fbpx

তিস্তার বুকে শুকিয়ে যাওয়া স্বপ্ন

(১ম পর্ব)

কল্পনার চোখে কল্পনার শেষ নেই। হাজারো কল্পনার মালা গেঁথে সে ক্লান্ত তবু তার গাঁথা শেষ হয় না। আজ তার মনের আকাশে বসন্তের কোকিলেরা থেমে থেমে সুর তুলছে। সেখানে হাজারো ফুলের আনাগোনা, লক্ষ তারার মেলা, প্রজাপতির অবিরাম ওড়াওড়ি। একটি রূপালী চাঁদ যেন তার কল্পনার আকাশে উঁকি মারছে. চাঁদের আলোয় পাশের তিস্তা নদের পানি গুলো স্বচ্ছ ডাবের পানির মত ঝিকমিক করছে। সে পানিতে আলো আঁধারির মাঝে একটি ডিঙি নৌকা দেখা যায়। নৌকা থেকে ভেসে আসছে ভাটিয়ালীর সুর। মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না। কল্পনা মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনছে। এ গান তার বড় চেনা, এ সুর বড় আপন, এ গানের মানুষ তার বড় কাছের। কল্পনা লজ্জা পায়। যাহ কী ভাবছি এ এসব! এখনো বিয়েই হয়নি সে আবার কাছের হয় কিভাবে? কিন্তু তাই বলে কি স্বপ্ন দেখতে মানা আছে? কল্পনা আবার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখতে দেখতে তার চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। ততক্ষণে তার কল্পনার আকাশের চাঁদটা ডুবে গেছে।

সোলেমানের চোখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব। কাল সারারাত মাছ ধরেছে। তিস্তা ইদানিং কৃপণ হয়ে গেছে, আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। গত বছর বহু ধার দেনা করে একটা নৌকা ও জাল কিনেছে। ভরা মৌসুমে মাছ না পেলে ঋণ শোধ করা কষ্ট হয়ে যাবে তার জন্য। কালাম সোলেমানের বাল্য বন্ধু। একই নৌকায় দুজনে কাজ করে। কালাম আবার ভালো গান জানে। গভীর রাতে নিস্তব্ধ তিস্তার বুকে সে প্রায়ই গান ধরে। আমার সোনার ময়না পাখি কিংবা সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে। তার গানের সুর যেন তিস্তার দূ কোল জুড়ে এক গভীর ভাবের সৃষ্টি করে। দু পাড়ের বুনো ঘাসগুলো যেন তন্ময় হয়ে তার এ গান শোনে। পাশ দিয়ে উড়ে যায় দু একটি নিশাচর পাখি। হয়ত গানের সুরে তারাও কিছুটা আমোদিত হয়ে উঠে। সোলেমানের তখন কল্পনার কথা মনে পড়ে। তিস্তার পাড়ে সবুজ পাড়ের শাড়ি পরে কল্পনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সে যেন মিটি মিটি হাসে। যেন বলতে চায়- আমারে নিবা না মাঝি লগে। সোলেমান কিছুটা হতচকিত হয়ে যায়- না মানে নাওতো আমার ছোড, তোমারে কেমনে নেই কওতো? কল্পনা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে- আর কত ছোড নাও বাইবা মাঝি এইবার একটা বড় নাও কিনো? সোলেমান লজ্জা পায়। আমারও তো সাধ হয় একটা বড় নায়ে কইরা তিস্তার বুকে তোমারে নিয়া ঘুরি কিন্তু তিস্তা কিপ্টামি করতাছে, আগের মত মাছও দেয় না, একটা নৌকাও কিনতে পারি না। তিস্তারে দোষ দিওনা মাঝি, তিস্তারে দোষ দিওনা। আস্তে আস্তে তার কণ্ঠ মিলিয়ে যায়।

