fbpx

অসময়ে অসমাপ্ত

বহুদিন পরে আজ লিখতে বসেছি, প্রায় ২ বছর পর। তবে আজ কোনো গল্প বা কবিতা নয়, আজ লিখব নিজের কিছু ধ্যান-ধারণা নিয়ে। সুপ্রিয় পাঠক, আপনাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি ব্যক্তি হিসেবে অনেক বেহিসাবি নাকি হিসাবি, তাহলে ৯০ শতাংশের উত্তরই হয়ত আসবে, “আমি প্রচন্ড বেহিসাবি এবং আবেগের বসে কাজ করে ফেলি”।  কিন্তু হিসাবি মানুষ চট করেই বলবেন না যে তিনি হিসাবি নাকি বেহিসাবি। তিনি কিছু চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দিবেন যে তিনি কখনো হিসাবি, কখনো বা বেহিসাবি।

তবে আজকে হিসাব, বেহিসাবের প্রলাপ কেন? তাও আবার এই শেষ প্রহরে? প্রলাপের অবশ্য প্রয়োজন নেই, তবে আজ বুঝতে পারছি হিসাব, বেহিসাবের ব্যাপারটা অনেকটা পরিসংখ্যানের সিস্পস্নস প্যারাডক্সের মতন। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, হিসাবি এবং বেহিসাবি মানুষের মধ্যে কারা বেশি সুখি? এর উত্তর নিয়ে হয়ত ভিন্ন ধরনের কনফিউশান তৈরি হবে না। গণিতের প্রোবাবিলিটি থিওরি ব্যবহার করে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, পপুলেশন যদি এইখানে ক্লোজ টু ইনফিনিটি হয় তাহলে নিশ্চয়ই এর সম্ভাবনা হিসাবি মানুষেদের দিকেই বেশি হবে।

চলুন আগে বেহিসাবি মানুষের কথাই ধরা যাক, তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করবে না, হুটহাট সিদ্ধান্ত নিবে। আবেগের ঘনছায়া তাদের মধ্যে সর্বদা বিরাজমান থাকবে। কেমিস্ট্রি তাদের কারো অনেক বেশি পছন্দ না হলেও, কেমিক্যাল রিয়েকশন তাদের ব্রেইনেই হয়ত সবচাইতে বেশি হয়। কোনো সিচুয়েশন হয়ত রিড করবে না তারা, আবেগের বসেই অনেক কিছু করে বসে বা বলে বসে৷ উক্ত কারণ বশতই হয়ত তাদের জীবনে উত্থাল-পাথাল লেগেই থাকে। দূর থেকে দেখলে এদের আপনি কখনোই হয়ত পছন্দ করবেন না, মনে হতে পারে সব যায়গায় প্যাঁচ লাগানোই এদের কাজ। সাময়িকভাবে ভুলভাল বেশি করায় এদের জীবনটা একটু অগোছালোই হয় সাধারণত, তখন আপনাদের এক অংশ মনে করতেই পারেন যে এরা বেশ অখুশি। কিন্তু আপনি এদের কাছে যান, দেখবেন এরাই সবচাইতে সরল প্রকৃতির,  আপনাকে অনেক কিছু অসংকোচে বলে দিচ্ছে। কিন্তু এদের এই আবেগের ঘনঘটা লা-শাতেলিয়ার নীতির মতন চলতে থাকায়, প্রকৃত অর্থে সুখি এরাই থাকে। এদের কষ্টটা সাধারণত খুব সাময়িক। কেননা কষ্ট এলেও কষ্ট পাবার ফলাফল এমনভাবে প্রশমিত হয় যেন তা আবার সুখ এনে দেয়। লালসালু উপন্যাসের জমিলার কথাই ধরুন না, বাহ্যিকভাবে তাকে অসুখি দেখালেও, আপন দুনিয়ায় সে ছিলো সুখি এবং প্রচন্ড বেহিসাবি। এই ধরনের মানুষদের জীবনটা হয় সাধারণত সাহিত্যিক।

এইবার আসি হিসাবি মানুষের কাছে, এরা সাধারণত কিছুটা কম প্রাণচাঞ্চল্যকর হয়। একটা কথা বা ঘটনাকে নানান আঙ্গিকে বিচার বিবেচনা করার চেষ্টা করে থাকেন এরা। কিন্তু আবেগ এদেরও আছে। সাময়িকভাবে ঘটা একটি ঘটনা নিয়ে তারা অনেক বেশি ভাবেন। তারা তাদের একশন নিয়ে খুব সচেতন থাকার চেষ্টা করেন। যদিও সবসময় বিবেকের সর্বোচ্চ প্রয়োগ তারা ঘটাতে পারেন না, আবেগ এসে সেই বিবেকের জায়গাটাকে বেশ দূর্বল করে দিয়ে যায়। এরা ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি সংকোচ বোধ করে থাকেন। মানুষের মন যেহেতু, আবেগ দিয়ে অনেক কথা হয়ত বলতে চান বা করতে চান। কিন্তু হাইজেনবার্গের থিওরির মতন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে নিজের কর্ম বা বাণীকে তুলে দিতে চান না তারা। এক প্রকার অশান্তি তাই তাদের ঘিরে রাখে সর্বদা৷ দূর থেকে দেখলে এই মানুষগুলোর জীবন খুব পারফেক্ট মনে হয়,কোন ঝামেলা নাই, গেঞ্জাম নাই, সবইতো ঠিকঠাক চলছে। এরা সবসময় মুখে একটি হাসি বজায় রাখে। মনীষীদের কথায় এরা প্রচন্ড বিশ্বাস রাখেন, তাই “smile is the best attitude” এইটি মেনে চলার চেষ্টা করে। প্রকৃত অর্থে এরাই হয়ত বেশি অখুশি হয়, ক্যাল্কুলাসের ভাষায় বলা যায় তাদের সুখ টেন্ডস টু জিরো। কাছে গেলে বোঝা যায় ক্যালকুলেশান তাদের সর্বদা মিলে না, ক্যাল্কুলেশন ভুলও হয়, এই ভুল ক্যাল্কুলেশনকে তারা ভুলতেও চায় না, কেননা সেইটি ২য় বার করতে তারা ভয় পায়। তাই একটি খারাপ স্মৃতি বা ঘটনা তারা সহজে ভুলতে পারে না। এরা হিসাবি হলেও এদের জীবনটা গাণিতিক নয়, বরং এদের জীবনটা হয় দার্শনিক।

সুপ্রিয় পাঠক, এই গোলকধাঁধাময় পৃথিবীতে আপনি কি হিসাবি নাকি বেহিসাবি সেইটি প্রশ্ন হলে, একটি না একটি উত্তর আসবেই৷ কিন্তু আপনি কি প্রকৃত অর্থে সুখি কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি হ্যাঁ বা না বলতে পারেন, আবার কিছু সময়ের নিরবতাও পালন করতে পারেন, মনভারী থাকলে হয়ত কয়েক ফোঁটা অশ্রুও ফেলতে পারেন। কিন্তু বেঁচে থাকা কি আদৌ আনন্দময় নাকি বিষাদময় সেই প্রশ্নতো থেকেই যায়, তাই না?

0912 কাজী শাফিন আলম অসময়ে অসমাপ্ত 2