-ভাই, সামনে আর যাওয়া যাইবো না।
-কেন? ঐ পর্যন্ত আপনার সাথে কথা হয়েছে?
-সামনে সমস্যা আছে।
-কী সমস্যা?
-সামনে কয়েকটা বজ্জাত কুত্তা আছে। গেলেই ধরবো।
-কই, আমারে তো কোনদিন ধরে নাই!
-আপনারে ধরবো না। আপনি এই খানেই থাকেন। আপনারে এইগুলা চিনে। এই কয়েক দিন আগে ভাড়া নিয়া এই খানে আইছিলাম। তারপরের ঘটনা বলা যাইব না।
-কেন কী হয়েছে? আপনারে কামড় দিয়েছে?
-কামড়াইতে পারে নাই। তবে আমার লুঙ্গির মধ্যে একটা কুত্তা এমনভাবে কামড়ায় ধরছে, আর ছাড়ে না। কোন রকম মান ইজ্জত নিয়া বাইচা আইছি। আর পাশ থাইক্যা দুইটা চ্যাংড়া ছাওয়াল, মোবাইলে আমার এই দশা ভিডিও করতাছে এবং বলতাছে ফেসবুকে দিমু।
– আপনি কিছু বলেন নাই?
-কী কমু? কইলে আরো বিপদ। তহন কুত্তার সাথে এরাও আমারে ধোলাই দিব। এই বার তো লুঙ্গিসহ আইছি, তখন দেখা যাইব লুঙ্গি ফালাইয়া জান বাচাইতে হইবো।
এই হলো দক্ষিণ কাফরুলের মাজারের গলির প্রতিদিনকার চিত্র। প্রথম দিকে আমি বুঝতে পারিনি। ভাবতাম কুকুরগুলো প্রতিদিন এইখানে এত ঘেউঘেউ করে কেন? দেখতাম প্রতিরাতেই কমপক্ষে দুই তিন জনকে এদের সাথে বেশ বোঝাপড়া করতে হয়। বাসার সামনে একটি মুদি দোকান আছে। মুদি দোকানদারের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়। ভুক্তভোগীরা কোন রকম রক্ষা পায়।
আসল ঘটনা হলো – রাত নয়টার পর এই গলির ভেতরে রিক্সা নিয়ে আসলেই কুকুরগুলো দল বেধে চালককে আক্রমণ করে। এই কুকুরগুলোরও কিছু নীতি আছে – এরা রিক্সাওয়ালা ছাড়া অন্য কাউকে ধরবে না। সারা দিন নিজেরা নিজেরা ঝগড়াঝাটি করে, কিন্তু যেই না একজন রিক্সাওয়ালা পেল সব কুকুর এক হয়ে যাবে। অন্যান্য গলির কুকুরগুলোও ঘেউঘেউ শব্দ করে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।
সারাদিন যেখানেই থাকুক, সন্ধ্যার পরে মুদি দোকানের সামনে দল বেধে বসে থাকবে। দেখলে মনে হবে, কাউকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। তবে এদের গার্ড অব অনার আবার একটু অন্য রকম। একে বরং গার্ড অব ডিসঅনার বলাই বেশি যুক্তিসম্মত। এরা রিক্সাওয়ালাদের শরীরে কামড় দেয় না, মূল টার্গেট শরীরের নিচের কাপড়। রিক্সাওয়ালারা সাধারণত লুঙ্গি পরে। একটু কল্পনা করুন- রিক্সাওয়ালারা কী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়? এর মধ্যে দুয়েকজন যে জন্মদিনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি, তা আমি হলফ করে বলতে পারবো না।
একদিন এক রিক্সাওয়ালা কুকুরের খপ্পরে পড়লে, মুদি দোকানদার এসে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। এর পর দোকানদার হাসতে হাসতে বলে- ঠিকই আছে, প্যাসেঞ্জার থেকে বেশি ভাড়া নাও, এবার বুঝ মজা।
উত্তরে রিক্সাওয়ালা বলে, ট্রাফিক পুলিশ তো সারাদিন চাঁদাবাজি করে, কই এদেরকে তো কুত্তায় ধরে না!?
মুদি দোকানদার আবার মজা করে বলে, স্বজাতি বলে একটা কথা আছে না!?
সেশনঃ ২০০৩-২০০৪
- শ্যামল আতিকhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১, ২০১৫
- শ্যামল আতিকhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95/বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৯