ছেলেবেলায় পাতার পর পাতা রচনা লেখার স্মৃতি এখনও কিছুটা স্বচ্ছ। হরেকরকম বিষয়াদির মাঝে ‘আমার প্রিয় শিক্ষক’-এর কথা না বললেই নয়। সেই সময়টায় লিখতে গিয়ে খুব দোটানায় পড়ে যেতাম। তাই কখনোই রচনাটি লেখা হয়ে উঠত না। তবে আজ যদি সুযোগ পাই, তবে অবশ্যই একবার হলেও রচনাটি লেখার সাহস দেখাতে সংকোচবোধ করব না।
প্রথম বর্ষ থেকেই বিভাগের আপু-ভাইয়াদের কাছ থেকে তসলিম স্যারের মাহাত্ম্যকীর্তন সম্পর্কে অবগত ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিন বছর স্যারের কোন ক্লাস পাইনি। চাতকের মতো অপেক্ষা করে ছিলাম এবং সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে চতুর্থ বর্ষে উঠার পর। একটু মন খারাপ হয়েছিল, স্যারের সাথে প্রথম ক্লাস পেলাম, সেটাও অনলাইনে৷ তবে এটা ভেবে এত আনন্দ লাগছিল যে অসম্ভব সুন্দর এবং সাদা মনের একজন মানুষের সান্নিধ্যে কিছু শিখতে পারব আগামী একটা বছর, কী অসাধারণই না হবে ব্যাপারটা! স্যারের ক্লাসে বরাবরই অবাক হতাম আমি। একজন মানুষ কতটা বিনয়ী এবং অমায়িকতায় পরিপূর্ণ হতে পারেন, কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারেন! তাঁর মাঝে দাম্ভিকতার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাইনি। জ্ঞানে পরিপূর্ণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। পড়ানোর সময় অকপটে নিজের অপারগতা স্বীকার করে ফেলতেন। স্যার আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করে এসেছেন। পরিসংখ্যান আমার কাছে বেশ আতঙ্কের একটা বিষয়। তবে স্যারের ক্লাসে এই আতঙ্কের পরিধি বেশ ক্ষুদ্র হয়ে আসত। তিনি শিক্ষার্থীদের কথা সবসময়ই চিন্তা করতেন। অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ফলে কেউ যেন কোনোক্ষেত্রেই বঞ্চিত না হয়, সেদিকটা তিনি সবসময় খেয়াল রাখতেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একদম শেষ প্রান্তে এসে এমন কাউকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি বলে কিছুটা আক্ষেপ কাজ করত। স্যারের ক্লাস একের অধিকবার পাওয়া বিভাগের অগ্রজদের প্রতি খানিকটা ঈর্ষা কাজ করত। তবুও এই স্বল্প সময়ে তাঁর কাছ থেকে যা কিছু পেতাম, তাই কুড়িয়ে নিয়ে রাখতাম। পৃথিবী তার আগের অবস্থায় দ্রুত ফিরে যাবে এবং ক্লাসরুমে বসে স্যারের লেকচার শুনব – এই ইচ্ছেটা তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগেনি এবং ইচ্ছেটা দিন দিন আরও প্রগাঢ় হচ্ছিল।
ইচ্ছেটা যে অপূর্ণই থেকে গেল এবং ঠিক এই সময়টায় বসে আমি এই লেখাটা লিখছি- সবকিছু নিয়ে এখনও ঘোরের মাঝেই দুলছি। এরপরের দুঃস্বপ্নের পর্বটা স্মৃতিতে রাখতে চাই না। শত শত অপূর্ণতা রয়ে গেলেও স্যার সবসময় যেমন আমাদের মাঝে ছিলেন, ঠিক তেমনি আছেন, থাকবেন সবসময়।
- সৈয়দা সামিয়া রহমানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b8%e0%a7%88%e0%a7%9f%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/শনিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২০