fbpx

নভেম্বর ১০, ২০২৪

রিফিউজি

১.

তুমি রোহিঙ্গা না হলে কী হতে
আরাকানে তোমার পয়দায়েশ
কেমন হতো যদি জন্মাতে বার্মায় কিম্বা বঙ্গদেশে
নাফ নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ পাহাড়ের বুক
হয়ে যেত সমতল কৃষিক্ষেতের উর্বর ভূমি

শিখড়চূড়ায় জুমচাষ, ঢালে ঢালে তরঙ্গায়িত ফলফসল

আর তোমার নরম বুকের মাটিতে মুখ গুঁজে লাঙল চষা; দুটোই আমার কাছে পবিত্র কর্তব্যের বরাত।

আজ তুমি রোহিঙ্গা মুসলিম, উদ্বাস্তু। শরণার্থী। আলাওলের কাব্য সভাসদ থেকে শঠ নিপীড়ক বুদ্ধিস্ট দ্বারা আক্রান্ত। ইজ্জৎ সম্ভ্রম খুইয়ে জান হাতে পালিয়েছো সমুদ্রপাড়ের বাংলাদেশে।

তোমার জন্য খোদার রহমত নেমে আসুক সারা বাংলাদেশে।

২.

জালিম তোমার নাম দিয়েছে বিদ্রোহী
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তুমি উম্মতে নববী
তোমার রক্তে জমেছে আরব সাগরের উত্তপ্ত বালু
কলিজায় সভ্যতার আদিতম বীজতলা
তোমার ঘর ভেঙেছে সৌদ বংশের শেখরা
যারা আল্লাহর ঘর কাবা শরিফের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত
আল্লাহর ঘর হেফাজত ক’রে ভেঙে ফেলছে আল্লাহর বান্দাদের ঘর
শত শত শিশু ক্ষুধার্ত শুকিয়ে কংকাল ক্লিষ্ট মায়ের বুকে
মমতাময়ী মায়ের শূন্য বুকে শুকনো ঘাস
নবী কাঁদে দেখো উম্মতি উম্মতি বলে

তোমার অপরাধ শাসকদের খেরোখাতায় নাম লিখাও নাই
তোমার বর্ণবৈচিত্র্যে ইমান নাই নবীর দেশের ওইসব অধম পাপীদের
হায়! নবী বেঁচে থাকলে আজ তোমাকে আত্নাহুতি দিতে হতো?
হে নবী! এ আপনি কাদের কব্জায় কাবার গেলাফ তুলে দিয়ে গেলেন; এদের হাতমুখ আজ  আপনার উম্মতের লোহিতকণায় রঞ্জিত।

হে দয়ার নবী ইনসাফের বাদশা! আপনি এরশাদ করেছিলেন, ‘আমার উম্মত যেন সম্পদের পাহাড় না গড়ে’।
অথচ দেখেন আপনার পরম্পরাগত বংশের সৌদ-শায়েখরা পেট্রো-ডলারের স্বর্ণপর্বত বানিয়ে ফেলেছে আর ওদিকে সিরিয়ার মরুদেশে লোকগুলো বোমার আঘাতে, যুদ্ধের ঘানি টানতে টানতে এবং ভূখানাঙ্গা দেহে আল্লা আল্লা জিকির করছে।

হায় আজ যদি আবু জর গিফারি জীবিত থাকতেন।
যিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণায় ইমান আনতে পারেন নাই। ফলে, বুকভরা অভিমান নিয়ে চলে গেছিলেন শামদেশে। বস্তুতপক্ষে নবীদের ব্যক্তিগত সম্পদ থাকে না। নবীরা যেখানে দেহ রাখেন সেই স্থানই হয়ে যায় তাদের ধাম। মুসলমানদের জবানে যাকে আমরা রওজা বলি।

মানুষের নিজের বলে কি কিছু আছে? আবু জর উপলব্ধি করেছিলেন নাই।
মানুষের দেহ এবং দেহের অধিক রুহ আর দেশকালপাত্র সবই পরম আল্লাহর সমীপে সমর্পিত।
‘লিল্লাহি ফি ইয়াদি’ এসব আল্লাহর মালিকানায়। আমি শুধু দেখভাল করি। এটাই সিরিয়া-প্রবাসী, দুনিয়াবিরাগী ও নির্জনতাপ্রিয় মহান সাহাবি গিফারির তাত্ত্বিক বিশ্বাসের ভিত্তি।

আবু জর মানুষের কাছে নবীর আমলের সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনধারার অনুসরণ আশা করতেন। তাঁর প্রত্যাশা ছিল সকলেই তাঁর মতন ধন-দৌলতের প্রতি সম্পূর্ণ নিরাসক্ত হোক। তাঁর আল্লাহ-সমর্পিত বিশ্বাস ও মতবাদে আগামীকালের জন্য কোন কিছুই আজ সঞ্চয় করা যাবে না। তিনি বিশ্বাস করতেন, অন্যকে অভুক্ত ও উলংগ রেখে সম্পদ পুঞ্জিভূত করার কোন অধিকার কোন মুসলিমের নেই।

ওহে সিরিয়ার জনগোষ্ঠী
আরব হয়েও তুমি আরবদের বিমানের বোমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ।
যেখানে একদা আদ-সামুদ আল্লাহর গজবে সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল আর পরবর্তী উম্মতের জন্য হয়ে আছে উৎকৃষ্টতর উদাহরণ।

হে আরব, তোমার জন্য বহুশত মাইল দূর থেকে আরেক মুসলমান ভায়ের ঈমানি ভালবাসা।

mahmudul hasan
শিক্ষার্থী | বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ২০১৪ - ২০১৫