গত কয়েকদিন যাবত রহিম সর্দার অসুস্থ। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। কল্পনা রহিম সর্দারের একমাত্র মেয়ে। সে দিন রাত বাবার সেবা করে যাচ্ছে। গত কাল বিকেলে লোকমান কবিরাজ এসেছিল। সে কিছু পথ্য আর জলপট্টি বেঁধে দিয়ে গেছে। রহিম সর্দার অচেতন হয়ে পড়ে আছে কিন্তু চিন্তার শেষ নেই। ঘরে মা মরা একমাত্র মেয়ে; তার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে কিন্তু অর্থাভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না। অপর দিকে সোলেমানের সাথে তার বিয়ের কথা বার্তা চলছে কিন্তু সোলেমানের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় সেও আগাতে সাহস পাচ্ছে না। এদিকে সংসারের অবস্থা ভালো না। গত বছর অনেক ধার দেনা করে ধান লাগিয়েছিল কিন্তু ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় তার অর্ধেক দামও উসুল করতে পারেনি। এ বছর আবার আশায় বুক বেঁধে আছে। সরকার কৃষকদের ধান কিনে নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

 মা, মারে, তোর কি অনেক কষ্ট অইতাছে? 

না বাজান কোন কষ্ট অইতাছে না। মার কতা মনে পড়ে। কল্পনা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তোর মায় থাকলে তোর এত কষ্ট অইত না। কী করবি সবই কপাল। বাজান গত কাইল মায়েরে আমি স্বপ্নে দেখছি। কী কইল তোর মায়? মায়ের মুকটা বড় হুগনা, আমারে কইল তোর বাবারে একটু দেইখ্যা রাহিস, মানুষটা বড় ভালা। হেরপর কী কইলরে মা? আরও জানি কিসব কইল ঘুম ভাঙনের ভুইলা গেছি। সব ভুইলা গেলি? হ বাজান। রহিম সর্দার এক দৃষ্টিতে ছোট্ট জানালা দিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে দু ফোটা অশ্রু।

তিস্তার সেই ভরা যৌবন এখন আর নেই। এক সময়ের স্রোতস্বিনী তিস্তার বুকে এখন বালুচর। স্টীমারের বদলে গরুর গাড়ি, নৌকার বদলে ঠেলা গাড়ি! ভারত সরকার তিস্তার বুকে বাঁধ দিয়েছে। উদ্দেশ্য পানিবিদ্যুৎ নিমার্ণ ও অপেক্ষাকৃত শুকনা অঞ্চলে পানি সরিয়ে তাদের কৃষি কাজ চালু রাখা। উদ্দেশ্য মহৎ কিন্তু অন্যের ক্ষতি করে তা সাধন করলে তখন আর তা মহৎ থাকেনা। তিস্তা নদীতে ভারত বাংলাদেশ উভয়েরই স্বার্থ জড়িত। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষতি করে ভারত একতরফা ভাবে এ বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু ভারত এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একতরফাভাবে এ বাঁধ নির্মাণ করেছে যা বাংলাদেশের স্বার্থকে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তিস্তা নদীর আশেপাশের জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে পানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় সুইচ গেটগুলো খুলে দেওয়া হয় ফলে পানির উচ্চ প্রবাহে এ অঞ্চলে বন্যা ও নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয় যা একধরনের মানবিক সংকটের সৃষ্টি করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে সুইচগেট গুলো বন্ধ করে দেওয়ায় এ অঞ্চলে মরুময়তা দেখা দেয় যা সেচ কাজ, কৃষি ও মৎস্যক্ষেত্রে মারাত্মক সংকটের সৃষ্টি হয় যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে তিস্তা চুক্তি করার ব্যপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়েও ক্ষমতাসীন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নাকি তিস্তা এক ফোটা পানিও বাংলাদেশকে দিতে ইচ্ছুক নন। ফলে ঝুলে গেল তিস্তা চুক্তি, ঝুলে গেল কোটি মানুষের ভাগ্য আর আমরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছি মোটের উপর মমতা দিদির সাথে তো অন্তত বেয়াদবি সাজে না!

