ছেঁড়া টান
টিএসসি-তে হঠাৎ দেখা,
মুচকি হেসে, কাছে এসে;
বললে আমায়, “কেমন আছো?”
“তোমায় ছাড়া ভালোই আছি,
মাঝে মাঝে খারাপ থাকি,
তোমায় ভীষণ পড়ে মনে,
তবুও বলব ভালোই আছি।”
উদাস চোখে বললে তুমি,
“বাড়ির সবাই?”
“বাড়ির সবাই দিব্যি আছে,
হেসে-খেলে কাটছে সময়,
ভালোই আছে।”
বলতে বলতেই খেই হারাই।
“আমি বড্ড ভালো আছি,
সুখে আছি।”
চমকে উঠি তোমার কথায়,
“এখন কোথায় থাকছো বলো?”
“তেজগাঁও-এর এক ছোট্ট বাসায়।”
আমি শুধু চেয়ে রইলাম,
বদলায়নি কোনো কিছুই,
বুদ্ধিদীপ্ত চোখ,
আর ঠোঁটে মাখা সেই হাসি।
সেদিন, না-ও করতে পারতে তোমার
স্বভাবসুলভ একরোখামি।
“টিএসসিতে করছ কী?”
খিলখিলিয়ে বললে আমায়,
“বউয়ের আমার বড্ড সখ।”
“হতভাগীটা কই? দেখি!”,
অবাক চোখে ফোয়ারা দেখা,
এক অপলক দৃষ্টি ফেরে,
“কে তুমি হে?”
কণ্ঠে তাহার মধু ঝরে,
এই মধুতেই ডুবে তুমি
করেছিলে সেই একরোখামি?
“তোমার পাশের মানুষটিকে শুধিয়ে দেখো,
আমি যে ওর কে হই, ও কি জানে?”
ঠোঁট ফুলিয়ে শুধোলে তোমায়,
“কে বলো তো, কে এ?”
তুমি তখনে বললে হেসে,
“একটা সময় সকালবেলা
এই মেয়েটি ঘুম ভাঙাতো,
চা নিয়ে বলতো হেসে,
ঠাণ্ডা হলে গরম কিন্তু করবে নিজে।”
বউ তোমার রাগে ফাটছে,
কান্না যে তার চোখের কোণায়,
তা দেখে বললে তুমি,
“জানো? আমি আছি বড্ড সুখে,
তোমার সাথে,
কিন্তু এ পাগলির কথা পড়লে মনে
ভীষণ রকম কষ্ট লাগে।”
এক হাট লোকের সামনে
বউ তোমার কেঁদে দিলো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে।
তুমি তাকে সামলে নিলে।
আমি তখন বললে তোমায়,
“একটুখানি বদলালে না এক বছরেও?”
বললে, “এই ছোড়দা তোমার বদলাবে না।”
“তাইতো এখন দেখছি তোমায়,
ছোড়দা আমার ছোড়দা-ই আছো।”
বউ তোমার লাফিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললে আমায়,
“ছোটমণি, আমি তোমায় চিনতে পারি নি।
ক্ষমা করে দিও ভাইটি আমার।”
আমি বললাম, “ বাড়ি চলো,
সবাই খুব খারাপ আছে
কেউ ভালো নেই, কেউ না।”
অস্ফুট স্বরে বললে তুমি,
“তেজগাঁও-এর এক ছোট্ট বাসায় থাকি আমি,
বড্ড সুখে।”
সেশন: ২০১৮ - ২০১৯