আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে আমাকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। একই সাথে, আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানতে চেষ্টা করেছি তারা কী ভাবছে, সমস্যাগুলো কী কী এবং কী ধরণের পরিবর্তন দরকার। আমি এখানে সেই সমস্যা গুলো তুলে ধরতে চেয়েছি এবং আমার মনে হয়, এই সমস্যাগুলো যদি দ্রুত সমাধান করা যায় তাহলে শিক্ষার মান বাড়বেে এবং আমরা উন্নতি করতে পারব।
১. বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য, শিক্ষিত মানুষ তৈরির জন্য, দেশের সম্পদ তৈরির জন্য। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা আসবে জ্ঞান অর্জন করার জন্য, কাউকে জোর পূর্বক ক্লাসে নিয়ে আসার কোনো অর্থ হয়না। উন্নত দেশগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি নেয়া হয়না। ছাত্রছাত্রীরা যদি মনে করে তাদের ক্লাস করার প্রয়োজন আছে তাহলে তারা এমনিতেই ক্লাসে আসবে। ক্লাসে উপস্থিতি নেয়া একটা হাস্যকর ব্যবস্থা। প্রথমেই ক্লাসে উপস্থিতি নেয়া তুলে দেয়া উচিত এবং এটার সাথে উপস্থিতির জন্য যে নম্বর দেয়ার ব্যবস্থা আছে সেটাও তুলে দেয়া উচিত। বরং, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিত রাখার জন্য দরকার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন। কীভাবে এই পরিবর্তন করা যায় সেটা নিয়ে আমি এখন আলোচনা করবো। এছাড়া, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, আমরা একটা বিষয় যোগ করতে পারি, তাহলো একজন স্টুডেন্ট তার বিভাগে প্রতিবার ঢুকবার সময় ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ঢুকবে এবং বের হবার সময় কার্ড পাঞ্চ করে বের হবে। এই তথ্য গুলো বিভাগের সার্ভারে জমা থাকবে। এতে করে, যদি আমাদের ভবিষ্যতে তার ব্যাপারে কোনো তথ্য দরকার হয়, তাহলে আমরা সহজেই তা পেয়ে যাবো।
২. বিজ্ঞান অনুষদে পরীক্ষা পদ্ধতি হলো, ৩০ নম্বর ইনকোর্স এবং উপস্থিতি। বাকি ৭০ নম্বর হলো, কার্জন হলে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া। আমাদের অধিকাংশ পরীক্ষার প্রশ্ন এমন ভাবে করা হয় যেন একজন স্টুডেন্ট শুধু মুখস্থ করেই এ গ্রেড পেতে পারে । এখানে কে কত ভালো জানে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কে কত ভালো মুখস্থ করতে পারছে। দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার আগে পূর্বের ১০ বছরের প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করছে। যদি একজন শিক্ষক এই প্যাটার্ন থেকে বের হয়ে প্রশ্ন করেন তাহলে সেই কোর্সে ৯০ ভাগ স্টুডেন্ট ফেল করবে। বরং উল্টোটাই হবার কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বই নেই তেমনি জানার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। আমরা শিক্ষকরা যদি প্রশ্নপত্র এমনভাবে নির্বাচন করি যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা মুখস্থ করে উত্তর লেখার বদলে জানার দিকে মনোযোগী হবে, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে আসবে এবং জানার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। এতে করে, বছরের পর বছর ধরে তাদের মুখস্থ করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে সেটারও একটা মানসিক পরিবর্তন আসবে।
৩. আমার মনে হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের জানার আগ্রহ তৈরি করার জন্য এবং ক্লাসে উপস্থিত থাকতে উৎসাহিত করার জন্য নম্বর বণ্টন প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন আনা উচিত। তাদের কে ক্লাসে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। সেটা হতে পারে এসাইনমেন্ট, কুইজ, কোনো বিষয়ের উপর তাদেরকে দিয়ে ক্লাসে প্রেজেন্টেশন করানো বা লেকচার দিতে বলা। আমাদের পরীক্ষার পূর্ণ নম্বর হচ্ছে ১০০। আমরা একে দুইটি ভাগে ভাগ করতে পারি, প্রথমত আমরা ৬০ নম্বর রেখে দিতে পারি ইনকোর্স,