দেখতে দেখতে শুকনো মৌসুম চলে এসেছে। তিস্তার বুকে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে বালুচর। একটা সময় ছিল যখন তিস্তার বুকে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকত। তিস্তার বুকে চলত পাল তোলা নৌকা। কত রঙের, কত ঢঙের নৌকা তার কোন ইয়ত্ত্বা নেই। নৌকায় থাকত হরেক রকম পণ্য। তিস্তার বুকে সারাক্ষণই যেন একটা উৎসবের আমেজ লেগে থাকত। আগে প্রতিবছর ঘটা করে নৌকা বাইচ খেলার আয়োজন করা হত। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে আনন্দের সীমা ছিল না। তিস্তার বুকে ছিল মাছেদের অভয়ারণ্য। ঝাঁকি জাল দিয়ে সামান্য একটা খেও দিলেই উঠে আসত অনেক মাছ। আশেপাশে প্রতিটি অঞ্চলে তিস্তার পানিতে ফলত সোনালি ফসল। তিস্তার তীর ছিল মাছ আর ভাতের এক বাঙালী জনপদ। এখন সময় পাল্টেছে। তিস্তার বুকে আজ কাঁদার জন্যও কয়েক ফোটা জল নেই। নেই মাছ নেই ফসলের বাড়া। তিস্তা যেন ভাঙা মিনারের টুকরো হয়ে কালের ক্ষয়ে যাওয়া ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে। সোলেমান তিস্তার তীরে বসে সেই অতীত ইতিহাসেরই স্মৃতিচারণ করছিল।

গত কয়েক মাস ধরে তার কোন কাজ নেই। ডিঙি নৌকা তিস্তার বালু চড়ে আটকে গেছে। মাছ ধরার জাল ইঁদুরে ছিড়ে ফেলেছে। এখন তার চোখে শুধু হতাশার পদচিহ্ন। মাছ ধরা ছাড়া জীবনে কিছু শিখেনি ফলে অন্য কাজে গিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। আসলে মাছ ধরাটা শুধু তার পেশা না নেশাও বটে। যে কাছে সে আনন্দ খোঁজে পায় না, সে কাজে তার মন ও টানে না। কী করে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটবে সে চিন্তায় সোলেমানের চোখে ঘুম নেই। হঠাত্ কারও পদশব্দে সোলেমানের ঘোর কাটে। কল্পনা এসেছে কলসি নিয়ে। তার মুখটা শুকনো। তিস্তার পানিতো ফুরায় যাইতাছে আর কত পানি নিবা? আমি না অয় পানি নিতে আইলাম কিন্তু তিস্তার পানে চাইয়্যা থাকলেকি তিস্তায় পানি আইস্যা পড়ব? কি করুম কল্পনা, এই গাঙ রে ভুলতে পারিনা। না ভুল্লে চলব ক্যামনে? তিস্তা কি আর আমাগো দুঃখ মুইছা দিব? তিস্তার ইতো দুঃখের শেষ নাই কল্পনা। নতুন কিছু করেন মাঝি, তিস্তার পাড়ে আর কত কাল? নতুন কিছু যে ভাবতে পারিনা। ভাবতে অইব মাঝি ভাবতে অইব। কল্পনার কন্ঠ মিলিয়ে যায়।

