এটি এমন একটি বই যা এক কথায় অসাধারণ। আমার ধারণা গল্পটি যারা যারা পরেছি তাদের জীবনে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও পরিবর্তন এসেছে, গল্পটির মাধ্যমে আসলে আমাদের নিজেদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পটি ছোট করে বলা যাক, দেখা যাক কী কী রয়েছে এই গল্পে….
গল্পের চরিত্রে রয়েছে স্নিফ ও স্কারি নামের দুটি ইঁদুর যারা মানুষের মতো কথা বলতে পারে আর আছে হেম ও হিউ নামের দুজন বামন প্রজাতির মানুষ। ইঁদুরগুলো খুব সহজ-সরলভাবে সব চিন্তা করত আর অন্যদিকে হিউ আর হেম ছিল খুব বুদ্ধিমান, তারা কোন কিছুই সহজভাবে চিন্তা করত না। তারা সবসময় তাদের অনেক বুদ্ধিমান দাবি করতো আর সহজ কিছুকেও অনেক জটিলভাবে চিন্তা করতো।
তারা চারজনই খুব চিজ পছন্দ করত । তারা মনে করত চিজই তাদের সব, একবার তা পেয়ে গেলে আর কোন চিন্তা নাই, সারাজীবন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারবে। তারা যেখানে থাকতো সেখানে অনেকগুলা চিজ স্টেশন ছিল, কোনটা পরিত্যক্ত আবার কোনটা চিজ ভরতি। একদিন স্কারি ও স্নিফ এবং হেম ও হিউ তারা চারজনই চিজ খুঁজছিল। স্কারি ও স্নিফ চিজ স্টেশন সি তে অনেকগুলা চিজ খুঁজে পায় আর সেখান থেকেই চিজ খেতে থাকে, হেম ও হিউ তাদের কিছুদিন পরই সেই চিজ স্টেশন সি এর সন্ধান পান আর সেখানেই থাকা শুরু করে, তাদের তখন এত আনন্দ হচ্ছিল,তারা কল্পনা করছিল চিজগুলো বাস্তবেই তাদের সামনে আছে কিনা, আর ভাবছিল, তাদের আর কোন চিন্তা নেই। সারাজীবন এখানে শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতে পারবে। তারপর থেকে তারা চিজ স্টেশন সি তেই থাকা শুরু করে। খুবই সুন্দরভাবে তাদের দিন চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু একদিন স্কারি ও স্নিফ চিজ স্টেশন সি তে গিয়ে দেখে সেখানে কোন চিজ নেই, কিন্তু এটা দেখে তারা একটুও অবাক না হয়ে নতুন চিজ স্টেশন খুঁজতে বেরিয়ে পরে সময়ের অপচয় না করে। হিউ ও হেমও সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে চিজ স্টেশন সি তে কোন চিজ নেই। তাদের সব আনন্দ এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। তারা ভাবতে থাকে, কে এখান থেকে তাদের চিজ গুলা নিয়ে গেল, আর চিজ স্টেশন সি তে খুঁজতে শুরু করে কেউ চিজগুলা অন্য কোথায় রেখে দিয়েছে কিনা। তারা এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে তাদের কাছে আর কোন চিজ নেই। তারা একই জায়গায় প্রতিদিন খুঁজতো চিজগুলা আবার পেয়ে যায় কিনা এই ভেবে। এভাবেই তারা দিন কাটাচ্ছিল তাদের পুরনো সেই চিজ একই জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে।
আর অন্য দিকে স্নিফ ও স্কারি যে তখন সময়ের অপচয় না করে চিজ খুঁজতে বেরিয়ে পরেছিল, একসময় অন্য একটা চিজ স্টেশন খুঁজেও পেয়ে যায় তারা, যেখানে চিজ স্টেশন সি এর থেকেও বেশি চিজ ছিল। আর চিজ গুলাও ছিল নতুন নতুন স্বাদের। তারা সেখানেই থাকা শুরু করে দেয়।
আর এদিকে হেম ও হিউ তাদের আগের বিশ্বাস নিয়েই চিজ স্টেশন সি তেই রয়ে যায়। তারা নিজেদের এই অবস্থা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। এভাবে অনেক দিন যাওয়ার পর হিউর মাথায় আসে এভাবে বসে থাকলে কিছুই হবে না, তাদের চিজ স্টেশন সি থেকে বের হয়ে নতুন চিজের সন্ধানে বের হতে হবে। সে হেমকে আবার চিজের সন্ধান করার কথাটা জানায়। কিন্তু হেম চিজ স্টেশন সি থেকে কিছুতেই যাবে না। সে এখনো বিশ্বাস করে এখানেই সে আবার তাদের হারানো চিজগুলা খুঁজে পাবে।
