fbpx

ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

বাংলাদেশের মুদ্রা

কারেন্সি বা মুদ্রা আমাদের নিত্যদিনের জীবন যাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার অপরিহার্য। এই অত্যাবশ্যকীয় বস্তুটি আমরা নিয়মিত প্রচুর ব্যবহার করলেও অনেক ক্ষেত্রের এর ইতিহাস, এর বিশেষত্ব, এটি তৈরির প্রক্রিয়া প্রভৃতি সম্পর্কে আমরা বেশির ভাগ মানুষই তেমন কিছু জানি না। এ বিষয়ে যাদের কৌতুহল রয়েছে এ লেখায় সে কৌতুহল মেটানোর কিছু প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আমরা খুবই সংক্ষেপে আমাদের দেশে প্রচলিত ও অপ্রচলিত মুদ্রা বিষয়ে কিছু কথা বলবো এখানে।

বাংলাদেশে মুদ্রার শুরুটা কীভাবে এটা যদি আমরা খুঁজতে যাই তাহলে দেখবো স্বাধীনতার পর পরই সরকার বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রা চালু করার উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর আর্টিকেল ৭এ(ই) অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক-এর অন্যতম মুখ্য কাজ হলো দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ ব্যাংক জনসাধারণের লেনদেনের সুবিধার্থে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিচ্ছন্ন নোট ও মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করে। ‘টাকা’ হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রার নামকরণ হয় স্বাধীনতার পর পরই, তবে এ সময়ে লেনদেনের সুবিধার্থে পাকিস্তানী রুপি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন মুদ্রা হিসেবে চালু থাকে। The Bangladesh Bank (Demonestration of Currency Notes) Order, 1972 এর সূত্রে প্রথমে ৫০ রুপি মূল্যমানের পাকিস্তানি নোটটি ৫ মার্চ ১৯৭২ তারিখ হতে অচল ঘোষণা করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতির ৬ জুন ১৯৭২ তারিখের আদেশ বলে ৫ ও ১০ রুপির পাকিস্তানি নোট ৮ জুন ১৯৭২ তারিখ হতে এবং ১ ও ২ রুপির পাকিস্তানি নোট ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ তারিখ হতে অচল ঘোষণা করা হয়।

স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে নিজস্ব কারেন্সি হিসেবে ‘টাকা’ অবমুক্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিদর্শন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়। এ সময় ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয় ১ টাকা ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নোট যা ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ অবমুক্ত করা হয়। এ নোটগুলোর প্রতিটিতেই স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র মুদ্রিত ছিলো। এরপর ১৯৭২ সালের ২ মে তারিখে ১০ টাকা মূল্যমানের নোট এবং ২ জুন তারিখে ৫ টাকা মূল্যমানের নোট বাজারে অবমুক্ত করা হয়। এ দুটো নোটেও বাংলাদেশের মানচিত্র মুদ্রিত ছিলো। সে সময়ে ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার মূল্যমান ৭.৫ টাকা থেকে ৮ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হয়।

কাগজের নোটের পাশাপাশি ধাতব মুদ্রাও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে অবমুক্ত করে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই তারিখে ১ পয়সার ধাতব মুদ্রা, ১৯৭৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে ৫ ও ১০ পয়সার ধাতব মুদ্রা, ১৯৭৩ সালের ১৫ নভেম্বর ২৫ পয়সার ধাতব মুদ্রা, ১৯৭৪ সালের ২ ডিসেম্বর তারিখে ৫০ পয়সার ধাতব মুদ্রা এবং ১৯৭৫ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে ১ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা অবমুক্ত করে।

