সিনেমাঃ শর্ট টার্ম ১২ (Short Term 12)
পরিচালক : ডেস্টিন ড্যানিয়েল ক্রেটন
IMDb রেটিংঃ ৮/১০
নিজস্ব রেটিংঃ ৯/১০
মুক্তি সালঃ ২০১৩
দৈর্ঘ্যঃ ৯৭ মিনিট
একটা ছিমছাম বাড়ি। বসার ঘরে ঢুকলেই দেখা যাবে এক ঝাঁক কিশোর। তাদের সবার নামের সাথে কিন্তু ‘ট্রাবল্ড ইয়ুথ’ শব্দটি যুক্ত। এই এক ঝাঁক কিশোর, সকলেই বেশ সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে। তাদের মনে অনেক চিন্তাই এসেছে, রাগ বা ক্ষোভের বশে অনেক কিছুই করে ফেলতে চেয়েছে৷ কিন্তু একটা জিনিসের কাছে সবাই আটকে গিয়েছে – ‘জীবন’। এত নেতিবাচকতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত কীভাবে সবকিছুকে ঠিকঠাক করে আনা যায়; সেটির সফল দৃশ্যায়নই এই সিনেমার সৌন্দর্য।
‘শর্ট টার্ম ১২’ – কিশোরকিশোরীদের জন্য একটি আবাসিক পুর্নবাসন কেন্দ্র৷ তারা সবাই ‘অ্যাট রিস্ক অ্যাডোলেসেন্টস’, তাদের কারো বাবা মা আছে, কারো বা নেই। সিনেমায় তাদের জীবনের কাহিনী প্রকাশের ধরণ গতানুগতিক হলিউড সিনেমাগুলো থেকে কিছুটা ভিন্ন।
ঠিক কিছুদিন পরেই ১৮ বছর বয়স হবে সিনেমার এক চরিত্র ‘মারকাস’ এর। তাকে এই কেন্দ্র ছেড়ে তখন চলে যেতে হবে৷ তার এই ১৮ বছরের জীবনের না বলা সব কষ্টের কথাগুলো দিয়ে সে তৈরি করে একটা র্যাপ গান। সিনেমার আরেক চরিত্র ‘জেইদান’, তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সে প্রকাশ করার চেষ্টা করে অক্টোপাস এবং তিমি মাছের একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে, যেই গল্পের সাথে সে নিজের আঁকা ছবিও সংযুক্ত করে। এই ঘটনাগুলোর প্রকাশ আপনার চোখকে শুষ্ক রাখতে পারবে কি না, এই বিষয়ে আমি বিশেষ সন্দেহ প্রকাশ করছি।
সিনেমায় উঠে আসা ঘটনাগুলো আমাদের অনেকের সাথেই হয়তো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিলে যেতে পারে। যার ফলে দর্শক সিনেমার সাথে একেবারে মিশে যেতে সক্ষম হবে৷
সুন্দর একটা গল্প এবং এই সুন্দর গল্পের উপস্থাপনটাও দারুণ। অসাধারণ অভিনয় করেছে সবাই, বিশেষ করে ‘ব্রি লারসন’-এর অভিনয় ছিল চমৎকার। ‘শর্ট টার্ম ১২’ সেন্টারের মেনটর হিসেবে কাজ করে ‘গ্রেইস’ (ব্রি লারসন)। সিনেমায় তার নিজের জীবনের সাথে ছেলেমেয়েগুলোর ঘটনার মিল থাকায় সে খুব আন্তরিকভাবে তাদের সাথে মিশে যেতে পারে এবং তাদের ভালোর জন্য সে সবসময় নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। ‘গ্রেইস’ চরিত্রটি দেখে হয়তো সবারই শ্রদ্ধা ও ভালোলাগা জন্ম নিতো, কিন্তু সেটিকে নিশ্চয়তার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ‘ব্রি লারসন’, তার সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে।
ছবিটি লেখক ও পরিচালক ‘ডেস্টিন ড্যানিয়েল ক্রেটন’-এর বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রসূত। সিনেমাটিতে কৃত্রিমতা কম থাকার পেছনে এটি একটি বিশেষ কারণ। সম্পুর্ন ভিন্ন দুটি প্রেক্ষাপট থাকা সত্ত্বেও সিনেমার শুরু এবং শেষ দৃশ্যের চিত্রায়ন প্রায় একইরকম, যে বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
জীবনে অনেক কঠিন সময়ের সামনে এসে দাঁড়াতে হবে। হয়তোবা নিজের প্রতি ক্ষোভ চলে আসবে, কিংবা আশেপাশের মানুষের প্রতি৷ হুট করেই কিন্তু আশার আলো চলে আসে জীবনে। জীবন তখন বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পায়, সেই আশার আলোকে সঙ্গী করে। সিনেমায় এই কথাগুলোর প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায় এবং এই সিনেমাকে নির্দ্বিধায় প্রিয় সিনেমার তালিকায় রাখা যায়।
- সৈয়দা সামিয়া রহমানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%88%e0%a7%9f%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১