রহিম সর্দারের দিনকাল ভালো যাচ্ছেনা। গত বছর ধান লাগিয়ে মাইর-ধোর খেয়েছিল কিন্তু এবার ধান লাগাতে পারছেনা। তিস্তার বুকে পানি নেই। সেচ কাজ বন্ধ। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এমন বিরাট একটা গাঙের পানি গেল কই? মনে মনে ভাবে রহিম সর্দার। “বাজান ঘরে চাউল নাই দুফারে কি রান্ধুম?” “কছ কি হেদিন না চাউল আনলাম?” “বাজান তোমার মাথা ঠিক আছে? হেই কবে চাউল আনছিলা তুমি হেদিন পাইলা কই?” “মারে মাথা ঠিক নাই, তিস্তায় পানি নাই, ধানের ক্ষেত ফাইট্টা চৌচির অইয়্যা গেছে, অহন আমরা কি করুমরে মা?” বাজান চিন্তা কইর না, আল্লায় ই একটা ব্যবস্থা করব।” “হরে মা হেই ভরসায়ইতো আছি। মা তোর কাপড়া কি ছিড়া গেছে?” “কই নাতো বাজান? ঐ যে আচলডার কোণা দিয়া একটু ছিড়া মনে অইতাছে?” “এইডা কিছুনা বাজান।” “তুই আমারে কি বুজাবি? আমি সব বুজিরে মা, আমি সব বুজি। মাঝে মাঝে কি মনে অয় জানস?” “কি মনে অয় বাজান? মনে অয় তিস্তার জলে গিয়া ডুইবা মরি কিন্তু কপালডা এমন খারাপ যে তিস্তার বুকে মরণের লইগ্যাও এক ফোঁটা জল নাই।” কল্পনা ফুফিয়ে কেঁদে উঠে। “বাজান আমার মাতা ছুঁইয়া কসম কর এমন কতা কইব না?” “আমি যে বড় অধম রে মা আমি যে বড় অধম।” গামছা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রহিম সর্দার মেয়ের সামনে থেকে সরে যায়।

সোলেমানের চোখে মূখে কিছুটা উত্তেজনা। দোস্ত আমাদের আর বইসা থাকনের সময় নাই কথাটা কালামের মুখ থেকেই প্রথম ভেসে আছে। শ্যাম চরণ ও সায় দেয়- হ হ এই অন্যায় এইভাবে মাইনা নেওন যায়না। ভারত আমাগো বন্ধু তাই বইলাতো যা ইচ্ছা তাই করতে পারেনা। এই তিস্তা তো অগো একলার গাঙ না এইহানেতো আমগোও অধিকার আছে। আইজ তিস্তায় পানি নাই, মাঠঘাট সব পানির অভাবে হাহাকার করতাছে। গরুর ঘাস নাই, ধানের ক্ষেতে সেচ নাই, গাঙে জাল হালানের জায়গা নাই এমনে চলতে থাকলেতো আমরা ভাতে মরুম আমরা পানির অভাবে মরুম- কথা গুলো অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বের হয়ে আসে শ্যামচরণের মুখ থেকে। এই গাঙের পানি কারো বাপ-দাদার কাইল্যা সম্পত্তি না। এই পানি হগলতের-সোলেমান দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো বলে। জানস মাঝে মাঝে কান্দন আহে। কষ্টে বুকটা ফাইটা যায়! বাপদাদার আমল থেইক্যা তিস্তারে চিনি। এইডাতো শুধু নদী না এইডা আমগো মা। মায়ের মত কইরা এই নদী আমাগো আগলাইয়া রাখছে। আমগো পুরা জীবনডাইতো এই নদীর উপর ভর কইরা। এই নদী যদি হুগায় যায় তয় আমরাও থাকুম না,  কাঁদছে শ্যামচরণ। তার কান্না দেখে সবার চোখ ই ভিজে উঠেছে। কালাম বলে উঠে মরতে যহন অইব ই, তহন আর কা পুরুষের মতন মরুম ক্যান? দরকার অয় তিস্তার বুকে লাশ অইয়্যা যাইমু, তবু আমগো অধিকার আমরা আদায় কইরা ছাড়ুম, কি কস তোরা? হ হ তোর কথাই ঠিক যাগো অধিকার আদায়ের ক্ষমতা নাই তাগো স্বাধীনতাও নাই. চল সবাই।

মাদবর সাহেবের মেজাজ মর্জি ভালো যাচ্ছেনা। সুদের ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়ছে। তিস্তায় পানি না থাকায় কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেনা তাই নগদ টাকায় তেমন পাওয়া যাচ্ছেনা। তার মাথায় চিন্তার শেষ নেই। তবে কিছু দালালি টালালি এখনো অব্যাহত আছে। গ্রামে ঝগড়া ঝাটি হলে অত্যন্ত সততার সাথে তিনি এসব মোকাবেলা করেন! বিনিময়ে তিনি কিছু পান। অবশ্য নিন্দুকেরা বলেন ঝগড়া ঝাটি সৃষ্টিতে মাদবরের অবদান ই বেশি।