মুদ্রা তৈরি বা নোট ছাপানোর বিষয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় জাল নোট এর খবর পেয়ে থাকি, কিন্তু আসল নোটের ছাপার বিষয়ে তেমন খবর পত্র পত্রিকায় আমরা দেখি না। বাংলাদেশ স্বাধীনতার অব্যবহিত পর নিজস্ব মুদ্রা ও ব্যাংক নোটের প্রচলন করে। সে সময় দেশে নোট প্রিন্টিং প্রেস না থাকায় অন্য দেশ থেকে তা মুদ্রণ করিয়ে আনা হতো। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মুদ্রণের উদ্দেশ্যে দেশের অভ্যন্তরে ১৯৭৬ সালে সরকার একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকার দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস স্থাপনের ক্ষমতা অর্পন করে। ব্যাংক নোট, কারেন্সি নোট ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী যথা ব্যাংক চেকের মুদ্রণ, জুডিসিয়াল ও নন্-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপার, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, সনদ, ডাক বিভাগের ডাক টিকিট, মূসক আদায়ের ব্যান্ড রোল ইত্যাদি আমদানি না করে তা দেশেই মুদ্রণের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর অর্থায়নে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তদানুযায়ী একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কোম্পানি গঠনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে ১৯৯২ সালের ২২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি ‘দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ’ নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, ঢাকা কার্যালয়ে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সংক্ষেপে ‘এসপিসিবিএল’ যা লোকমুখে ‘টাকশাল’ নামে অধিকতর পরিচিতি পায়। একশত কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন এবং পঞ্চাশ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন সম্বলিত এ কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে একজন চেয়ারম্যান ও ছয় জন পরিচালক নিয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ এর মাধ্যমে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গভর্নর পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

ব্যাংক নোট উৎপাদনের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন লাইনে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সামগ্রীও যুক্ত হয়। ফলে বর্তমানে ব্যাংক নোট, কারেন্সি নোটের পাশাপাশি নন্-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, পোস্টাল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প, এনভেলপ, বিড়ির ট্যাক্স লেবেলে, সিগারেটের স্ট্যাম্প ও ট্যাক্স লেবেল, কোমল পানীয়, মিনারেল ওয়াটার ও টয়লেট সোপের স্লিভ, স্ট্যাম্প ও ট্যাক্স লেবেল, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, চেক বই, ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার, সঞ্চয়পত্র, বিআইডব্লিউটিএ এর ক্যাশ এমআইসিআর চেক সার্টিফিকেট ও অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, জিএসপি ফর্ম, কুপন প্রভৃতি আর্থিক মূল্যসহ নিরাপত্তা সামগ্রীর মুদ্রণ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কারণে প্রতি বছরই এসব নিরাপত্তা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে।

অর্থনীতির প্রধান বাহন টাকা। এই টাকা তৈরি করতেও প্রয়োজন হয় টাকার। মানুষের হাতে হাতে ঘোরে কাগজের তৈরি এ পণ্যটি। ব্যবহারকারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় টাকা ছেঁড়ে, পোড়ে কিংবা রং পরিবর্তন হয়। ফলে একসময় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব টাকা পুড়িয়ে ফেলে। এরপর নতুন করে সে টাকা ছাপতে সরকারকে খরচ করতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এক টাকার একটি কয়েন তৈরি করতে ৯৫ পয়সা খরচ হয়। দুই টাকার কয়েন তৈরিতে খরচ হয় ১ টাকা ২০ পয়সা। আর পাঁচ টাকার একটি কয়েন তৈরিতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৯৫ পয়সা।কয়েনের মান বেশি হলে সে তুলনায় খরচ অনেক কম পড়ে। বাজারে প্রচলিত সবচেয়ে বড় নোট এক হাজার টাকার নোট। এই মূল্যমানের একটি নোট ছাপাতে প্রায় ৭ টাকা খরচ হয়। পাঁচশত টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৬ টাকার মতো। অন্য দিকে, একশত টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে সাড়ে ৪ টাকা।এছাড়া,পঞ্চাশ টাকা ও বিশ টাকার একটি নোট ছাপাতে আড়াই টাকা, দশ টাকার নোট ছাপাতে ২ টাকা ২০ পয়সা এবং পাঁচ টাকার নোট ছাপাতে খরচ হয় ২ টাকার মতো। আর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই সবচেয়ে ছোট কাগুজে নোটে পরিণত হওয়া দুই টাকার নোট ছাপানোতে খরচ পড়ে দেড় টাকা।

