আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি হলো একদিন সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবুও কিছু মানুষের চলে যাওয়া আমাদের জীবনে অনেক বড় শূন্যতার জন্ম দেয়। পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মুরশীদা খানম ম্যাডামের মৃত্যু আমাদের বিভাগে এবং অনেকেরই জীবনে শূন্যতার কারণ।
মুরশীদা ম্যাডাম আমাদের ক্লাস নেয়া শুরু করেন আমাদের চতুর্থ বর্ষে, ইকোনোমেট্রিক্স। ম্যাডাম অনেক কষ্ট করে চারতলা উঠে আমাদের ক্লাসে আসতেন। পরিসংখ্যান বিভাগই ছিলো তাঁর ঠিকানা, ভরসা ও ভালোবাসার স্থান। উনি ক্লাসের ২/৩ মিনিট আগেই রুম থেকে বের হয়ে যেতেন এবং ধীরে ধীরে হেঁটে ক্লাসে আসতেন। একজনের শিক্ষকতার এবং তার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি কতটা দ্বায়িত্ববোধ এবং টান থাকলে নিজের ওমন শারীরিক অবস্থায়ও ক্লাস নেন, তা ভেবেই আমরা অবাক হতাম। তবে এর আগেও বিভাগের কিছু কাজে ম্যাডামের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। প্যাপাইরাস আর কিউএমএইচ ক্লাবের কিংবা প্রথম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন, যাই-ই হোক সবকিছুতেই তাঁর থেকে দিকনির্দেশনা পেতাম আমরা। যেকোনো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা কিংবা অনুষ্ঠানটি কিভাবে আগাবে তা ম্যাডাম নিজে থেকেই বলে দিতেন। আমরাও কোনো কাজে আটকে গেলে সরাসরি তাঁর কাছে গিয়ে নিজেদের কথা বলতে পারতাম। ম্যাডাম খুব যত্ন করে ভুল গুলি শুধরে দিতেন। ম্যাডাম যতটা গোছানো কাজ নিজে করেন এবং পছন্দ করেন, আমি বোধহয় ঠিক ততটাই অগোছালো। তবে আমার অনেক ভুলের পরেও ম্যাডাম খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতেন যে, “এটা এভাবে না, ওভাবে করো।’
প্রথম ম্যাডামের সাথে ফার্স্ট ইয়ারে একটা রচনা জমা দেবার সময কথা হলেও, মুরশীদা ম্যাডাম সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিলো না। শুধু সিনিয়রদের কাছে শুনেছিলাম ম্যাডাম সম্পর্কে যে, ক্লাসে সবকিছু অনেক গুছিয়ে পড়ান, সাথে পড়াও ধরেন। আর ম্যাডামের সবকিছু মনে থাকে, কোন ক্লাসে কে কি করেছিলো। এটার প্রমাণ অবশ্য আমি পেয়েছিলাম দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন। সেকেন্ড ইয়ারের কোনো একদিন সেমিনারে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলাম এবং হঠাৎ মুরশীদা ম্যাডাম সেমিনারে এসেছিলেন কোনো একটা কাজে। এসে আমাদের বলেছিলেন যে, “তোমরা সেকেন্ড ইয়ারের না?” আর তখন আমাকে দেখে বলেছিলেন, “তোমার নাম সাবিত আল-সাবা রিয়ন না?” আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম, জ্বি ম্যাডাম।
– “আমি তো তোমাদের ক্লাস নেই না, তাই সবাইকে চিনি না। তবে তোমার নাম আমার মনে আছে। তুমি রচনা জমা দিয়েছিলে গত বছরে আমার কাছে।”
আমি অনেক অবাক হযেছিলাম যে একবার মাত্র কথা বলেই উনি আমার নামটা মনে রেখেছিলেন। আমাদের প্রথম বর্ষের একটি রচনা প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক ছিলেন ম্যাডাম। সেই রচনা জমা দেবার জন্য প্রথম ম্যাডামের সাথে কথা হয়েছিলো। ম্যাডাম আমার পুরো নামটা শুনেছিলেন এবং অবাক করা ব্যাপারটা হলো উনি আমার নামটা মনে রেখেছিলেন।
শুধু ডিপার্টমেন্টের কাজ কিংবা পড়াশোনার বিষয়েই না, ম্যাডামের কাছে সবসময়ই যেকোনো ছাত্রছাত্রীরা যেতে পারতেন নিজেদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে। তিনি হয়তো সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারতেন না, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন অভিভাবক পাওয়া অনেক বড় সৌভাগ্যের, যাকে নির্দ্বিধায় সবকিছু বলা যায়।
২৭ শে অক্টোবর প্যাপাইরাসের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে করা বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন এর পরের দিন ম্যাডাম বলেছিলেন যে, “সামনে তো তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষা এসেই পরলো। এখন আদা-জল খেয়ে পড়াশোনা করো। এসব থেকে দরকারে একটু দুরে থাকো। আমি কিন্তু তোমার রেজাল্ট জানতে চাইবো।”
এরপরে ম্যাডামের সাথে কথা হয় আমাদের প্রথম পরীক্ষার দিনে। ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে মাল্টিভেরিয়েট পরীক্ষার সময় কার্জন হলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রশ্ন কমন পরেছে?”
-জ্বি ম্যাডাম।
-“ভালো করে লিখো।”
-আচ্ছা, ম্যাডাম।
কিন্তু এরপরে অনেক অপূর্ণতা রেখে তিনি চলে গেলেন। আমার রেজাল্টটা তাঁকে আর জানানো হবে না। এনেক্স এর চারতলায় আমরা তাঁর হাসিমুখ আর দেখবো না।
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জুলাই ৯, ২০২০
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১২, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৪, ২০২১
- মো: সাবিত আল-সাবা রিয়নhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১১, ২০২১