কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে পরিসংখ্যান ও তথ্য বিজ্ঞান নিয়ে ১১ থেকে ১৩ জুলাই ২০২৩ বেইজিং কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পরিসংখ্যান ও তথ্য বিজ্ঞানের প্রথম জাতীয় যৌথ সম্মেলন। চীন ও অনন্যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রায় ১৬০০ জন শিক্ষক, গবেষক এবং ছাত্রছাত্রী এই আসরে অংশ নেন। সম্মেলনটি কয়েকটি সহ-এ্যাসোসিয়েশন মিলে আয়োজিত হলেও প্রধান দায়িত্ব পালন করে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিকস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকিং ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর ইয়াও ফাং।
চীনের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো পরিসংখ্যানিক এবং ডেটা সাইন্সের একাডেমিক জ্ঞান আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরি করা। এছাড়াও, তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সম্প্রসারণ করা, তথ্যবিজ্ঞান সংস্কৃতিতে শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদানে পরিসংখ্যানবিদ এবং ডেটা সাইন্টিস্টদের সহয়তা প্রদান করা। ডেটা রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের ভিত্তি হিসাবে এই অনুষ্ঠানের আলোচনায় এটা পরিষ্কার করে বলা যায়, পরিসংখ্যান এবং ডেটা বিজ্ঞানও এখন পৃথিবীতে নতুন উন্নয়নের সুযোগের সূচনা করছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, এই কনফারেন্স এডভাইজর কমিটি প্রধান, এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সাইন্সের গবেষক মা ঝিমিং বলেন, বিগ ডেটার যুগে ডেটা সাইন্স শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের সাথেই জড়িত বিষয়টি এমন নয়। কম্পিউটার বিজ্ঞান, গণিত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য শাখার সাথেও রয়েছে এর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক। শিক্ষক ইউয়ান ওয়েই পরিসংখ্যানের শৃঙ্খলার বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন ডিজিটাইজেশনের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে পরিসংখ্যানবিদদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
সম্মেলনে আরও আলোচনা করেন, কমিটি অফ প্রেসিডেন্টস অফ স্ট্যাটিসটিকাল সোসাইটিস
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ফান জিয়ানশিং। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান এবং ডেটা সায়েন্সকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সমর্থনের স্পন্দন উপলব্ধি করতে হবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত পটভূমির সমস্যাকে পরিমার্জন করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য পরিসংখ্যানগত চিন্তাভাবনা এবং ভাষা ব্যবহার করে নিখুঁত ফলাফলের প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করে সমাজের অন্যান্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
এই সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও ডাটা সাইন্স ফিল্ডের অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপিস্থিতি ছিল চোখে পরার মত। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চীনে পড়তে আসা সেন্টাল
সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র কাওসার আহমেদ বলেন, পরিসংখ্যান এবং ডেটা সাইন্স বর্তমানে গবেষণার সীমানার দ্বার এমনভাবে উন্মুক্ত করেছে যে, এর ব্যবহার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। এমন ধরনের আয়োজন বিগ ডেটা ব্যবহারের সঠিক প্রয়োগ অনুসন্ধান, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিজ্ঞানের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, মেডিক্যাল সাইন্সে প্রযুক্তির ফলাফল ব্যবহারে পরিসংখ্যানিকস প্রয়োগ, এবং বিভিন্ন নতুন সুযোগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চীনের ফুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র অয়াং বলেন, তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রায় ৪০০ (১০ সেশন ৪০) এর মত গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে কথা হয়েছে। শুধু তাই নয়, হুয়াওয়ে, ইউরিকোয়ান্ট, এবং সিএনকেআই এর মত অর্গানাইজেশন এই সম্মেলনে যুক্ত হয়েছে যা আমার মতো তরুণ গবেষকদের মনকে সামনে এগিয়ে যেতে আরও বেশি প্রযুমণ্ডিত করবে।
কনফারেন্স চলাকালীন, প্রায় ১০০টি একাডেমিক রিপোর্ট এবং ৩৯৬টি গবেষণার সর্বশেষ ফলাফল
রিপোর্ট আকারে সকলের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এই গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিসংখ্যান, এবং ডেটা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উন্নয়নের সমসাময়িক প্রবণতাকে ধারন করে। এছাড়াও, সম্মেলনের এজেন্ডায় সম্মেলন প্রতিবেদন, আমন্ত্রণ প্রতিবেদন, অবদান প্রতিবেদন, গোল টেবিল ফোরাম, কঠিন সমস্যা আলোচনা, পোস্টার উপস্থাপনা, কর্পোরেট বুথ, নতুন প্রতিভা নিয়োগ, দুপুর ও রাতের খাবারসহ অন্যান্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আয়জকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা আশা করেন আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতামূলক উদ্ভাবনকে উন্নীত করার জন্য ভবিষ্যতে পরিসংখ্যান এবং ডেটা বিজ্ঞানের জাতীয় যৌথ সম্মেলনে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। বিজ্ঞানের গবেষণা এবং প্রয়োগকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করবে। যা সত্যিকারভাবে দেশ-বিদেশের প্রতিভার সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
Ph.D. Student
Major in Applied Statistics
School of Mathematics and Statistics
Central South University, Changsha, Hunan, China
- This author does not have any more posts.