fbpx

অক্টোবর ১৬, ২০২৪

যুদ্ধশিল্প

আমার খাওয়ার ব্যাপারে কত বাছ বাছাই করিতে হয় তাহা বর্ণনা করিতে পৃষ্ঠাখানেক প্রবন্ধ লিখিতে হইবে—সে কাহিনী পরে বলিব। আম্মা মধ্যাহ্ন ও সান্ধ্যভোজনে আমার মর্জি মত রান্না করিলেও প্রাতরাশকালে মহাশয়া শাসক কি রসিক হইয়া বসেন তাহা অনির্ণেয়! অদ্যও বিলম্বে বিছানা ছাড়িয়া আহারোদ্দ্যেশে পাতিল নাড়িয়া দেখি করলা ভাজি আর স্বল্পমাত্রায় ডালের সহিত রসুন রান্না করিয়াছেন—আমার ঐসব মূখে রোচেনা! অগত্যা তাহাই গিলিতে হইবে।

খাওয়ার পূর্বে বাসনখানা হালকা ধৌত করিয়া জানালা দিয়ে জলটুকু বাহিরে নিক্ষেপ করিতে গিয়ে দেখিলাম দুইজন ঝগড়া করিতেছে। দেখিলাম তাঁহারা একে অপরের দিকে তীব্র বেগে ছুটিয়া যায়তেছে। কেহ তাহাদের ছুটিয়া যাওয়া আক্রমণ থামাইতে ব্যগ্র হইল না। তবে তাহারা আপনাই থামিয়া গেল! আঘাত করা ত দূরের কথা এমন আক্রমণোদ্যতভাবে অগ্রসর হইয়া স্পর্শটুকুও করিল না। আমি বিস্মিত হইলাম। তবে উভয়েই গলা উঁচু করিয়া বক্রদৃষ্টিতে একে অপরের পানে অপলক চাহনিতে খানিকক্ষণ তাকাইয়া রহিল। যেন এক্ষণি ছিঁড়িয়া খাইবে। কয়েক কদম পেছনে আসিয়া আবার বিগত ঘটনার পুনরাবৃত্তি করিল। আক্রমণাত্মকভাবে বড় বড় লম্ফ দিয়া চূড়ান্ত আঘাত করিবার কালেই তাহারা থামিয়া পড়ে—ভাস্কর্য তুল্য!

ঘটনার মাথামুণ্ডু বুঝিতেছিনা— কলহ শুরু হইবে হইবে ভাব নাকি এভাবেই কলহ চলিতেছে তাহা নিরূপণের চেষ্টা করিতেছি। ঘটনার এদিক ওদিক করিতে আমি গলাখাঁকারি করিলাম। তাঁহারা পূর্বমত দেবমূর্তির ন্যায় অচল, অনড় হইয়া রহিল। তাহারা ধীর এবং স্থির, রাগ স্তিমিত হইবার লক্ষন। কলহের ইতি হয়বে বুঝিলাম। নিমেষেই দেখি তৃতীয় আরেকপক্ষ সংঘাতে যোগ হইবার নিমিত্তে তীব্র বেগে ছুটিয়া আসিতেছে। তাহার ভঙ্গিমা সুবিধার নহে। এইবার একটা খুন-খারাপি হইয়া যাইতে পারে। চাক্ষুষে নিশ্চিত অঘটন ঘটিবে এমন ত্রাসে আমার হৃৎকার্য থামিয়া গেল। কিন্তু একি—রণক্ষেত্রে আসিয়া সে-ও স্থির হইয়া পড়িল! আমি ত হতবুদ্ধি হইলাম! মারামারির যথেষ্ট আমেজ পাইতেছি না। হৃৎকার্য সচল হইলেও আমি যথেষ্ট বিমর্ষ হইলাম। অধৈর্য্যে বাসনের জলটুকু তাহাদের উপর নিক্ষেপ করিতেই তাহারা দূরে দূরে চলিয়া গেল। তবে আমি কোনমতেই তাঁহাদের রণকৌশলের ভ্রম দূর করিতে পারিলাম না।

হাতাহাতি, মারামারি ব্যাতিতও আমাদের দেশে ঝগড়াফ্যাসাদ বাঁধিয়া থাকে। সেক্ষেত্রে পক্ষ বিপক্ষ উভয়েই তীব্র বেগে গালি পাড়িবে এই হইল রীতি। তবে আজ গালাগালির লেশমাত্রও দেখিলাম না। কিল, ঘুষি, কামড়াকামড়ি ত দূরের কথা। এমন নির্বাক সংঘাতও হয়!? তাহাদের থেকে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী কিছু শিখিলে যুদ্ধাযুদ্ধি ব্যাপারটা তাহারা শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করিতে পারিবে আশা করি।

আজকের এই কলহের মোকদ্দমার ব্যাপারটা চুকিয়া লইতে হইবে। আমিই দায়িত্ব লইয়া হাকিম মারেফত নালিশ করিতে গেলাম—“ওওও চাচী, তোমার মুরগা দেখো কেমনে মারামারি লাগছে!”

মোহাম্মদ ইকরাম
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়