জুন ১৬, ২০২৫

অহেতুক ভাবনা

“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর “

অনেক ছোটবেলায় কথাটা শুনলেও অর্থটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। ছোটবেলাতে সব আবদারগুলো চোখের পলকে পেয়ে গেলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে আবদার গুলোর পায়ে বেড়ি পড়তে থাকে। বরাবরই উৎসুক প্রকৃতির থাকায় যখনই মা বলতো তুমি মেয়ে, এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনা, তখন আমিও ভদ্রতার বাঁধ ভেঙে চড়া গলায় বলতাম কেন?

কেন আমি করতে পারবোনা?

তখন উত্তর হিসেবে সংবিধানের ধারার মতো কিছু চিরাচরিত নিয়মকানুনের ফর্দ আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো। অবশ্য সেগুলো লিখিতো থাকতোনা, বরং আমাকে বলা হতো মনের মধ্যে ডায়েরির পাতায় গল্প লেখার মতো করে লিখে রাখতে, দায়িত্ব টা আমাকে নিতে হতোনা, সেরেব্রাম ই সেটার দায়িত্ব নিয়ে নিতো আর যথাযথ পালন করে যেত।

পরে বুঝলাম মায়ের কথা গুলো একমনে বিনাপ্রশ্নে বিশ্বাস করতে হবে আর মেনে চলতে হবে, আর তা না হলে হয়তো পিঠে কিছু পড়তেও পারে, বেচারী আমি এগুলা ভাবলেও কখনও নিজে মেয়ে বলে চিরাচরিত নিয়মগুলোর বেড়িতে নিজেকে বেধে রাখতে পারতাম না, ওমন ভাবে ঘরে বসেও থাকতে পারতাম না

কি ভাবছেন? আমি খুব কনজার্ভেটিভ পরিবারে থেকে বড় হয়েছি?

-না, আমি যে পরিবারের অংশগত সেটা অনেক আধুনিক মননের।

আসলে আমরা যতই বলি যুগ বদলাচ্ছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছি, কিন্তু পুরানো চিন্তাভাবনার রেশ ঔরসজাত হিসেবে থেকেই যায় আমাদের মনের এক কোণে,হয়তো বা আমার মতো মানুষের মনে জায়গা করতে চেয়েও না পেরে নিজের ঠায় পেতে নেয় শিরায় উপশিরায় বা কৈশিকজালিকার মধ্যে। এখানে শুধু বাবা মায়ের দোষ দেওয়া যায়না, আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে সবাই নিজেকে “চতুর্থ প্রজন্ম” বলে আধুনিকায়নের খাতায় নাম লিখে নিজেকে আধুনিক বলে পরিচয় দিলেও সবার মনের একটা অংশ দখল করে আছে সেই মান্ধাত্বার আমলের চিন্তাধারা।

যে সমাজের মানুষগুলো মেয়েদেরকে মানুষ নামক শ্রেনীর না ভেবে তার উপশ্রেণী হিসেবেই বিবেচনা করে। আর তাদের জীবনের ৮০ শতাংশ জায়গাজুড়ে শুধু সেই চিরাচরিত নিয়মগুলো দিয়ে লক্ষণ রেখা টানা থাকে।

তারা পিছিয়ে থাকলে ‘মেয়ে মানুষ’ বলে হাসির খোরাক করাতে যায়, আর সবার শীর্ষে পৌছাতে গেলে “পাখনা গজাইছে” বলে পাখা ছেটে দেওয়া হয় মুহুর্তেই।

হ্যাঁ, আমাদের মেয়েদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে এই সমাজের মানুষ গুলর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, চোখ কান বন্ধ করে, লক্ষণ রেখা পার করেই এগোতে হয়। অন্যদিকে তো ছোট থেকেই নিজেদেরকে প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে জিতে নিতে হয় সব থেকে ভালো মেয়ে, লক্ষ্মী মেয়ে এর পদবি, তারপর আসে ভালো বউমা, ভালো স্ত্রী, একসময় ভালো মা এর পদবি।অবশ্য আমি এটাকে পদবি না বলে বিশেষণ-ই বলবো

কারণ সবগুলোই আপেক্ষিক, কোনোটাই আপনি জিতে গেলেও যে স্থায়ি ভাবে পাবেন এই আশা করা যাবেনা।

0801 ফারজানা আফরোজ শান্তা photo
শিক্ষার্থী | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