fbpx

দ্যা রিয়েলি হিরো

২৯ শে আগস্ট ১৯৭১! এদেশের মানুষ তখন মেতেছিল স্বাধীন বাংলার বুকে লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলনের দৃঢ় সংকল্পে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় প্রাণ দিয়েছে ৩০ লাখ শহীদ। যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনা করতে গঠিত হয় অনেকগুলো বাহিনী ও সংগঠন। ক্র্যাক প্লাটুন হচ্ছে যুদ্ধকালীন সময়ে ২ নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন। এই দলের একজন সদস্য ছিলেন শহীদ শাফি ইমাম রুমি যিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ১৯৭১ সালে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) এ পড়ার সুযোগ পান, কিন্তু দেশের প্রতি অঢেল ভালোবাসা তাঁকে কলম ছেড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করেছিল। রুমি মাকে বোঝাতে লাগলেন, “আম্মা, দেশের এই অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত; কিন্তু আমার বিবেক চিরকালের মত অপরাধী করে রাখবে আমাকে।  আমেরিকা থেকে হয়তো বড় কোনো ডিগ্রী নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না। তুমি কি তাই চাও, আম্মা?”

মা হার মেনে বললেন, “দিলাম তোকে দেশের জন্য কুরবানী করে। যা, তুই যুদ্ধে যা।”

১৯শে আগস্ট তিনি সফলভাবে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন আক্রমণ পরিচালনা করেন। ২৫ আগস্ট রুমি ৫ বন্ধুসহ অসীম সাহসিকতার সাথে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর এবং ৫ নম্বর রোডে দুর্ধর্ষ গেরিলা আক্রমণ সম্পন্ন করেন। ২৯ শে আগস্ট তিনি তাঁর বাড়িতে আসলে ওই দিন রাতে তাঁকে সহ তাঁর বাবা এবং ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। রুমির ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। তাঁকে পাকিস্তানিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ হন শাফি ইমাম রুমি।

ক্র্যাক প্লাটুন এর আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি তোমায় ভুলিতে পারি”- গানের সুরকার আলতাফ মাহমুদ। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসে তিনি ‘ধূমকেতু’ সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৫২ — ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক গান লেখেন এবং সুর করেন। তাঁর  ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুর্গ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে গেরিলা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র জমা রাখতেন। ৩০শে আগস্ট আলতাফ মাহমুদ ২ ট্রাংক ভর্তি অস্ত্রসহ ধরা পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এমপি হোস্টেল টর্চার সেলে। 

তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি পানি চেয়েছিলেন, পাকিস্তানি সেনারা তাঁর মুখে প্রস্রাব করেছিল। তাঁর পা ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে বেধর পেটায়। তাঁর হাঁটু, কুনই আর পাঁজরের হাঁড় ভেঙে দেয়। প্লাইয়ারস দিয়ে তুলে নেয় সবগুলো নখ, তারপর তাঁকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এত অত্যাচার সহ্য করার পরও তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম বলেননি। দেশকে দেশের মানুষকে নিজের মাতৃভূমিকে কতটা ভালবাসলে এত অত্যাচার সহ্য করে এমনকি নিজের প্রাণ বিসর্জন দে্ন তবুও পাক হানাদার বাহিনীর কাছে মাথা নত করেন না, পরাজয় শিকার করেন না। হ্যাঁ, এরাই আমাদের রিয়েল হিরো, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা।

শহীদ শফি ইমাম রুমি (ডানে) তার পরিবারের সাথে। ছবি গেরিলা ১৯৭১ ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।
শহীদ শফি ইমাম রুমি (ডানে) তার পরিবারের সাথে। ছবি গেরিলা ১৯৭১ ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।