fbpx

বরফ গলা নদী (বুক রিভিউ)

বই :বরফ গলা নদী
লেখক: জহির রায়হান ।
প্রকাশনী: পল্লব পাবলিশার্স
প্রকাশকাল: ১৯৬৯
পৃষ্ঠাঃ ১১৯

বড় ছেলে মাহমুদ, স্বপ্ন ছিল আদর্শ সাংবাদিক হওয়ার আর সত্য খবর প্রকাশের দূর্নীতির গোমর ফাঁসের । কিন্তু কর্পোরেট ও বাস্তব দুনিয়ার মুখোমুখি কোনোরকম যখন এক প্রেসে চাকরী জোগাড় করতে পারলো তখন সে বুঝতে পারলো সে চাইলেই আসলে সম্ভব না। তাকে চলতে হবে কোম্পানির দাস হয়ে, তার বস এর কথায় ১০০০০ মানুষকে ২০০ বানাতে হবে। মুরগি চুরি কে বলতে হবে গরু চুরি। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যখন কোনো একটা কানেকশন এর অভাবে সে আর বড় চাকরি জোটাতে পারে না, ধনী শ্রেণির দ্বারা গরীব শ্রেণিকে বারবার শোষিত হতে দেখে, একসময় ক্রোধে ফেটে পড়ে। এক কাতারে সমস্ত বড়লোক শ্রেণিকেই ঘৃণা করা শুরু করে।
মরিয়ম, ইন্টার পাশ করেছে সদ্য কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে হবে । মাসে সামান্য একটা টিউশন দিয়ে কোনোরকম ভাবে তার নিম্নবিত্ত পরিবারে হাল টা ধরতে হবে। তাই একই ময়লা শাড়ি পড়ে , রিক্সা ভাড়া বাঁচানোর জন্য নর্দমার পাশে হেটে প্রতিদিন যায় টিউশন এ । সেই সাথে প্রাইমারি স্কুল এ চাকরির চেষ্টা।

মাহমুদ, মরিয়ম, তাদের মা বাবা আরোও ছোট ৩ ভাইবোন সহ একটা পুরান ভগ্নপ্রায় বাড়িতে এভাবেই চালিয়ে আয় তাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবন। চেষ্টা থাকলেও আসলে সম্ভব হয় না তাদের উন্নতি টা।।

খুব পরিচিত না? চারপাশের একদম বাস্তব গল্প। এভাবেই জহির রায়হান ফুটিয়ে তুলেছেন খুব ই সহজ সাবলীল ভাষা, ঘটনা, বর্ণনায় ছোট , কিন্তু অসাধারণ একটি উপন্যাস। চরিত্রদের মাঝে মিশে যেতে হয়তো ২ পৃষ্ঠা ও আগাতে হয় না। প্রতিটি বিষয় ই বাস্তব থেকে তুলে নেওয়া। বই টি পড়তে পড়তে বিভিন্ন মুহুর্তেই চোখে পানি আসতে বাধ্য। এমন ও হয়েছে কোনো এক অধ্যায় পড়ে কিছুক্ষণ বই বন্ধ করে চিন্তা করছিলাম যে আসলেই কতটা বাস্তব! আসলেই দুনিয়া তো এমন ই ।

প্রতিবারের মত এখানেও একটা প্রিয় লাইন দিয়ে শেষ করি।
“ছুরি দিয়ে কেটে-কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে। হাসি আছে, অশ্রু আছে।”

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন : ২০১৯ - ২০২০

আদনান করিম চৌধুরী

সেশন : ২০১৯ - ২০২০