কাগুজে নোটগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টাঁকশাল বা দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড থেকে ছাপানো হয়। তবে নোট ছাপানোর যাবতীয় উপকরণ কাগজ, কালি, রঙ, নিরাপত্তা সুতা ইত্যাদি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক ঘটনা, বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিবস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, রাষ্ট্রের বিশেষ দিবস উদযাপন সহ বিবিধ কারণে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মারক মুদ্রা ও নোট ইস্যু করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১২টি স্মারক মুদ্রা,  ৫টি স্মারক নোট ও ব্যাংক নোটের ১টি স্মারক সংখ্যা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশের ২০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম রৌপ্য স্মারক মুদ্রা ইস্যু করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২০০০ সালে সর্বপ্রথম স্বর্ণ স্মারক মুদ্রা ইস্যু করা হয়। মহান বিজয় দিবসের ৪০ বছর উদযাপনকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্মারক নোট ইস্যু করা হয়। তাছাড়া,  ১৯৯৬ সালে আতিয়া জামে মসজিদের ছবি সম্বলিত ১০ টাকার নোটের জল ছাপের নীচের অংশে ‘বিজয় দিবস রজত জয়ন্তী ৯৬’  শব্দগুলি মুদ্রণ করে নোটটির একটি স্মারক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত সকল স্মারক মুদ্রা বিদেশি মিন্ট হতে এবং সকল স্মারক নোট দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ এ মুদ্রণ করা হয়েছে। সকল স্মারক মুদ্রা ও নোটগুলো ঢাকার মিরপুর-২ এ অবস্থিত টাকা যাদুঘরে দেখতে পাওয়া যাবে।

এবারে আমরা দেখি বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত কী কী স্মারক মুদ্রা ও নোট চালু করেছে।

স্মারক মুদ্রা

২০তম বিজয় দিবস১৯৯১: বাংলাদেশের ২০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৯১ সালে এ মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি এবং অপর পিঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এক টাকা অভিহিত মূল্যের গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩১.৪৭ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮.৬১ মিলিমিটার যা জার্মানি হতে ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা প্রস্তুতকৃত।

২৫তম অলিম্পিক গেমস১৯৯২: পঁচিশতম অলিম্পিক গেমস উদযাপন উপলক্ষে ১৯৯২ সালে এ মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে অলিম্পিক গেমসের মশাল বহনকারী ক্রীড়াবিদের অপূর্ব দেহভঙ্গিমা সম্বলিত ছবি এবং অপর পিঠে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এক টাকা অভিহিত মূল্যের গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩১.৪৭ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮.৬১ মিলিমিটার যা জার্মানি হতে ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা প্রস্তুতকৃত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রজত জয়ন্তী১৯৯৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের রজত জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে এ মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনের ছবি এবং অপর পিঠে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। দশ টাকা অভিহিত মূল্যের অষ্টভূজাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩১.৪৭ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮.৬১ মিলিমিটার যা স্পেন হতে ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা প্রস্তুতকৃত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী১৯৯৬: বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে এ মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং অপর পিঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি মুদ্রিত রয়েছে। দশ টাকা অভিহিত মূল্যের গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩১.৪৭ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮.৬১ মিলিমিটার যা স্পেন হতে ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা প্রস্তুতকৃত।

বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন১৯৯৮: বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ মুদ্রাটি ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর ছবি এবং অপর পিঠে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। ৯০% ফাইন সিলভার এবং ১০% নিকেল দ্বারা স্লোভাকিয়া থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩০ গ্রাম এবং ব্যাস ৪০ মিলিমিটার।

বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন১৯৯৮: বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ মুদ্রাটি ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে বঙ্গবন্ধু সেতুর ছবি এবং অপর পিঠে তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য “অপরাজেয় বাংলা” মুদ্রিত রয়েছে। ১০০% নিকেল দ্বারা কানাডা থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ২৫ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৫ মিলিমিটার।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস২০০০: জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করার প্রেক্ষিতে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্বর্ণমুদ্রাটি ২০০০ সালে ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ছবি এবং অপর পিঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো মুদ্রিত রয়েছে। কানাডা থেকে প্রস্তুতকৃত ২২ ক্যারেট স্বর্ণের গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ১০ গ্রাম।

বাংলাদেশ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১: বাংলাদেশ ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অন্যতম স্বাগতিক দেশ হবার গৌরব অর্জন করে।  বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০১১ সালে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১ এর লোগো এবং অপর পিঠে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি এর প্রতিকৃতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও মুদ্রার মূল্যমান মুদ্রিত রয়েছে। ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা জার্মানি থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ৩০ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮ মিলিমিটার।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মজয়ন্তী২০১১: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০১১ সালে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক মুদ্রাটি ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি এবং তাঁর স্বাক্ষর মুদ্রিত রয়েছে। ৯৯৯ ফাইন সিলভার দ্বারা জার্মানি থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ২২.১০ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮ মিলিমিটার।

বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বৎসর২০১১: বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বৎসর (১৯২১-২০১১) পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক মুদ্রাটি ২০১১ সালে ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবক্ষ প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে বিদ্রোহী কবিতার ৪টি চরণ এবং কাজী নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর মুদ্রিত রয়েছে। ৯৯৯ ফাইন সিলভার দ্বারা নেদারল্যান্ডস থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ২৫ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮ মিলিমিটার।

বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপন২০১১: বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক মুদ্রাটি ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের ছবি এবং অপর পিঠে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। ৯৯৯ ফাইন সিলভার দ্বারা নেদারল্যান্ডস থেকে প্রস্তুতকৃত গোলাকৃতি এ মুদ্রাটির ওজন ২৫ গ্রাম এবং ব্যাস ৩৮ মিলিমিটার।

জাতীয় যাদুঘরের শতবর্ষ পূর্তি২০১৩: বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী (১৯১৩-২০১৩) উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একশত টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক মুদ্রাটি ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা হয়। মুদ্রাটির একপিঠে Horseman terracotta plaque 18th century এর প্রতিকৃতি এবং অপর পিঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম মুদ্রিত রয়েছে। ৯৯৯ ফাইন সিলভার দ্বারা জাপান থেকে প্রস্তুতকৃত ৩৮ মিলিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট খাঁজকাটা ও গোলাকৃতি এ স্মারক মুদ্রাটির ওজন ২২ গ্রাম।

স্মারক নোট

বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর২০১১: বাংলাদেশের মহান বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য চল্লিশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক নোটটি ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান স্বাক্ষরিত ১৪০ মিমি × ৬২ মিমি পরিমাপের এ স্মারক নোটটির একপিঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি মুদ্রিত রয়েছে। অপর পিঠে ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ বাংলাদেশে প্রচলিত সকল স্মারক নোট মুদ্রণ করে থাকে।

ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর২০১২: বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ষাট টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক নোটটি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান স্বাক্ষরিত ১৪০ মিমি × ৬২ মিমি পরিমাপের এ স্মারক নোটটির একপিঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ছবি এবং এর মধ্যভাগে নীচে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” মুদ্রিত রয়েছে। অপর পিঠে পাঁচজন ভাষা শহীদের ছবি এবং বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনারের ছবি মুদ্রিত রয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ পূর্তি২০১৩: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী (১৯১৩-২০১৩) উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে একশত টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক নোটটি ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান স্বাক্ষরিত ১৪০ মিমি × ৬২ মিমি পরিমাপের এ স্মারক নোটটির একপিঠে Horseman terracotta plaque 18th century এর প্রতিকৃতি এবং প্রতিকৃতির উপরে “বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ ১৯১৩-২০১৩” লেখা রয়েছে। নোটের অপর পিঠে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ভবনের ছবি রয়েছে; ছবির উপরিভাগে “100 Years of Bangladesh National Museum 1913-2013” মুদ্রিত রয়েছে।  

দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ এর ২৫ বছর পূর্তি – ২০১৩: দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ (এসপিসিবিএল) এর ২৫ বছর পূর্তি (১৯৮৮-২০১৩) উপলক্ষে পঁচিশ টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক নোটটি ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান স্বাক্ষরিত ১২৩ মিমি × ৬০ মিমি পরিমাপের এ স্মারক নোটটির একপিঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি, ব্যাংক নোট ও স্ট্যাম্পের ছবি, তিনটি চিত্রা হরিণ ও একটি দোয়েল পাখির ছবি রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি মুদ্রিত রয়েছে। অপর পিঠে এসপিসিবিএল ভবনের প্রতিকৃতি ও সুদৃশ্য ডিজাইন রয়েছে।

উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ -মার্চ ২০১৮: স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অভিযাত্রার গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য “উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ-মার্চ ২০১৮” শীর্ষক সত্তর টাকা অভিহিত মূল্যের এ স্মারক নোটটি ২২ মার্চ ২০১৮ তারিখে ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত ১৪০ মিমি × ৬২ মিমি পরিমাপের এ স্মারক নোটটির একপিঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, বাংলাদেশের মানচিত্র, বাইনারি সংখ্যা ইত্যাদি মুদ্রিত রয়েছে এবং অপর পিঠে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ও নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর নকশা মুদ্রিত রয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আশা করা যায় যে, উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর কাতারেও অন্তর্ভুক্ত হবে। এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই স্মারক নোটটির অভিহিত মূল্য সত্তর টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম
যুগ্ম পরিচালক, গভর্নর সচিবালয় | বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০