“শিক্ষকেরা ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় প্রনানসিয়েশন ও ইন্টোনেশনে সকল প্রকার কৃত্রিমতা বর্জন করিবেন। নিজেরা নিত্য ব্যবহৃত সহজ কথ্য শব্দ ও ক্রিয়াপদ নিজস্ব স্বরভঙ্গিতেই উচ্চারণ করিবেন। আপনার ক্লাসে তারা নিজ পরিবারের ভাষিক পরিবেশ দেখিয়া খুশিই হইবে। শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে বাপ-বেটার অন্তরের যোগ স্থাপিত হইবে। মাতৃভাষাকে মাধ্যম করার উদ্দেশ্য সফল হইবে।”
লেখক আবুল মনসুর আহমদের ‘বাংলাদেশের কালচার’ শীর্ষক প্রবন্ধের এই লেখনীটুকু সেদিন পড়ামাত্রই বিনাসংশয়ে যে নামটুকু মনে এলো, তিনি অধ্যাপক ড. তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক স্যার। রোজকার স্বতঃস্ফূর্ত বাক্যালাপের মতো কথা বলতেন তিনি। কোনো ভণিতা নেই, নিজেকে বিজ্ঞ প্রমাণ করবার কোনো অভিলাষ নেই। অনন্যসাধারণ হয়েও সবার মাঝে খুব সাধারণ একজন হয়ে মিশতেন। সেই নির্ভেজাল মানুষ আচমকা হারিয়ে গেলেন। দুঃস্বপ্ন মনে হয় পুরোটাই।
চতুর্থ বর্ষের ক্লাসগুলোয় তাঁর প্রত্যক্ষ শিক্ষার্থী হওয়ার সৌভাগ্য হয়ে উঠছিল আমার। সাবলীলভাবে পরিসংখ্যানের কাঠখোট্টা বিষয়বস্তু সহজ করে উপস্থাপন করতেন। তাঁর চমৎকার রসবোধে তখন ক্লাসগুলো উপভোগ্য হয়ে উঠতো। প্রায়শই স্যারের কথায় মনোনিবেশ করে বিস্মিত হতাম এই ভেবে যে একজন অধ্যাপক হয়েও কী করে তিনি শিক্ষার্থীদের হয়ে ভাবতে পারতেন সবসময়। একবার তো বন্ধুদের সাথে বলেই ফেলছিলাম, বাহির থেকে অধ্যাপক তসলিম একজন শিক্ষক; ভেতরে তিনি পুরোদস্তুর আমাদের একজন, আমাদেরই প্রতিচ্ছবি। সে কারণেই হয়তো এত অল্প সময়ে এতটা আপন, এতটা শ্রদ্ধাভাজন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এত জলদি সব ছেড়ে চলে যাবেন- এর কোনো কারণ খুঁজে পাই না।
আমরা বর্তমানে এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সফলতম ব্যক্তি আর বারবার বুঝে নিতে হয়, পিছিয়ে পড়াদের জন্য এ পৃথিবীটা নয়। এইরকম টালমাটাল পরিস্থিতিতে তসলিম স্যারের মতো মানুষ ছিলেন স্বস্তির আশ্রয়। যার কাছে ক্লাসরুমের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী সমভাবে গ্রহণযোগ্য, যিনি শিক্ষার্থীদের প্রাণের গোড়ায় ছুঁয়ে উজ্জীবিত করতে পারতেন। এইরকম জীবনীশক্তি, ইতিবাচকতা আর আন্তরিকতা এক ব্যক্তিত্বে ধারণ করতে ক’জনই বা পারে? একবাক্যে তিনি ছিলেন ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এক অনন্য উদাহরণ, ছিলেন জ্ঞান ও বিনয়ের অপূর্ব সংমিশ্রণ। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে আশীর্বাদ তুষ্ট মনে করি, আমার ক্ষুদ্র জীবনে এমন একজন আলোকিত ব্যক্তির সান্নিধ্য পাওয়ায়। তসলিম স্যারের মতো মানুষ গড়ার কারিগর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভীষণ প্রয়োজন, এদের হারিয়ে ফেলা মানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা। কামনা করবো স্যারের জীবনাদর্শ যেন আমাদের পাথেয় হয়ে থাকে আজীবন। তাঁর আদর্শ, মূল্যবোধ, স্বপ্ন প্রতিফলিত হোক প্রতি প্রাণে। অধ্যাপক তসলিম বেঁচে থাকুন তাঁর কর্মে, প্রেরণায় এবং আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনায়।
- স্মৃতি তাইয়্যেবা মুক্তাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be/শনিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২০
- স্মৃতি তাইয়্যেবা মুক্তাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be/বৃহস্পতিবার, জুন ১১, ২০২০
- স্মৃতি তাইয়্যেবা মুক্তাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১২, ২০২০
- স্মৃতি তাইয়্যেবা মুক্তাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be/বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
- স্মৃতি তাইয়্যেবা মুক্তাhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be/মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৩