বন্ধু বান্ধবের আড্ডায় কিংবা টেবিল আলোচনায় আমি দক্ষ লোকদের কাতারের একজন মানুষ। কিন্তু, একই বিষয়ে যদি লিখতে বলা হয় তবে আমাকে তালিকায় না রাখাই ভাল। জীবনে ভাল মন্দ মিলিয়ে অনেক বক্তৃতা দিয়েছি। বক্তৃতা লিখে কোথাও দিতে হবে বললে আর গুছিয়ে লিখতে পারি না। জাতীয় পত্রিকায় কখনোই লেখা হয়ে ওঠেনি। বিভাগের পত্রিকা প্যাপাইরাসে লিখেছি, তাও অনেক আগের কথা। লেখায় সক্ষমতা খুব একটা নেই, তবে যেটুকু আছে তা ব্যবহারে মিতব্যয়ী থাকার চেষ্টা করি।
এই ক’দিন আগে আতাহার স্যার-কে নিয়ে প্যাপাইরাসের একটি বিশেষ সংখ্যা বের হয়েছিল। এত দ্রুত একই বিষয়ে আবারও বিশেষ সংখ্যা বের হবে, তাও আবার তসলিমকে নিয়ে, কোনদিন কল্পনাও করিনি। বিশেষ সংখ্যায় জাফর স্যার একটা লেখা দিতে বললেন, রাজিও হয়ে গেলাম। জানিনা কী লিখব, কী লেখা উচিত। পরিসংখ্যান বিভাগে ছাত্র হিসাবে ভর্তি হবার আগেই তসলিমকে চিনতাম। আমাদের বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক শাহাদাৎ আলী মল্লিক স্যারের ছেলে হওয়ার কারণেই এই চেনা। তসলিম আমার ক্লাশরুমের ছাত্র ছিলো। শ্রেণিকক্ষে একেবারেই একজন শান্ত স্বভাবের শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে সহকর্মী হিসেবে ওর সাথে অনেকের মতো আমারও বহু স্মৃতি। ভাবতেই চোখে জল আসে এমন অনেক ঘটনাই আছে তসলিমের সঙ্গে, যা লেখার সাহস আমার নেই। যাদের লেখার সক্ষমতা অনেক, তারা যদি লিখতে কৃপণতা না করেন, তবে তসলিমের জীবনের বহু দিক নিয়ে অনেক গল্প লিখতে পারবেন। আমি আশা করি অনেকেই তা লিখবেন, আমরা পড়ে সমৃদ্ধ হব। আমি দু-একটি কথা লিখেই শেষ করবো।
যেসব গুণ ও স্বভাবের কারণে একজন ছাত্রকে ভাল ছাত্র বলা হয়, তার সব গুণই ছাত্র হিসেবে তসলিমের মধ্যে ছিল। যেসব গুণ ও কর্মের কারণে একজন মানুষ সমাজে ভাল মানুষের স্বীকৃতি পায়, তার সবকিছুই দেখেছি ওর মধ্যে। ব্যক্তি জীবনে তসলিম একজন সৎ, মিষ্টভাষী, নিষ্ঠাবান ও ভাল মানুষ ছিল এবং কর্মজীবনে সে ছিল একজন শিক্ষার্থীবান্ধব নিবেদিত শিক্ষক ও উঁচুমানের গবেষক।
২০২০ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলাম। সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে যোগদান করায় আমি মাস ছয়েক ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। গত ৩১ ডিসেম্বর আমার এই দায়িত্ব শেষ হয়েছে। ২০২১ এর মধ্য-জানুয়ারিতে কোন একদিন ক্লাবের আড্ডায় একজন সহকর্মী কিছুটা খোঁচা দিয়ে বললেন, “ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কি ভার উঠে গেছে? এত অল্পতেই সভাপতির আয়ু শেষ হয়ে গেলো?” আমি তখন তাকে বলেছিলাম, “ইসলাম ধর্মে একটি কথা আছে, নিশ্চয়ই আপনিও শুনেছেন, সেটা হলো ভাল মানুষের আয়ু কম থাকে, বেশি দিন বাঁচে না।” আমার কথা শুনে উপস্থিত একজন সহকর্মী বলেছিলেন, “ঠিকই বলেছেন ভাই, ভাল মানুষ অল্প বয়সে মারা যায়।” এই ঘটনার ৭/৮ দিন পরেই তসলিমের মৃত্যু সংবাদ পেলাম। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। খুব মন খারাপ হলো এবং ধর্মের সেই কথাটি মনে পড়ে গেলো। তসলিম সত্যিই একজন ভাল মানুষ ছিল। আর সেজন্যই সে অকালেই মারা গেল। মারা যাওয়ার আগের দিনও ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। অনেক স্মৃতি ওর সঙ্গে। কোন কিছুই লিখে কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চাই না। মনের কষ্ট মনেই থাকুক। শুধু বলতে চাই, তসলিম ছিল একজন অনন্য সাধারণ মানুষ, যাকে ভালবাসা যায়, যাকে বিশ্বাস করা যায় এবং যার উপর আস্থা রাখা যায়। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কাছে ওর জন্য শুধু দোয়া করতে চাই। আল্লাহ, তসলিমকে তুমি কবরে শান্তিতে রেখো, পরকালে সর্বোত্তম বেহেস্তে স্থান দিও এবং ওর রেখে যাওয়া সন্তান দু’টিকে ওর মতো মানুষ করো। আমিন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ১৯৮৪ - ১৯৮৫
- মো: লুৎফর রহমানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a7%8e%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১, ২০১৫
- মো: লুৎফর রহমানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%8b-%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a7%8e%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বুধবার, জুলাই ১, ২০১৫