এসাইনমেন্ট, কুইজ, গ্রুপ প্রেজেন্টেশনে। দ্বিতীয়ত, বাকি ৪০ নম্বর এর জন্য তারা কার্জন হলে যাবে এবং পরীক্ষা দেবে। এতে করে পরীক্ষার আগে পড়ার চাপও কমে যাবে এবং তারা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এছাড়া, দেখা যায়, একজন শিক্ষকের ইনকোর্স পরীক্ষা থাকলে সেদিন সেই পরীক্ষার আগের অন্য কোর্স গুলোর ক্লাস বন্ধ থাকে অথবা ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হারও অনেক কম থাকে। এজন্য প্রতিটি বিভাগে ইনকোর্স গুলোর নেবার জন্য ইনকোর্স সপ্তাহ চালু করা উচিত।
৪. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে দরকার একটু সুনির্দিষ্ট একাডেমিক প্ল্যান। একজন শিক্ষক কে অবশ্যই কোর্সের শুরুতে কোর্সের ডেডলাইন, ইনকোর্স, কুইজ এবং বার্ষিক পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্ট করে বলে দিতে হবে। একই সাথে ইনকোর্স এবং কুইজ পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা হবার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ছাত্র ছাত্রীরা তাদের পরবর্তী বছরে ক্লাস শুরুর আগেই যেন পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারে সেটা কনফার্ম করতে হবে। শুধু এই একটি কারণেই অনেক বিভাগে ক্লাস শুরুর ৩-৪ মাস পরও ছাত্র-ছাত্রীদের পুনঃভর্তি নিতে হচ্ছে। এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রমে যেন সেটা ফলো করা হয় সেদিকে নজরদারি করতে হবে। একজন শিক্ষক কে প্রতিটা কোর্স শুরু করার আগে কোর্সের প্রয়োজনীয়তা, কোর্সের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ, ক্লাসের মাঝে কোর্সের আকর্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা, জটিল টপিক পড়ানোর আগে সেই টপিক সম্পর্কে একটা রাফ আইডিয়া দেওয়া, সামান্য ইতিহাস বলা, টপিকটি কেন পড়া হচ্ছে তা জানানো, বর্তমানে কি রিসার্চ হচ্ছে সেই সম্পর্কে জানানো, সেটা নিয়ে স্টুডেন্টদের সাথে কথা বলা উচিত।
৫. আমাদের অনেক বিভাগে বিভিন্ন বর্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ এর মতো। এই বিশাল ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ৩ নং এ উল্লেখিত প্ল্যান কার্যকর করা এক কথায় অসম্ভব। একজন শিক্ষকের পক্ষে কখনোই এতগুলো ছাত্রছাত্রীদের জন্য এসাইনমেন্ট তৈরি করা, কুইজ নেয়া, ইনকোর্স সমূহের এবং বার্ষিক পরীক্ষার খাতা দেখা এবং গ্রেডিং করা, ঠিক সময়ে পরীক্ষার ফলাফল দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের অবশ্যই শিক্ষক সহকারী নিয়োগ করতে হবে। প্রশ্ন হলো, শিক্ষক সহকারী বলতে আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি? আমি তাদেরকে শিক্ষক সহকারী বোঝাতে চাইছি যারা এসাইনমেন্ট ও কুইজ এর স্ক্রিপ্টগুলো দেখা, ইনকোর্স এবং ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া এবং খাতা দেখা এই কাজ গুলো করবে। তারা প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষক সহকারী হিসাবে কাজ করবে। একই সাথে বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি ডিসকাশন ফোরাম ল্যাব থাকবে যেখানে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের কোর্স বিষয়ক যেকোনো সমস্যা নিয়ে যেতে পারবে এবং যারা শিক্ষক সহকারী থাকবে তারা তাদেরকে সাহায্য করবে। প্রশ্ন হলো, এই শিক্ষক সহকারী কে হবে? হতে পারে ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্র-ছাত্রী, মাস্টার্স এর ছাত্র-ছাত্রী, এমফিল বা পিএইচডি গবেষক। এই নিয়োগ দেয়ার পদ্ধতিও হবে অটোমেটিক সিস্টেমে। মানে হলো ফাইনাল ইয়ার, মাস্টার্স এর ছাত্র-ছাত্রী দের মধ্যে যারা ১-৩০ মেধাক্রমে থাকবে তারা সবাই বিভাগের চাহিদা মতো সুযোগ পাবে। এবং সকল এমফিল বা পিএইচডি গবেষকরা এই সুবিধা পাবে। ধরে নিলাম, শিক্ষক সহকারী নিয়োগ দেয়া হলো কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তাদেরকে এই অতিরিক্ত কাজের জন্য কী কী সুবিধা দেয়া হবে? আমার মনে হয়, এই কাজের জন্য তাদের টিউশন ফী মওকুফ করে দেয়া যেতে পারে, একই সাথে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা হবে এবং তারা বিভাগ থেকে এই কাজের জন্য অভিজ্ঞতা সনদও পেতে পারে।
