fbpx

নভেম্বর ১০, ২০২৪

মনোবিজ্ঞান সমাচার

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি নিজের আরেকটি ব্যক্তিগত অবজারভেশন, সেটি হচ্ছে ডিপ্রেশন। পৃথিবীর তিন ভাগ জল, একভাগ স্থল যেরকম, সাধারণ একজন বাংলাদেশি মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় প্রকৃতপক্ষে তিনি কেমন আছেন? তাহলে তার উত্তরে চার ভাগের তিন ভাগ মানুষই বলবেন তারা ডিপ্রেশনে রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডিপ্রেশন কেনোই বা আসে? এই জিনিসটিকে সবাই ইগ্নোর করতে চায় সবচাইতে বেশি, তাও এটি কিভাবে চলে আসে? একটি কথা আছে যা ছোটবেলায় আম্মুর কাছে শুনতাম, “যা তুমি ভয় পাবে এবং চাইবে না ঘটুক, সেটিই সবার আগে ঘটবে।” ডিপ্রেশনের ব্যাপারটাও অনেকটা একই। ব্ল্যাক হোলে যেরকম টাইম এবং স্পেস এক হয়ে যায়, যেখানে আলোর গতির ন্যায় গতি ব্যতীত ফিরে আসা পসিবল হয় না, সেরকমভাবে ডিপ্রেশন হচ্ছে দুঃখের বা স্যাড ফিলিংসগুলোর ব্ল্যাকহোল, যেখান হতে অতি সহসা ফিরে আসা যায় না।

প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ কখনোই একশভাগ সুখী থাকতে পারে না। দিনের পরে যেভাবে রাত আসে, সুখের পরেও দুঃখ একই সাইকেল মেইনটেইন করে চলতে থাকে। চলুন গাণিতিক দিক থেকে সুখ দুঃখের ব্যাপারটা হিসেব করি। ধরা যাক, আজকে মাসের এক তারিখ এবং এইদিন আপনি নানা কাজ করেছেন এবং নানান ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন, এই সকলকিছুর পরে যখন আপনি ঘুমোতে যাবেন, ওই দিনের কিছু সুখস্মৃতি আপনার ব্রেইনে ভেসে আসবে আবার ওইদিনের কিছু খারাপ স্মৃতিও ভেসে আসবে। যদি সুখ স্মৃতিগুলো আপনার বেশি মনে পড়ে থাকে, নিঃসন্দেহে দিনটি আপনার জন্য ভালো ছিলো। এভাবে টানা যে কয়েকদিন আপনি সুখস্মৃতি নিয়ে থাকবেন, সে দিন পর্যন্ত আপনার সুখ সাইকেল চলতে থাকবে। এটি কোন ধ্রুব সংখ্যা নয়। হতে পারে আপনি ১ মাস ১৩ দিন সুখে ছিলেন, বা ১ সপ্তাহ সুখে ছিলেন। এরপর একদিন আপনার দু:সময় আসবেই, এমন একটি ঘটনা আপনার জীবনে ঘটবে যেটি থেকে সহজে বের হতে পারবেন না। কারো ক্ষেত্রে সেটি হতে পারে প্রিয়জন হারানোর শোক, প্রিয়দলের হেরে যাওয়া, মেজর কোনো কাজে বা কোন পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া, আবার হতে পারে প্রেমে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি। এই খারাপ ঘটনা এমনভাবে আপনাকে ভাবাবে এবং প্রভাবিত করবে যে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনা গুলোকেও আপনার ভালো লাগবে না। আপনার সাদা-কালো চিন্তায় কেউ সহজে তখন রঙ মাখাতে পারবে না। প্রতিনিয়ত যদি আপনি দুঃখের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন বা উক্ত ধরণের মানুষদের সাথে মেলামেশা করেন, তাহলে ক্রমাগত আপনার দু:খ এবং ব্ল্যাকহোল থেকে সরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় বেগের মান বাড়তেই থাকবে। লগের গ্রাফের মতন এটিও অসীমের পানে ছুটতে থাকবে। একটা সময় হয়ত তা আপনাকে গ্রাস করে জীবনকে থমকে দিবে। এভাবে ভাবতে পারেন যে আপনার লগের গ্রাফ ইন্টারসেকটিং পয়েন্ট পেয়ে গেছে আর আপনার জীবনদশা হবে তার ইন্টারভাল।

এখন তাহলে এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কি? আপনার সাদা-কালো জীবনে যখনই রং আসার উপক্রম হবে, আপনি সেটিকে তখনই আঁকড়ে ধরবেন। কোনকিছুর উপর কালো রং করা হলে সেটি কালোই হতে থাকে। যদিও উক্ত সময় পরিক্রমায় কালো রংটি আপনার অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠবে। তা সত্ত্বেও এটি আপনাকে ছেড়ে ভিন্ন রঙ ধরতে হবে।

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে আলোর বেগ বলতে সময় এবং রঙ বলতে বোঝানো হয়েছে ভিন্ন ধরণের ব্যস্ততাকে এবং লক্ষ্যকে। লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমেই মানুষ জীবনকে রাঙিয়ে তোলে, যখনই আপনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছে  যাবেন, আপনার অতীত কালো রঙকে আপনি জয় করবেন। এই লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য যে সময়টুকু আমরা কাজে ব্যয় করবো তাকে ইংরেজিতে বলা হয় রিয়েলিটি ইস্কেপ, এটি এমন এক কাজ যা করলে দুনিয়ার অন্য কোন ঘটনা আপনার কাজে প্রভাব ফেলতে পারে না এবং এটির মাধ্যমে মানুষ তার প্যাশন পর্যন্ত খুঁজে পেয়ে যায়। সুপ্রিয় পাঠক, এই রিয়েলিটি ইস্কেপই আপনাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেখানে ডিপ্রেশনের ব্ল্যাকহোলটা রংধনুর রঙে রাঙাতে শুরু করবে। আর তখনই আপনার ভালো লাগা শুরু হবে এবং সুখ সাইকেল আবার শুরু হবে। তবে এক্ষেত্রে সুখ সাইকেলটি একটু বেশি দীর্ঘ হবে।

প্রিয় পাঠক, ডে টু ডে লাইফে আমাদের প্রায়শই কাজের প্রতি বিরক্তি ও ক্লান্তি আসে, কাজের প্রতি অনীহা আমাদের গ্রাস করে কাজ থেকে বিরত রাখে। তবে এটি অবসন্নতা বা ডিপ্রেশন নয়, এটি হলো মনোটোনাস একটা ফিলিং যেটি কিনা এক্সোশন নামে পরিচিত। এক্সোশন আর ডিপ্রেশনের পার্থক্য আপনি তখনি বুঝে ফেলবেন, যখন দেখবেন স্বাভাবিক কাজের বাইরে গিয়ে অন্যকোনো এক্টিভিটিতে আপনার মন বসছে কিনা অথবা সংঘটিত ঘটনার স্মৃতি বারবার আপনাকে ভাবাচ্ছে কিনা। যদি তা আপনাকে ভাবিয়ে তোলে, সেটি আপনার জন্য লাল সংকেত৷ তা না হলে তবে আপনার উচিত হবে দ্রুত এক্সোশনকে সরিয়ে ফেলা, না হয় এক্সোশন যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা একসময় ডিপ্রেশনে পরিণত হবে। আর আপনি নিশ্চয়ই ডিপ্রেশনে পড়তে চাইবেন না, কারণ কথায় আছে, “বিপদের রাত্রি সহজে কাটতে চায় না”।