তবুও তিনি এলাকার গুরুজন, গাঁয়ের মাথা। তাকে ছাড়া সব অচল। তিস্তার পাড় দিয়ে সে হাটছে। মাথার উপরে ছাতি ধরে আছে বিশ্বস্ত চামচা শামচু। কিরে শামচু অইডা কল্পনার বাপ রহিম সর্দার না? হ হুজুর হেইরমইত লাগতাছে। ডাক অরে ডাক। শামচু জোরে ডাক দেয়। কি রহিম কই যাইতাছ? মাদবরসাব একটু বাজারে যাইতাছি। তোমারে ইদানিং দেহাই যায়না। সুদ আসলেতো ম্যালা টাহা জইমা গেল।

মাদবর সাব আপনে তো সবই জানেন। তিস্তায় পানি নাই, মাঠ ঘাট ফাইট্টা চৌচির. ক্ষেতে ফসল নাই কি করুম কন? কিরে শামচু, রহিম মিয়া এইডা কি কয়! আমি কি দান বাকস খুইল্লা বইছি? হ হুজুর তো আর দান বাকস খুইল্লা বয় নাই, ভালয় ভালয় সুদের টাহাডা দিয়া দেও। আসল ই দিতে পারিনা আবার সুদের টাহা দিম ক্যামনে? তয় কল্পনার লগে যদি হুজুরের একটা ব্যবস্থা…।

 শামচু তুই কি কইলি তরে আমি খুন করুম।

 ক্যান রহিম আমি কি খুবই বুড়া চুল কলব দিলেতো এহনো পঁচিশ বছরের যুবকগো লাহান দেহা যায়।

 মাদবর সাব আপনার শরম করেনা এইসব কতা কইতে? তোমার টাহা না দিতে পারলে শরম নাই আর আমি বিয়া করতে চাইলেই সমস্যা এইডা কোন ইনসাফের কতা অইল রহিম মিয়া?

আপনের সব টাহা আমি শোধ কইরা দিমু দরকার অয় কিডনী বেচুম?

অত তেজ ভালো না রহিম অত তেজ ভালোনা। রহিম দ্রুত বেগে তাদের সামনে থেকে সরে যায়। তিস্তার চর আজ লোকে লোকারণ্য। নারী পুরুষ বৃদ্ধ যুবা সবার একটাই দাবী তিস্তার বুকে পানি চাই। এটা কোন সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় কিংবা কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসানোর আন্দোলন নয়। এটা অধিকার আদায়ের আন্দোলন, এই পৃথিবীতে টিকে থাকার আন্দোলন। সবার একটাই দাবী তিস্তায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামের এসব খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষগুলো রাজনীতি বুঝেনা তারা বুঝে দু বেলা দুমুঠোখাবার সংস্থানের নিশ্চিয়তার সুযোগ। যদি কেউ এতে রাজনীতির গন্ধ খুঁজে তবে বলতে হবে এটাই আসল রাজনীতি কারণ রাজনীতির উদ্দেশ্যতো মানুষের কল্যাণ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধা আদায় নয়। স্লোগানে স্লোগানে পুরো তিস্তার বুকে যেন নতুন জোয়ার এসেছে। কল্পনা আর সোলেমানকে ও সে মিছিলে দেখা যায়। তারা এসেছে তার স্বপ্ন যাত্রার সহযোগী তিস্তা নদীকে রাঙা  করতে। স্লোগানের ফাঁকে সোলেমান কিছুটা সহানুভূতির সাথে কল্পনাকে শুধায়-তোমার মুখটা এমন শুকনা ক্যান? তিস্তার শুকনা বুক আমার মুখে লাগছে মাঝি। আমগো এই মিছিল কি তিস্তার বাঁধ ঢিলা করব মাঝি? হেইডা জানিনা হয়ত কোনদিনই করব না, হয়ত তিস্তায় আর কোনদিন জল আইবনা। তয় আমরা মইরা গেলে জানি কেউ কইতে না পারে তিস্তার দুঃখ আমরা মুখ বুইজা সহ্য করছি। কে কি কইল না কইল হেইডাতে আমাগো কি আহে যায়?