৬. পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক ক্লাসে কেমন পড়ালেন সে বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষকরা ক্লাস রুমে পড়ান কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা সেই শিক্ষক কেমন পড়ালেন এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবার অধিকার নেই। অন্তত তাদের মতামত দেবার যদি সুযোগ থাকতো এবং সেটা যদি শুধুমাত্র সেই শিক্ষকও জানতেন তাহলে হয়তো উনি পরবর্তীতে তাদের মতামত দেখে আরও ভালোভাবে কোর্সটাকে উপস্থাপন করতে পারতেন। আমার মনে হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিটা কোর্স এবং কোর্স শিক্ষকদের নিয়ে তাদের মতামত প্রদান করতে দেয়া এখন সময়ের দাবি।
৭. আমারা জানি জ্ঞানের উৎস হলো বই এবং সেই বই গুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য দরকার লাইব্রেরি। প্রতিটা বিভাগ ভিত্তিক ই-লাইব্রেরি চালু করা দরকার। এখন একটা বই লাইব্রেরিতে আছে কিনা সেটা দেখার জন্য লাইব্রেরি গিয়েই জানতে হবে এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। একজন স্টুডেন্ট বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকেই তার লাইব্রেরি যেন এক্সেস করতে পারে সেই সুবিধা থাকা উচিত। একই সাথে লাইব্রেরিতে ই-বুক ও রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। হতে পারে, লাইব্রেরিতে একটি বই আছে, একজন বইটি তুলে নিয়ে গেলে আরেকজন পড়ার সুযোগ পাবেনা। ই-বুক থাকলে একসাথে অনেকেই সেই বইটি পড়ার সুযোগ পাবে।
৮. ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রমে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের রেজাল্ট সময় মতো জানিয়ে দেয়া। এই রেজাল্ট পাবলিশ করাটা অনেকটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মতো। এই প্রক্রিয়াটা অনেকটা সময় নিয়ে নেয়। প্রতি বিভাগের ওয়েবসাইটে যদি প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট অনলাইনে পাবলিশ করে দেয়া হতো তাহলে কাজটা খুব সহজ হতো। প্রতি শিক্ষকের কাছে অনলাইন এক্সেস থাকবে এবং সহজেই একজন শিক্ষক রেজাল্ট আপলোড করে দিতে পারবে। অনেক কম সময়ে একজন ছাত্র-ছাত্রী জেনে যাবে তার রেজাল্ট। শুধু রেজাল্ট জানতে না পারার জন্য তাদের প্রতিটি বর্ষে অনেকটা সময় নষ্ট হয়, তারা বুঝে উঠতে পারে না, তাদের এখন কোন বর্ষে ক্লাস করা উচিত। পুনঃভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিতে দুর্ভোগ যাতে কম হয় সেদিকেও নজর দেয়া দরকার।
৯. আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, বিভাগের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করা। শিক্ষকদের যেমন ডি.ইউ. পোর্টাল আছে এবং তাদের এক্সেস আছে, একই সাথে ছাত্র-ছাত্রীদেরও স্টুডেন্ট একাউন্ট থাকার ব্যবস্থা করা উচিত। সেখানে স্টুডেন্টদের ছাত্রত্ব থাকাকালীন অবস্থায় সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এটা বাইরের দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। উপরে উল্লেখিত ডিজিটাল প্ল্যান গুলো কার্যকর করার জন্য আমাদের দরকার গ্রুপ অফ আই.টি. প্রফেশনালস যারা এই সিস্টেমটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে ।
১০. মাস্টার্স প্রোগ্রামে এখন ছাত্র-ছাত্রীরা থিসিস এবং নন-থিসিস, এই দুই ধরণের প্রোগ্রামে ভর্তি হয় । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রোগ্রামগুলো রিসার্চ মাস্টার্স এবং টট মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভাগ করা দরকার।
(ক) রিসার্চ মাস্টার্স কী?
