fbpx

সম্পাদকীয় – নভেম্বর ২০২৩

গত ৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচটি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন শ্রীলংকা দলের অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে টাইমড আউট হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এই নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। অনেকেই বলছেন, সাকিবের টাইমড আউটের আবেদন ক্রিকেটের চেতনার পরিপন্থী। আবার, কেউ কেউ বলছেন, সাকিব কোনও বেআইনী কাজ করেননি। আসুন, দুই পক্ষের যুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা যাক।

টাইমড আউটের পক্ষের যুক্তিগুলি:  

(ক) শ্রীলংকা দলের সামারাবিক্রমা আউট হওয়ার পর ধীর পায়ে হেঁটে অন্য ব্যাটসম্যানদের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে ম্যাথিউস যখন ক্রিজে পৌঁছান, তখন আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ তাকে জানিয়েছিলেন, বোলারের মুখোমুখি হতে তার হাতে আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় আছে (ইএসপিএন ক্রিকইনফো)। অর্থাৎ, ম্যাথিউস জানতেন, ‍তিনি টাইমড আউটের ঝুঁকিতে আছেন। (উল্লেখ্য, আগের ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান দুই মিনিট সময় পান প্রথম বলটি খেলার জন্য, শুধু গার্ড নিয়ে রেডি হলে হবে না।)

(খ) এরপর ম্যাথিউস তার টিমমেটের সাথে কথা বলে যখন ক্রিজে দাঁড়ান, তখন ৫ সেকেন্ড সময় বাকি ছিলো প্রথম বলটি খেলার জন্য। অর্থাৎ, সামারাবিক্রমা আউট হবার পর ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পার হয়েছে। এই সময়ে ম্যাথিউসের হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গেলে আম্পায়ারদের কোনও অনুমতি না নিয়ে হেলমেট বদলের জন্য তিনি শ্রীলংকার ডাগআউট বরাবর ইশারা দিতে থাকেন। ফলে, দুই মিনিটের অনেক বেশি সময় পার হয়ে যায়। আম্পায়ারদের অনুমতি নিলে হয়তো তাকে আউট দেয়া হতো না।

(গ) স্পিন বল খেলার জন্য হেলমেট অত জরুরী ছিলো না। তাই ম্যাথিউসের সেফটির অজুহাত ধোপে টেকে না। একটা বল খেলে বা ওভারটা শেষ করে আম্পায়ারের অনুমতি নিয়ে ম্যাথিউস হেলমেট বদলাতে পারতেন।

(ঘ) টাইমড আউটের মতো ‘মানকাডিং’ (Mankading) আউটও বিতর্কিত। (বোলার বল ডেলিভারি না দিয়ে ক্রিজের বাইরে থাকা নন-স্ট্রাইকারকে আউট করলে তাকে মানকাডিং বলে। ভারতের বিনু মানকড় প্রথম এ ধরনের আউট করেছিলেন বলে তার নামে এই আউটের নাম রাখা হয়েছে।) এই আউট বিতর্কিত হওয়ার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয়টি দেশ মোট ১২ বার মানকাডিং করেছে। সাকিব টাইমড আউট করায় দোষ হবে কেন?

টাইমড আউটের বিপক্ষের যুক্তিগুলি:

(ক) যারা বড় মাপের ক্রিকেটার, তারা কখনই বিতর্কিত আইনের সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেননি। খেলায় শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে তারা বিপক্ষ দলকে পরাজিত করেছেন।

(খ) যদিও ম্যাথিউস আম্পায়ারের অনুমতি নেননি, কিন্তু হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে যাওয়ায় ‍তিনি হেলমেট বদলাতে চেয়েছেন। ব্যাপারটি ভিন্নভাবে দেখা যেতো।

(গ) মানকাডিং এক হিসেবে যৌক্তিক, কারণ নন-স্ট্রাইকার ক্রিজ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে দ্রুত রান নিতে সুবিধা হয়। সেই সুবিধা বোলার তাকে কেন দিবে? কিন্তু, টাইমড আউটের পক্ষে সেটুকু যুক্তিও নেই, কারণ দেরি করলে ব্যাটসম্যান কোনও বাড়তি সুবিধা পায় না, বা অন্য দলের কোনো ক্ষতিও হয় না।

পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি যাই থাক, ভবিষ্যতে হয়তো সাকিবের নামে এই আউটের নাম রাখা হবে। না, সাকিবিং নয়। এসব ক্ষেত্রে লাস্ট নেইম ব্যবহার করা হয়। তাই হয়তো বলা হবে হাসানিং।

00111 6 1

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

জাফর আহমেদ খান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