বেলা দুপুর ১টা ১০। লাঞ্চ ব্রেক চলে। ক্লাস রুম প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। অধিকাংশই ফ্রেন্ডস গ্রুপ নিয়ে ক্যান্টিন এ খেতে গিয়েছে নয়তো মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর যারা আছে তাদের কেউ বাসা থেকে নিয়ে আসা টিফিন খেতে ব্যাস্ত, কেউ হাতে ফোন নিয়ে, কেউ কেউ আগের পড়া নিয়ে আলোচনা করছে আর…. কেউ কেউ বন্ধুর সাথে গল্প করছে। আমি দেখছি, ক্লাসে থাকা গুটিকতক মানুষদেরকে, তাদের কাজগুলো । আর দেখছি, এই ক্লাস রুমটার সবচেয়ে আপনজন, এর চেয়ার টেবিল আর ওই হোয়াইট বোর্ড টা। কেউ থাকুক আর না থাকুক, কতকাল ধরে তারা আছে এখানে। একটা চেয়ার আছে ভাঙ্গা। তার মনটা ভিষণ খারাপ। এই ক্লাসরুম টাতে হয়তো আর বেশিদিন সে থাকবে না। হয়তো তাকে তার বাকি বন্ধুদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। তার আর কোন গল্পের সাক্ষী হওয়া হবে না। এমন আরও কত জনকে আগে চলে যেতে হয়েছে কে জানে?! তারাও তো কত শত গল্পের সাক্ষী ছিলো। তাদের পরিবর্তে আবার নতুন কেউ এসে আরও কতো গল্প বেঁধেছে। প্রত্যেকটা চেয়ার টেবিলে আছে হাজার হাজার গল্প।
আর আমি কি করছি এই লাঞ্চ ব্রেক এ ক্লাস এ বসে? আমিও গল্প করছি, বকবক করছি, নিজের মনের সাথে। আর ভাবছি…….
মাস দেড়েক হলো ক্লাস শুরু হয়েছে । ক্লাস হয় কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের চার তলায়, চার তলা পুরোটা জুড়ে আমাদের ডিপার্টমেন্ট, পরিসংখ্যান(দ্যি মাইটি স্ট্যাটিস্টিক্স)। প্রতিদিন সকালে সিড়ির নিচে দাঁড়িয়ে এক ছটাক গালি দিয়ে নেই, কাকে দিই জানি না। আর কেন দেই সেটা তো পরিসংখ্যানের সবাই জানে। এটা যেন চার তলা না, আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেই আট তলায় উঠার, আমার কাছে এই চার যেন আটের ই সমান। তিনবার স্টপেজ দিয়ে যখন চার তলা পর্যন্ত উঠি আমার মনে হয় আমি কোন বড়সড় কাজ করে ফেলেছি। তারপর আরও একটা ঝক্কি পোহাতে হয়, হ্যা আমার কাছে এটা আরেকটা ছোট যুদ্ধই বটে। ক্লাস রুমের কাচের দরজাটা!!!! যেন খুলতেই চায় না। যেন সে আমাকে ক্লাস করতে দিবে না, আমার প্রতি তার বড্ড বেশিই ক্ষোভ। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলে তাকে পরাজিত করে ক্লাস টাতে ঢুকতে হয়। তারপর কোন একটা চেয়ার টেবিল বেছে নিয়ে তার সাথে সই পাতাই, সুখ দুঃখের গল্পে মাতি। এরপর স্যার ম্যামদের একটার পর একটা ক্লাস। কখনো কখনো খুব মন দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি, সেই চেষ্টা কখনো কখনো সফলও হয়, আবার কখনো কখনো ব্যর্থ। রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে দুই চোখের পাতায়, এ যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ , আমার সাথে আমার দুই চোখের পাতার। এই যুদ্ধ চলতেই থাকে- চলতেই থাকে অনন্তকাল ধরে। অতঃপর যুদ্ধের ইতি হয় যখন ক্লাস শেষে স্যার/ ম্যাম চলে যান। এটা একটা অভেদ্য রহস্য, এর তল খুঁজে পাওয়া আমার অসাধ্য। এই যে চোখে রাজ্যের ঘুম ছিলো এতক্ষণ, সেটা তখন যায় কোথায়? জানি না আমি, আর আমার মতো অন্যদেরও হয়তো অজানাই।
এটাতো আমার গল্প, আরও প্রায় শ’ খানেক মানুষের প্রতিদিন হাজার খানেক গল্প তৈরি হয় এই দুই দরজার মাঝে। এই গল্পরা লিখা হচ্ছে স্মৃতির পাতায়। আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে ডায়েরিটা । স্মৃতির অ্যালবামে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ছবি। কারোর ছবি গুলো হাজারো রঙে রঙিন, আর কারোর টা হয়তো একটু সাদামাটা, সাদাকালো। চলছে এইভাবেই, যাচ্ছে সময়গুলো। ঔ যে ক্লাস রুমটা! বোর্ড, স্লাইড, লেকচার, স্যার -ম্যাম, অ্যাটেনডেন্স, বুঝতে পারা না পারা পড়াগুলো, ঘুম ঘুম চোখেও তাকিয়ে থাকার চেষ্টা, বন্ধুত্ব, আড্ডা, একইসাথে একাকিত্ব, মনখারাপ, এই সবটা নিয়েই তো ওই রুমটা। আরও লক্ষ কোটি গল্প তৈরি হবে এই ক্লাস রুমটায়। মাত্র তো দেড় মাস হলো।
ওহ হ্যা, যাকে ঘিরে এতো গল্পের সমাহার, সেই রুম নাম্বার টাই তো বলা হয়নি। সিড়ি দিয়ে চার তলায় উঠে, হাতের ডান পাশটায়, দরজার উপরে তাকালে চোখে পড়ে “রুম নাম্বার ৪০৬”। হুম, এটাই প্রথম বর্ষের স্মৃতির ঝুড়ি। রুম নম্বর ৪০৬। স্মৃতিরা জমছে, জমবে( হয়তো সুখকর নয়তোবা..……)।
- মাহবুবা মিতুhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%81/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
- মাহবুবা মিতুhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%81/রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