হিউ তাকে অনেক বুঝানোর পরও যখন হেম রাজি হয়নি তার সাথে চিজের সন্ধানে যাওয়ার জন্য তখন সে একাই বেরিয়ে পরে চিজের সন্ধানে। তার ভেতর অনেক ভয় কাজ করছিলো সে কি আদৌ চিজ খুঁজে পাবে কিনা! সে নতুন নতুন অনেক চিজ স্টেশনে খুঁজতে শুরু করে চিজ পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু প্রতিবারই সে আশাহত হয়ে, যখন সে ভিতরে ডুকে দেখে সবগুলা চিজ স্টেশনই একদম ফাঁকা। কিন্তু সে ভেঙে পরেনি। মনে মনে বলতে থাকে সামনের চিজ স্টেশন টাতে অবশ্যই চিজের সন্ধান পাবো, এভাবে হাটতে হাটতে নতুন একটা চিজ স্টেশনের সামনে যায়। মনে মনে ভাবছিল এবার হয়তো আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না, চিজ এখানেই আছে৷ কিন্তু ভেতরে ডুকার পর প্রতিবারের মতো এবার ও আশাহত হলো। সে ভাবছিল হেম কি তাহলে না এসে ঠিক করে কিনা, আবার এটাও ভাবতে থাকতে এতদূর যখন সে এসেছে তখন তার মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করেছে। সে হয়তো এখনো চিজ খুঁজে পায়নি তবে তা খুব শীঘ্রই পেতে যাচ্ছে। এই বলে মনে জোর নিয়ে আবার বেরিয়ে পরে। একসময় সে একদম নতুন একটা জায়গায় এসে পৌঁছায়, সে মনে মনে ভাবছিল সে এখানেই হয়তো চিজ খুঁজে পাবে। সে সামনের দিকে যেতে থাকে, কিছুদূর যাওয়ার পর দেখতে পায় সেখানে অসংখ্য চিজ রাখা আছে। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না আাসলেই সমানে এতগুলা চিজ আছে কিনা। তারপর যখন সেখানে স্নিফ ও স্কারিকে দেখতে পায় তখন বুঝতে পারে সামনের চিজ গুলা সত্যিই তার সামনে আছে। স্নিফ ও স্কারি, হিউকে স্বাগত জানায় এবং তারপর তারা সবাই মিলে চিজ খাওয়া শুরু করে আর নতুন নতুন চিজের স্বাদ নিতে থাকে। হেম হয়তো এখনো চিজ স্টেশন সি তেই রয়ে গেছে……
গল্পটি হয়তো খুব ছোট কিন্তু অনেক কিছু শিখার আছে এই গল্প থেকে। স্কারি ও স্নিফ যখন চিজ স্টেশন খালি দেখলো তারা সময় নষ্ট না করে নতুন চিজের সন্ধানে বেরিয়ে পরেছিল। কিন্তু তারা যদি এভাবে সহজ সরলভাবে চিন্তা না করে হতাশা নিয়ে দিন কাটাতো যা হেম ও হিউ করতেছিল তাহলে তাদের নতুন চিজ স্টেশন খুঁজে পেতে অনেক দেরি হয়ে যেত। তাদের চরিত্র থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে আমারাও যদি ওদের মতো এত সহজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি তাহলে আমাদের অনেক সময়ও বেচে যাবে আর আমরা দ্রুত সব কাজও করতে পারবো। কিন্তু আমরা যদি কোন কিছু হারায় গেছে বা পাইনি বলে হতাশা নিয়ে দিন কাটাতে শুরু করি তাহলে আমরা কিছুতেই সামনে এগিয়ে যেতে পারবো না। হিউ হয়তো নিজেকে পরিবর্তন করতে পেরেছে কিন্তু তাও অনেকটা সময় পার হওয়ার পর, যার কারনে সে অনেক পরে নতুন চিজের খোঁজ পেয়েছিল। আর যদি কেউ হেমের মতো হয় তাহলে তার খুব দ্রুতই এর থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। গল্পের হেম চরিত্রে থাকা মানুষ খুব কমই সাফল্যের কাছাকাছি যেতে পারে।
অনেকের জীবনে এই গল্পটি প্রভাব রেখেছে এটা সত্য, তবে আমার ক্ষেত্রে হয়তো অন্য ভাবে প্রভাব রেখেছে গল্পটি। প্রথম বর্ষ পার করে দ্বিতীয় বর্ষে উঠার পর থেকে শুরু করে গত দুমাস ধরে খুবই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটার পর একটা এক্সাম আর এত দ্রুত পর পর সব এক্সাম গুলা হওয়াতে নিজেকে আর সামলে উঠতে পারছিলাম না। একটা এক্সামের পর আরেকটা এক্সাম আর প্রতিটা এক্সামে ভালো করার পরিমাণ যেন ডিক্রিসিং হারে কমছিল। এমন সময়ে প্রায় সবগুলা এক্সামের পরে এই বইটা আমি পড়তাম, একটু যেন আশা জাগাতো সামনের এক্সামটায় আরেকটু ভালো করার। সারাদিনের সব ক্লান্তি যেন দূর করে দিতো বইয়ের ভেতরে থাকা দু-একটা কথার মাধ্যমেই। বইটি হয়তো ব্যক্তিভেদে সবার জীবনে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলবে কিন্তু সবাই দিনশেষে বলবে বইটি আসলেই অসাধারণ একটি বই।
নাফিসা আপু অনেক সুন্দর করে বইটি অনুবাদ করেছেন।
আপুর জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
আশা করি সবাই বইটি পড়ে দেখবেন, আর অনুধাবন করবেন বইটির কোন চরিত্রের সাথে আপনার মিল রয়েছে আর কোন পথে আপনার চলা উচিত।
- তন্ময় দাসhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%9f-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b8/বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
- তন্ময় দাসhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%9f-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b8/বৃহস্পতিবার, জুন ৮, ২০২৩