মে ১৯, ২০২৫

শুক্রবার সমাচার

৩০ আশ্বিন, ১৪২৮

মর্নিং শোস দ্যা ডে। সকালে সূর্য দেখেই বুঝা গেছে দিনটা ভয়াবহরকমের গরম যাবে। গত কয়েকদিন ধরে যাচ্ছেও তাই। আজকে আশ্বিনের ৩০। পরশুই কার্তিক আসছে। সুখবর আছে জীবনানন্দের কবিতায়। ’’যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়’’। বুঝলেন? কার্তিকে সুন্দর কুয়াশা থাকবে। তবে আশ্বিনের শেষ অবধিও সূর্যের এমন রুষ্টভাবের কারণটা কিন্তু খেলা করার মত না। আমরা শতকাল ধরে নিয়মিত ও কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে সূর্যকে যে উপেক্ষা আর অনাদর করে আসছি তারই ফলস্বরূপ এখনের এই দাবদাহ! চাঁদ, সমুদ্র, জোছনা, কুয়াশা, পৃথিবী, নীলাকাশ, দক্ষিণী হাওয়া থেকে আকাশের মেঘ- প্রকৃতির কাকে আমরা আমাদের বন্দনায় রাখিনি? চাঁদ হয়েছে সৌন্দর্যের মানদণ্ড, জোছনা হয়েছে বিলাসী মনের অবকাশযাপন কেন্দ্র, সমুদ্র হয়েছে প্রশান্তিস্থল, কুয়াশা হয়েছে প্রেমক্ষেত্র। সবাই জায়গা করে নিয়েছে মানুষের শৈল্পিক হৃদয়ে। বাদ গেছে শুধু সূর্য। এই অভাগা সূর্য চিরকালই অবহেলিত থেকেছে। শুধু অবহেলিত-ই না বরং শিকার হয়েছে ভর্ৎসনারও! সূর্যকে রুক্ষ, রাগী, বিনাশী, যম ইত্যাদি নামে, কুনামে, উপনামে ডাকা হয়েছে কালে কালে। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রেমিক সবাই একই দলের এবং একই তালে এই নিমকহারামি করেছে। করেছে বললে ভুল হবে বরং করছে। অথচ সূর্যের অবদান……. (বলতে গেলে শেষ করতে পারব না, না জানলে গুগল করেন)!

তো, আসল কথা হল দুয়েক্টা কবিতা আমিও লিখেছি। কিন্তু দুয়েক্টা লিখেই নিজেরে কবি দাবি করা যাবেনা। আবার এগুলো কবিতার মানদণ্ডে কবিতা বলা যাবে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত না! সুতরাং আমি কবি না এবং ঐ নিমকহারাম কবি-সাহিত্যিকদের থেকে আমার আচরণ একটু ভিন্নই হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে সূর্যতুষ্টি করব। সূর্যকে খুশি করা এখন সময়ের দাবি, মানবিক দায়িত্ব এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্যও বটে। আমাদের বাড়ির পশ্চিমে একটা পুকুর আছে। তার পশ্চিমপাড় থেকে শুরু অবারিত মাঠ (ধানক্ষেত আরকি!) এবং মাঠের পর তিতাস। এই পশ্চিমপাড়ে বসে প্রতিদিন গোধূলিতে সূর্যাস্ত দেখি। জায়গাটা নিরিবিলি। মানুষ আসে কম। আজকে গেলাম ‘অবেলায়’ এবং একটু রোদ দেখে বসলাম। কিন্তু পায়খানার গন্ধ আসতেছে। যে-ই কাজটা করছে তার নিশ্চয়ই পৃথিবীর রসকষের প্রতি কোন আগ্রহ নাই। থাকলে এমন পরিপাটি জায়গায় এই আকাম করে!! যাইহোক একটু নড়েচড়ে হলেও এখানেই বসতে হবে। কারণ অন্য সব জায়গায়-ই মানুষ গিজগিজ করে। দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব তো জানেনই! মানুষ বড় ভয়ানক লাগে আমার কাছে। যে কাছে আসে তার সাথেই শুধু মিশি। এবার চোখ বন্ধ করে সূর্যের প্রতি মুখ দিলাম। ইচ্ছে ছিল চোখ খুলে রাখব কিন্তু সূর্যমশাই অনেক রেগে আছেন। চোখ বন্ধ রেখেই কবিতার ঢঙে কিছু কথাবার্তা বলতে লাগলাম। হে সূর্যভাই, (মামা ডাকা নিষেধ! এই শব্দটার রেপুটেশন ভ্যালু একেবারে নিচে) তুমি আজ আমার বন্ধু হও। তোমার তীব্র তাপ সামলে মৃদু উষ্ণতায় আমাকে বিমোহিত করো। তোমার গোলগাল শোনালি মুখের প্রতি আমার প্রেম গ্রহণ করো। সোনালি রং অতি মর্যাদার কারণ এই রঙ চিকচিক করে। ধাতুতে এই রঙ থাকলে তা অতি মূল্যবান হয়! তোমাতে চাঁদের মত কলঙ্ক নেই, আছে ঐশ্বর্য। পৃথিবীর বিশালতার চেয়ে তুমি তেরো লক্ষ গুন বড়। তোমাকে পালনকর্তা বলতে যাব না, এতে তোমার আমার সম্পর্কের ব্যবধান বড় হয়ে যাবে। আমি যে অতি হীন, তবে তোমার রূপগ্রাহী। তব বন্দনায় আমি শতলাইন কবিতা লিখব কথা দিলাম। জেনে রেখো হে প্রিয়, আমার কবিতার শুধু আমিই পাঠক। আমি আমার কবিতায় মুগ্ধ হই। আমি তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা তোমাকে পড়তে দেব-

ইত্যাদি তেল মারা টাইপ আরো নানান কথা বললাম। কদ্দুর ফল দেবে জানিনা। তবে বলার সময় অত তেল তেল লাগেনি। শরীরে একটা আধ্যাত্মিক ভাব আসছিল। ধ্যানজ্ঞান শেষ করে উঠে দেখি দূর হতে কিছু মানুষ চেয়ে আছে। আমাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নিশ্চয়। আলোচনা আর কী, পাগল টাগল হয়েছি কিনা নির্ণয় চলতেছে। কেউ কেউ হয়ত বলতেছে, “হেরে জানতাম পড়ালেহা করে, এমন পাগল অইলো কুম্বালা?”

মোহাম্মদ ইকরাম
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