একাডেমিক কমিটির মিটিং-এ সবসময় আমি আর সাজ্জাদ পাশাপাশি বসতাম। আমি তার ফুপি, ও আমার প্রিয় নেফ। মিটিং-এ খুব কমই মনোযোগ থাকত আমাদের, অন্তত আমার। প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মতই খুনশুটি চলতো। বয়সে বড় হওয়ার কারণে চেয়ারম্যানও খুব বেশি কিছু বলতো না আমাকে, মাঝে মধ্যে মৃদু তিরস্কার ছাড়া। মিটিং এর ফাঁকে ফাঁকে নিচুস্বরে অনর্গল কথা আর হাসাহাসি চলতেই থাকতো দু’জনের মধ্যে। প্রায়শই কোন ব্যাপারে একমত হলে মিটিং চলাকালেই হাই-ফাইভ করতাম আমরা। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়াসিম একদিন বললো, “এখন মিটিং-এ আপনাকে তো টেবিলের অন্যপাশে বসতে হবে, ভাতিজার সাথে হাই-ফাইভ করবেন কিভাবে?” আমি বলেছিলাম, “উই উইল ফাইন্ড আওয়ার ওয়ে।” হায়! ব্যাপারটা সহজ করার জন্যই বোধহয় ও চলেই গেল।
সাজ্জাদ আমার চেয়ে বয়সে কত ছোট হবে, ১০ বছর? কিংবা হয়তো তারও বেশি। বয়সের এতো পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কখন, কিভাবে যে ও আমার এত কাছের বন্ধু হয়ে উঠলো! আমি এই দীর্ঘ জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি। কিন্তু ওর মত এত নিরাপদ মানুষ আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। “নিরাপদ” – হ্যাঁ, এটাই ওর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ। কোন রকম হিংসা, রাগ ছাড়া একজন মানুষ এ পৃথিবীতে থাকতে পারে, সাজ্জাদকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমি কত যে বিষয় নিয়ে ওর সাথে গল্প করতাম – ফুপ্পার (আমার হাজবেন্ড) সাথে ঝগড়া, রমিজ (ড্রাইভার) এর বোকামি, শ্বশুরবাড়ির সমস্যা, কাজের লোকদের বৃত্তান্ত, কিছুই বাদ যেত না। মন দিয়ে সব কিছুই শুনতো ও।
কানাডা থেকে ফোনে একদিন জানালো রুম্মানার কথা, বিয়ের ব্যাপারে স্যারের সাথে কথা বলতে বললো। আমিও মহা উৎসাহে কাজে লেগে গেলাম। নিয়ম মতো সব কিছুই হয়ে গেল। বিয়েতে ডেমরায় ওর শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা।
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একাডেমিক কমিটির মিটিং এর লিংকটি সব সময় সাজ্জাদই আমাকে তৈরি করে দিত। ২৮/০১/২০২১ তারিখের নির্ধারিত একাডেমিক কমিটির মিটিং-এর লিংকটিও সাজ্জাদ তৈরি করে দিয়েছিলো। ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার শেষবারের মতো কথা হয়। স্বভাবসুলভ গলায় জিজ্ঞেস করলো, “ফুপি, লিংক পাঠাইছি, পাইছেন?” সেদিন সকালেই ওর ড্রাইভারকে রুম থেকে কিছু জিনিস নিয়ে যেতে দেখেছিলাম। সেটা মনে আসাতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি রুম থেকে জিনিসপত্র নিয়ে গেছ কেন? আর কি অফিসে আসবা না?” ফুপির কথার মান রাখতে গিয়েই কি ও রাত না পোহাতেই চলে গেল!
আমার প্রিয় নেফ, আমি হয়তো তোমাকে আপন সন্তানের মতোই ভালোবেসেছিলাম। তুমি ছিলে আমার কাছের মানুষদের মধ্যেও সবচেয়ে কাছের। আল্লাহ তোমাকে সব কষ্ট থেকে দূরে রাখুন। তোমার উপরে উনার রহমতের চাদর বিছিয়ে রাখুন। তুমি যেখানেই থাকো, এ বিগ হাই-ফাইভ টু ইউ।
- সায়েমা শারমিনhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
- সায়েমা শারমিনhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a8/শনিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২০