fbpx

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

মুরশীদা ম্যাডাম এবং আমার অনুভূতি

পৃথিবীতে এই ছোট ভ্রমণকালে খুব কমসংখ্যক মানুষই পাওয়া যায়, যাঁরা তাঁদের খুব ছোট বা অনেক বড় কাজের জন্য আজীবন আমাদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে নেন। হয়তো তাঁরা বেঁচে থাকাকালীন তাদেরকে ঐ ভালোলাগাটুকুর কথা আর বলা হয়ে উঠে না যে, আমরা তাদেরকে কতটা ভালোবাসি, কতটা সম্মানের সাথে দেখি। 

আমার এই ছোট জীবনকালে মুরশীদা ম্যাডাম তেমনি একজন মানুষ হয়ে থাকবেন আজীবন। জীবনের এই পর্যায় পর্যন্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষক পেয়েছি যাঁদের অবদানের কথা লিখে শেষ করতে পারবো না, তাঁদের মধ্যে ম্যাডাম একজন। 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করার প্রথম দিকে ম্যাডাম আমাদের কোনো ক্লাস নিতেন না। সিনিয়রদের থেকে শুনতাম ম্যাডামের কথা, আর চিন্তা করতাম ম্যাডাম হয়তো অনেক কড়া হবেন, অনেক বকাঝকা করেন হয়তো। এসব ভুল ধারণা মাথায় নিয়ে যখন চতুর্থ বর্ষে পা দিলাম তখনি রুটিনে দেখলাম “Econometrics- MK”. একদিকে রুটিন দেখে অবাক হলাম আবার ভয়ও কাজ করছিল। ভয় পেলাম- তিন বছর ধরে শুনে আসা কথায় আর অবাক হলাম এজন্য যে, ম্যাডাম এতো অসুস্থতা নিয়েও চারতলা বেয়ে কিভাবে আমাদের ক্লাস নিবেন, যেখানে উনার হাঁটতেই অনেক কষ্ট হয়! ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত উনার হাজবেন্ড উনাকে দিয়ে যেতেন, এরপর ক্লাসে আসার সময় আমজাদ ভাই বা অন্য কেউ ধরে উনাকে দিয়ে যেতো। আমি শুধু চিন্তা করতাম একটা মানুষ শিক্ষকতা পেশাকে কতটা সম্মান করলে, পেশার প্রতি কতটা আন্তরিক হলে এতটা অসুস্থতা নিয়েও চারতলা সিঁড়ি বেয়ে আমাদের পড়াতে আসেন! যেখানে উনি চাইলে সহজেই ছুটি নিয়ে নিতে পারতেন।

উনি প্রায় প্রতি ক্লাসেই বলতেন, “তোমরা আমাকে এক্সট্রা ক্লাস দিয়ে তাড়াতাড়ি কোর্সটা শেষ করে নাও, আমার কখন কি হয়ে যায় তার কোনো ঠিক নেই।” ম্যাডাম তাঁর কোর্স শেষ করে দিয়েছেন এবং অনেক ভালোভাবেই শেষ করেছেন। তাঁর কথাও কয়েকমাস পর সত্য হয়ে যায়, এবং আমরা মুরশীদা ম্যাডামের মতো একজন গুণী মানুষকে হারিয়ে ফেলি, যা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। 

কথাটা বিশ্বাস করাই রীতিমতো কষ্টকর ছিল যে, ম্যাডাম আর আমাদের মাঝে নেই, ম্যাডাম মারা যাওয়ার ঠিক  আগের দিনই আমাদের পরীক্ষার হলে কর্তব্যরত ছিলেন। 

যদিও আমি উনার সাথে খুব একটা ক্লোজ ছিলাম না, কোনো কাজ করা হয়নি, কিন্তু উনাকে যতই দেখতাম ততই অবাক হতাম। উনার সাথে যারা গ্রুপ প্রজেক্টে ছিল, তাদের থেকে শুনতাম ম্যাডাম কতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ কাজ পছন্দ করতেন, প্রতিদিন কল করে তাদের কাজের খোঁজখবর নিতেন। প্যাপাইরাসের পরিচালনা কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করা লাগতো, সেখানে ম্যাডাম উপস্থাপনার দিকটা সবসময় নিজেই গুছিয়ে দিতেন। ডিপার্টমেন্টের কোনো অনুষ্ঠান মানেই মুরশীদা ম্যাডামের উপস্থিতি থাকতেই হবে, কারণ ম্যাডামই পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনার ধাপ বলে দিতেন। ম্যাডামকে ছাড়া হয়তো এখন অনুষ্ঠানগুলো সব অসম্পূর্ণ লাগবে।

ম্যাডাম আমাদের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরীক্ষা পরিচালনায় উনার অবদান শুধু আমি না, মনে হয়, ২০১৯-২০ সেশনের (ব্যাচ- ৬৯) কেউই ভুলতে পারবে না।

ম্যাডামের চলে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন ম্যাডামের সকল দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দেন এবং উনাকে জান্নাত নসিব করেন এই দোয়া করি।

1001 উম্মে সালমা
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়