-এই প্রোগ্রামে শুধু তারাই ভর্তি হবে যাদের ভবিষ্যতে গবেষক এবং শিক্ষক হবার ইচ্ছে আছে । এটা হবে ২ বছর মেয়াদি প্রোগ্রাম যেখানে একজন স্টুডেন্ট অন্তত ২ বছর একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে গবেষণা করার সুযোগ পাবে কিন্তু তাকে
অবশ্যই ৩ বছরের মধ্যে এই মাস্টার্স প্রোগ্রাম শেষ করতে হবে। এই প্রোগ্রাম চলাকালীন অবস্থায় তাকে যদি রিসার্চ করার জন্য কোনো কোর্সওয়ার্ক করতে হয় তাহলে সে সেটা করবে কিন্তু তার জন্য তাকে কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। এই প্রোগ্রাম শেষে তাকে একটি মাস্টার্স থিসিস জমা দিতে হবে এবং থিসিস কমিটি সেটা মূল্যায়ন করবে।
(খ) টট মাস্টার্স কী?
-এটা হবে ১ বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামে একজন স্টুডেন্ট নির্দিষ্ট সংখ্যক কোর্সওয়ার্ক করবে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট শেষ করবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নন-থিসিস মাস্টার্স প্রোগ্রামের রূপরেখাতেই চলবে।
১১. এটা সত্য যে, আমাদের বিজ্ঞান অনুষদে গবেষণার জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল। এই বরাদ্দ দিয়ে কখনোই ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তোলা সম্ভব নয়। এই জন্য আমরা আমাদের এই সীমিত বরাদ্দকেও যাতে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি সেদিকে নজর দেয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে? প্রতিবছর যখন গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তখন প্রথমেই দেখতে হবে, সেই গবেষণা শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে, সে গবেষণা শেষ হবার পর আমাদের এই বিজ্ঞান অনুষদ তথাপি এই দেশের কী কাজে লাগবে? আমরা অনেক গবেষণা দেখি সেখান থেকে অনেক পাবলিকেশন্স হয় কিন্তু সেটা আর কোনো কাজে আসে না। শুধু তাই না, এই গবেষণা থেকে কী কী নতুন ফাইন্ডিংস হলো সেটাও সবাইকে জানাতে হবে। এতে করে অন্যরাও উৎসাহী হবে। এতে করে দেখা যাবে, আমরা সীমিত বাজেট দিয়েও অনেক ভালো ভালো কাজ করছি এবং এই ধরণের কাজের জন্য দরকার হলে, বিজ্ঞান অনুষদ তার নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ করবে। শুধু গবেষণা করলেই হবে না বরং বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে আমাদের কোলাবোরেশন করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই তাদের কাছ থেকে গবেষণার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাবে এবং সেই বরাদ্দ থেকে যদি ৫% বিজ্ঞান অনুষদে দেয়া হয় তাহলে বিজ্ঞান অনুষদও সেই বরাদ্দ থেকে অন্য শিক্ষকদের গবেষণায় সহযোগিতা করতে পারবে।
১২. বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার জন্য অবশ্যই বিজ্ঞান অনুষদে আলাদা মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা দরকার, বিজ্ঞান অনুষদে ছাত্র-ছাত্রীদের খাবার জন্য ভালো এবং মানসম্মত কোনো ক্যান্টিন নেই, সে ব্যাপারেও নজর দেয়া দরকার। শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য একটি ডে-কেয়ার সেন্টার খোলারও ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পড়াশোনার পাশাপাশি আই.টি. সেক্টরে ছাত্র-ছাত্রীরা যেন ভালো করতে পারে সেজন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এছাড়া, প্রতিটা বিভাগে নিয়মিত সেমিনার, অলিম্পিয়াড এবং কনফারেন্সের আয়োজন করা এবং তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা দরকার।
আমি মনে করি, সমস্যা হয়তো আরও আছে কিন্তু উপরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হলে আমরা খুব দ্রুত একটা ভালো অবস্থানে চলে আসতে পারবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শিক্ষা আর গবেষণায় দেশের সেরা হয়ে উঠুক এই আশা আর ইচ্ছে পূরণের স্বপ্ন নিয়েই হোক আমাদের আগামীর পথচলা।
- গৌতম সাহাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%97%e0%a7%8c%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be/বৃহস্পতিবার, জুন ১৩, ২০১৯
- গৌতম সাহাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%97%e0%a7%8c%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be/বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৮, ২০১৯