কল্পনা এই যে আইজ আমরা স্লোগান দিতাছি এই স্লোগান বৃথা যাইবনা কল্পনা, বৃথা যাইবনা। এই স্লোগানের প্রত্যেকটি কথা তিস্তার এই বালিতে, এই শক্ত মাটিতে, এই বাতাসে গাঁইথা থাকব। যুগ যুগ ধইরা তিস্তা পাড়ের মাইনষেরা জমানো ব্যাথার গান গাইয়া যাইব। এই গান ই একদিন প্রচন্ড ঝড় তুইলা অই মরণ বাঁধ ভাইঙা দিব। সোলেমানের কন্ঠ দৃঢ়, চোখগুলো বোজা। সে যেন কোন সূদুর নীলিমায় হারিয়ে গেছে। কল্পনা সেই স্বপ্নিল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলে নিজেকে।

প্রতিষ্ঠাতা সদস্য | বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস)

জন্ম ০৩ জুলাই, ১৯৮৬ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরআত্রা গ্রামে নানার বাড়িতে। বাবা- মো: আবদুল লতিফ, মা- সাহিদা বেগম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চরজুজিরা ও সাহেবেরচর গ্রামে। লেখকের পৈত্রিক বাড়ি তিন বার পদ্মার প্রবল নদি ভাঙ্গনের শিকার  হয়েছে। বর্তমানে লেখকের বাড়ি নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের বাংলাবাজারে। তিনি ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজী সাহিত্যে পৃথকভাবে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক সংগঠন “আবৃত্তি একাডেমির” সদস্য ও বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দেশবরেণ্য গবেষক ও ছিটমহল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জনাব এ এস এম ইউনুছের “পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন ও সংগ্রাম” বইতে লেখককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের প্রকাশিত বইসমূহ:

বনফুল(ছোট গল্প)

কান্নার সমুদ্রে এক চিলতে হাসি(কাব্য গ্রন্থ)

রক্ত নদে লাল গোলাপ(ছোট গল্প)

নিস্তব্ধ  শ্রাবণ(কাব্য গ্রন্থ)

চাঁদের দেশে তপু(উপন্যাস)

বরফকুমারী(ছোট গল্প)

বিড়ালের ভবিষ্যৎ ( ছোট গল্প)

সুলতান মাহমুদ

জন্ম ০৩ জুলাই, ১৯৮৬ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরআত্রা গ্রামে নানার বাড়িতে। বাবা- মো: আবদুল লতিফ, মা- সাহিদা বেগম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চরজুজিরা ও সাহেবেরচর গ্রামে। লেখকের পৈত্রিক বাড়ি তিন বার পদ্মার প্রবল নদি ভাঙ্গনের শিকার  হয়েছে। বর্তমানে লেখকের বাড়ি নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের বাংলাবাজারে। তিনি ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজী সাহিত্যে পৃথকভাবে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক সংগঠন “আবৃত্তি একাডেমির” সদস্য ও বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দেশবরেণ্য গবেষক ও ছিটমহল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জনাব এ এস এম ইউনুছের “পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন ও সংগ্রাম” বইতে লেখককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের প্রকাশিত বইসমূহ:

বনফুল(ছোট গল্প)

কান্নার সমুদ্রে এক চিলতে হাসি(কাব্য গ্রন্থ)

রক্ত নদে লাল গোলাপ(ছোট গল্প)

নিস্তব্ধ  শ্রাবণ(কাব্য গ্রন্থ)

চাঁদের দেশে তপু(উপন্যাস)

বরফকুমারী(ছোট গল্প)

বিড়ালের ভবিষ্যৎ ( ছোট গল্প)