিডা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, গল্ফ কোস্টসহ পৃথিবীর সমগ্র ক্রান্তিয় উপক্রান্তিয় অঞ্চল থেকে শুরু করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অল্প ঠান্ডা অঞ্চলেও দোলনচাঁপা জন্মাতে পারে; তবে যেসব অঞ্চলে শীত তুলনামূলকভাবে বেশি, সেখানে শীতকালে গাছ মরে যায় এবং গ্রীষ্মে মাটির নীচে থেকে যাওয়া আদা থেকে আবার নতুন গাছ গজিয়ে ওঠে।
দোলনচাঁপা কিউবার জাতীয় ফুল। জানা যায়, স্পেনিশ উপনিবেশ আমলে মেয়েরা এই ফুল চুলে লাগিয়ে সাজতো এবং ফুলের মধ্যে লুকিয়ে গোপন বার্তা আদান প্রদান করতো। ক্রীতদাস প্রথা থাকাকালীন সময়ে এই গাছটি ব্রাজিলে নেয়া হয় যেখানে দোলনচাঁপা গাছের পাতা ক্রীতদাসেরা তোষকের মতো ব্যবহার করতো।
দোলনচাঁপার বংশ বিস্তার হয় মূলত অযৌন প্রজননের মাধ্যমে, মাটির নীচে থাকা আদার বৃদ্ধি ও বিভাজনে। অনুকূল আবহাওয়াতে খুব দ্রুত ও ব্যাপক ভাবে বংশ বিস্তার করে অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় বলে বর্তমানে হাওয়াই, ব্রাজিল এবং আরো বেশ কিছু এলাকায় একে রাক্ষুসে আগাছা হিসেবে অভিহিত করা হয়। আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এর চাষ নিষিদ্ধ। তবে এশিয়ার অনেক জায়গাতেই মূলত উষ্ণ ও উপক্রান্তিয় অঞ্চলে, সুগন্ধ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দোলনচাঁপার বেশ কদর রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক বাগানেই দোলনচাঁপা তার স্থান করে নিয়েছে আপন রূপে আর সুগন্ধে। শুধু তাই নয়, ফুলদানিতে রাখবার জন্যও এই ফুলের কদর আমাদের কাছে কম নয়। তাইতো বর্ষা এলেই ঢাকার অনেক রাস্তার মোড়ে, ট্রাফিক সিগনালে বা ফুলের দোকানে গোলাপ, রজনীগন্ধা বা বেলির মতো এই ফুলও বিক্রি হতে দেখা যায়।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩
- জাহিদা গুলশানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১, ২০১৫
- জাহিদা গুলশানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০১৯
- জাহিদা গুলশানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জুন ১৩, ২০১৯
- জাহিদা গুলশানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৮, ২০১৯
- জাহিদা গুলশানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