fbpx

উপসম্পাদকীয় – মার্চ ২০২৪

এ বছরটা লিপ ইয়ার, তাই ফেব্রুয়ারির শেষ দিনটাকে ঘিরে একটু উৎসবের আমেজ ছিল। এ দিনটাকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য অনেকের বিভিন্ন আয়োজন ছিল। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের ছবি তুলে আপলোড করে রাখছিল চার বছর পর দেখার আশায়। কেউ কেউ লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করছিল সেসব ছবি ও ভিডিও। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে টিভির স্ক্রলে ভেসে এল বেইলী রোডের গ্রীন কোজি কটেজে অগ্নিকান্ডের খবর। ঢাকাবাসি স্বাক্ষী হল আরেকটি ভয়াবহ অগ্নি-দূর্ঘটনা ও প্রাণহানীর।

আগুনে মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এগারো জনের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন পড়ছে বা পড়বে।

গ্রীন কোজি কটেজ নামের ভবনটি অগ্নি-দূর্ঘটনার ঝুঁকিতে ছিল তা জানত সরকারি সংস্থা। ফায়ার সার্ভিস থেকে তিনবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও তা আমলে নেননি কটেজ কর্তৃপক্ষ। সরকারি সংস্থাও কোন ব্যবস্থা নিতে পারে নি। যারা ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তারাও নিশ্চিত জানতেন। তারাও সতর্ক হলেন না। তারা সবাই কি এই দূর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? এটাকে কি শুধু দূর্ঘটনা বলা যাবে নকি এটা এক ধরনের অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড?

একটা ভবন তৈরি থেকে শুরু করে কী কাজে ব্যবহৃত হবে তা তদারকি করে বা অনুমোদন দেয় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। ভবনটিতে কি রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন ছিল? কাচঘেরা একটা ভবনে কিভাবে অনুমোদন থাকে? রেস্তোরাঁর জন্যে তো আলাদা ’সেটাপ’, বিশেষ করে রান্নাঘর লাগে। বানিজ্যিক বা আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে কি রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়? কাউকে ’ম্যানেজ’ করে চলছিল এই ব্যবসা! ঢাকাসহ সারাদেশে এরকম অসংখ্য ভবন আছে যেখানে অনুমোদনহীনভাবে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলছে। আমরা কি সম্মিলিতভাবে সতর্ক হব নাকি আরেকটি দূর্ঘটনার জন্যে অপেক্ষা করব?

এর আগেও আমরা এ ধরনের মৃত্যু, অগ্নি-দূর্ঘটনা দেখেছি। পুরান ঢাকার নিমতলী থেকে চুড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ার থেকে বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের দূর্বলতা নতুন কিছু নয়। ঢাকা শহরের যে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে তাতে প্রতিটি ভবন নিয়মিত জরিপ করে ’ফিটনেস’ সার্টিফিকেট দিতে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো কতটা সক্ষম? তাই বলে জনগনের জান ও মালের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকবে তা মেনে নেয়া যায় না।

একটা কমন বিষয় হচ্ছে, দূর্ঘটনা ঘটার আগে ঝুঁকি থাকলেও আমরা সতর্ক হই না। ঘটে যাওয়ার পরে তোড়জোড় শুরু হয়। যেমনটা এখন চলছে। আরো কিছুদিন চলবে হয়তো। কিছু লোকের জেল-জরিমানা হবে, কিছু লোক হয়রানির মুখে পড়বে। তারপর ধিরে ধিরে সব আবারো ’ম্যানেজ’ হয়ে যাবে। তারপর আবার সবকিছু আগের মত চলতে থাকবে। কিন্তু কথা হচ্ছে এটাকে দূর্ঘটনা বা হত্যাকান্ড যাই বলি না কেন এর দ্বায় কার? এ থেকে বাঁচার উপায় কী?

আমাদের বিনোদনের জায়গার খুব অভাব। থাকলেও তা পরিকল্পিত নয়। রেস্তোরাঁয় যাওয়া এক ধরনের বিনোদন। আমাদের বাচ্চারা রেস্তোরাঁয় যেতে খুব পছন্দ করে। রোজা আসছে। রেস্তোরাঁয় ইফতার ও সেহরি খাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। হালের ট্রেন্ড। কিন্তু আমরা বুঝব কিভাবে যে কোন রেস্তোরাঁ নিরাপদ? কোন রেস্তোরাঁয় গেলে আমাদের লাশ হয়ে ফিরতে হবে না?

আমরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখি তাদের কাউন্টারের পাশে লাইসেন্স, ভ্যাট/ট্যাক্সের সার্টিফিকেট বাধিয়ে রাখে। আগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে এরকম কোন সার্টিফিকেট সেভাবে রাখা যেতে পারে। ভবনে অগ্নি দূর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলে ফায়ার সার্ভিস থেকে ভবন মালিককে যে চিঠি দেয়া হয়, তা ভবনের সামনে সেটে রাখা যেতে পারে। যদিও সেটা থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে ফুড ব্লগারদের ভিডিও দেখে রেস্তোরাঁ নির্বাচন করে থাকি। ফুড ব্লগাররা খাবারের পাশাপাশি রেস্তোরাঁর পরিবেশ নিয়েও কথা বলতে পারেন। যারা যে রেস্তোরাঁয় যান তার সর্ম্পকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিভিউ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছু লোক সচেতন হবার সুযোগ পাবে।

বিভিন্ন ভাবে কিছু লোকজনকে সচেতন করা গেলেও ঝুঁকি প্রশমনে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাসমূহকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর যদি তা না করা যায়, ঝুঁকি দিন দিন বাড়তেই থাকবে। মৃত্যুর মিছিলে নতুন নতুন নাম যুক্ত হতে থাকবে।

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০

কাজী আজাদ উজ জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০